দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক ঢামেক কর্তৃপক্ষ-চিকিৎসকদের সাংবাদিক-বিদ্বেষ

পেশাজীবনের শুরুতে চিকিৎসকদের শপথ নিতে হয়। সেই শপথ মানবিকতার, দায়িত্বের আর পেশাদারির। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীকে লাঞ্ছনার মাধ্যমে সেই শপথ ভঙ্গ হলো। পরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা দলবদ্ধভাবে সাংবাদিক প্রহার করে পেশার অমর্যাদা করলেন।


কর্তব্যরত তিন সাংবাদিককে মারধর করেছেন, একজনের ক্যামেরা আছড়ে ভেঙেছেন, তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল প্রতিবেদকদের বসার কক্ষে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনে এমন আচরণ চিকিৎসক সমাজের ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। তাঁদের দুরাচার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষসহ চিকিৎসক সমাজকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
চিকিৎসকের হাতে রোগী লাঞ্ছিত হওয়ার একটি খবর বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ক্ষুব্ধ হন। রোগীকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটলে তাঁদের লজ্জিত বা অনুতপ্তই হওয়ার কথা। যিনি বা যাঁরা তা করেছেন, বাকি চিকিৎসকদের করণীয় ছিল তাঁদের দায়িত্ব না নেওয়া। একেই সদাচার এবং সভ্য আচরণ বলে থাকে। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তাঁরা দলবেঁধে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রোগী লাঞ্ছনার সংবাদের জবাবে সাংবাদিক লাঞ্ছনা করে সারলেন। এটা লজ্জাকর এবং এই লজ্জা ঢামেক কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সবারই।
কিন্তু এই শিক্ষানবিশেরা হয়তো চিকিৎসক সমাজের মূল অংশ নন। দেশে অজস্র চিকিৎসক বিনয় ও সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। কোনো পেশার সব মানুষ একসঙ্গে উন্মত্ত হতে পারেন না। এ ঘটনাকে তাই ঢামেকের একদল শিক্ষানবিশের অপরিণামদর্শী আচরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটার পটভূমিতে চিকিৎসক সমাজের অভিভাবকদের টনক নড়া প্রয়োজন। চিরকাল চিকিৎসকেরা যে বিনয় ও সেবাপরায়ণতার গুণে সমাজে শ্রদ্ধা পেয়ে আসছেন, তা খুইয়ে ফেলা তাঁদের জন্যই ক্ষতিকর। এই মহান পেশার নৈতিক উচ্চতা ধরে রাখার পাশাপাশি সেবার মান না বাড়ালে তাঁরা মানুষের আস্থা আরও হারাবেন।
আমরা আশা করব, ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেবে। সাংবাদিকতা ও চিকিৎসা পেশার মধ্যে বৈরিতামূলক সম্পর্ক দানা বাঁধতে দেওয়া কারও জন্যই ভালো নয়।

No comments

Powered by Blogger.