মৃত্যু বড় মূর্খ by শাহেদুল ইসলাম
হুমায়ূন আহমেদ আপনি চলে গেলেন, খুব দ্রুত চলে গেলেন। কী এত তাড়া ছিল আপনার যাওয়ার? যাওয়াটা কি খুব জরুরি ছিল? চিরদিন সবাই থাকে না। তবে এভাবে চলে যাওয়াটাও উচিত নয়, স্যার। ‘চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়’ কথাটি আমার চেয়ে ভালো জানতেন আপনি। তবু যে আপনার থাকাটা দরকার ছিল।
ক্যানসার নিয়েও তো অনেকে ১০-১২ বছর বেঁচে থাকে। আমরা সত্যি অনেক দুর্ভাগা, আমাদের গুণীজনদের অসময়ে হারাই আমরা!
‘আপনি নেই’ সংবাদটি শুনে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম, সেই শোক ব্যাখ্যা করার মতো কোনো ভাষা পাইনি। এ শোক বয়ে বেড়ানো যায়, উপেক্ষা করা যায় না। আপনি আমাদের বই পড়তে শিখিয়েছেন, বই পড়ে কাঁদতে শিখিয়েছেন, হাসতে শিখিয়েছেন। জীবনকে উন্মাদনায় ভাসিয়েছেন, নাটক দেখতে শিখিয়েছেন। আপনার এই যাত্রা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? আপনি আর নেই পৃথিবীজুড়ে, এমন সংবাদ মেনে নেওয়ার সময় তো আসেনি। তবু কেন মেনে নিতে হচ্ছে আমাদের? এমনভাবে হুট করে ফাঁকি দেবেন আপনি, তা কি ভেবে রেখেছিলেন? অনেক কিছুই তো লিখেছেন, কখনো তো লিখে যাননি এভাবে ফাঁকি দেবেন সবাইকে! একবার দেখে যান, আপনার বিদায় মেনে নিতে পারছে না বলে আপনার সেই জলিল সাহেবের নাতনির মতো বিষণ্ন হয়ে আছি আমরা সবাই।
নিঃশব্দ এক জগতে চলে গেলেন আপনি। সেই চলে যাওয়ায় হিমু তার হলুদ পাঞ্জাবি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিল, হিমু ফিরবে না আর, চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে বুকে অভিমানের পাহাড় নিয়ে। মিসির আলি তার সব যুক্তি হারিয়ে ফেলেছে আর আমরা হারিয়ে ফেললাম আমাদের মিসির আলি, হিমু বা হুমায়ূন আহমেদকে।
আপনার মতো জনপ্রিয় লেখক এই দেশে আর কেউ ছিলেন বা আছেন বলে আমার জানা নেই। আপনার পরে আরও অনেক লেখকই আসবেন। তবে আপনার জনপ্রিয়তার জায়গাটি আপনারই থাকবে; কথাটি নিশ্চিত হয়ে বলা যায়। ‘মৃত্যু বড় মূর্খ তাকে জন্ম দিতে জীবনে বৃদ্ধি পায় দেনা।’ মৃত্যু জানে না আপনাকে না পেয়ে, আপনার লেখা নতুন বই না পেয়ে বইমেলা থেকে আপনার অসংখ্য ভক্ত কী গভীর শূন্যতা বুকে নিয়ে ঘরে ফিরবে। মৃত্যু আরও অনেক কিছুই জানে না, যদি জানত তবে অন্তত এটাও জানত, দেহকে দূরে রেখে কতটুকু আর দূরে থাকা যায়?
No comments