পবিত্র কোরআনের আলো-শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের অবজ্ঞা করবেন, যারা তাঁর হুকুমকে অবজ্ঞা করেছিল

৪৯. আহা-উলায়ি ল্লাযীনা আক্বছাম্তুম লা-ইয়ানা-লুহুমু ল্লাহু বিরাহ্মাহ্; উদ্খুলুল জান্নাতা লা-খাওফুন আ'লাইকুম ওয়ালা-আনতুম তাহ্যানুন। ৫০. ওয়ানা-দা আসহা-বু ন্নারি আসহা-বাল জান্নাতি আন আফিদ্বু আ'লাইনা-মিনাল মায়ি আও মিম্মা-রাযাক্বাকুমু ল্লাহ্; ক্বা-লু ইন্না ল্লাহা হার্রামাহুমা-আ'লাল কা-ফিরীন।


৫১. আল্লাযিনা ত্তাখাযু দিনাহুম লাহ্ওয়ান ওয়ালায়ি'বান ওয়াগার্রাত্হুমুল হাইয়া-তুদ্ দুনইয়া-ফালইয়াওমা নানছা-হুম্ কামা-নাছু লিক্বা-আ ইয়াওমিহিম হা-যা-ওয়ামা- কানু বি-আ-ইয়া-তিনা-ইয়াজ্হাদুন।
৫২. ওয়ালাক্বাদ জি'না-হুম বিকিতা-বিন ফাস্সালনা-হু আ'লা-ইলমিন হুদান ওয়ারাহমাতাল্ লিক্বাওমিইঁ ইউ'মিনুন। [সুরা: আল-আ'রাফ, আয়াত : ৪৯-৫২]

অনুবাদ : ৪৯. (অতঃপর জান্নাতপন্থীদের প্রতি ইশারা করে বলা হবে) এরাই কি সেসব লোক নয়, যাদের ব্যাপারে তোমরা শপথ করে বলতে, আল্লাহ তাদের নিজের রহমতের কিছু দেবেন না? (অথচ তাদের উদ্দেশে তখন বলা হয়েছে) তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমাদের কোনো দুশ্চিন্তারও কারণ নেই।
৫০. তখন জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে, আমাদের দয়া করে সামান্য কিছু পানি দাও অথবা আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন এর কিছু অংশ। তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ এ দুটো জিনিস কাফেরদের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
৫১. যারা নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া-কৌতুকে পরিণত করে রেখেছিল এবং পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস যাদের ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল, আজ আমি তাদের ভুলে যাব যেভাবে তারা ভুলে গিয়েছিল যে তাদের এই দিনের সম্মুখীন হতে হবে। তারা তো আমার আয়াতগুলো প্রকাশ্যে অস্বীকার করত।
৫২. বস্তুত আমি তাদের সামনে এমন এক কিতাব উপস্থাপন করেছি, যার ভেতরে আমি আমার জ্ঞানের ভিত্তিতে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি। যারা ইমান আনে, তাদের জন্য এটা হেদায়াত ও রহমত।

ব্যাখ্যা : ৪৯ নম্বর আয়াতে পরস্পরবিরোধী যে দুই দল মানুষের কথা বলা হয়েছে, এদের একটি হলো সমাজের নিম্নস্তরে পড়ে থাকা সৎ, আত্মনিবেদিত ও দরিদ্র মুসলমান। যেমন হজরত বেলাল, খাব্বাব, সোহাইব প্রমুখ সাহাবি। অন্যটি হলো দাম্ভিক ও কাফের কোরাইশ সর্দাররা। যেমন_আবু জেহেল, আবু লাহাব প্রমুখ। ইহকালে দৃষ্ট ভ্রান্ত ধারণার জাল ছিন্ন করে দিয়ে তখন প্রকৃত মর্যাদাবানদের মর্যাদার আবাস জান্নাতে পাঠানো হবে এবং অভিশপ্তদের পাঠানো হবে অভিশাপের আবাসস্থল জাহান্নামে। দাম্ভিক কাফেররা তখন বুঝতে পারবে সত্যটা কী? কিন্তু সময় থাকতে তারা বুঝতে পারছে না।
৫০ নম্বর আয়াতে জাহান্নামবাসীদের করুণ অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে এটাও তুলে ধরা হয়েছে, তারা কিভাবে জান্নাতবাসীদের কাছে ভিক্ষার হাত পেতেও ব্যর্থ হবে। দাম্ভিক জালেমদের সত্য উপলব্ধিতে সহায়তা করার জন্যই বিষয়গুলো এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। জাহান্নামবাসীরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে খাদ্য ও পানীয়ের জন্য কাকুতি-মিনতি করবে এসব লোকের কাছে, দুনিয়ায় যাদের তারা অবজ্ঞা করত। এটাই তাদের অহংকারের পরিণতি।
৫১ নম্বর আয়াতে কাফেররা যে নিজেদের ধর্মকেই ক্রীড়া-কৌতুকে পরিণত করে, সে বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কথিত আছে, মক্কার কোরাইশরা তাদের ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবের দিন কাবা ঘরের চারপাশে হাততালি দিয়ে নৃত্যকরত এবং নানা রকম কুরুচিপূর্ণ খেলা-তামাশায় লিপ্ত হতো। অনুরূপ বিভিন্নভাবেই তারা তাদের ধর্মকে বিকৃত করে ফেলছিল। অন্যদিকে পার্থিব জীবনের লোভ-লালসার মাধ্যমে তারা নানাভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছিল। আল্লাহ তায়ালা এখানে বলেছেন, তিনি হাশরের ময়দানে তাদের ভুলে যাবেন। আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছুই ভুলে যান না। ভুলে যাওয়া বলতে এখানে তাদের অবজ্ঞা-অবহেলা করার কথা বলা হয়েছে। কাফেররা যেমন করে দুনিয়ায় আল্লাহর হুকুমের প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা প্রদর্শন করেছিল, তিনিও সেদিন এর পরিণতি হিসেবে তাদের অবজ্ঞা করবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.