বিশ্বকাপ ক্রিকেট-ভারতের বিজয় মুকুট
বিশ্ব ক্রিকেটে ক্ষমতার হাতবদল ঘটেছে। ভারত এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তাদের অভিনন্দন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক স্মরণীয় জয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির টিম ইন্ডিয়ার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল তা ২ এপ্রিল শনিবার মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে থামল শ্রীলংকাকে ৬ উইকেটে পরাজিত করার মাধ্যমে।
১৯৮৩ সালে লর্ডসে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর ২৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে অনুষ্ঠিত ছয়টি বিশ্বকাপের মধ্যে চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া। অপর দুটি দল পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। এর মধ্যে শ্রীলংকা ভারতের মতোই তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছিল। মুম্বাইয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের আসরে অবতীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের পথে ভারত প্রথমে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় করেছে একদিনের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আসনটি একরূপ পাকাপোক্ত করে ফেলা অস্ট্রেলিয়াকে। আর সেমিফাইনালের রূপকথার আসরে জয়ী হয়েছে 'চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী' পাকিস্তানকে হারিয়ে। বলা যায়, ইতিহাসের ধারা বদলাতে গিয়ে ভারত কঠিন সব প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেছে। রানার্সআপ শ্রীলংকার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা যথার্থই বলেছেন, যোগ্যতম দলের হাতেই উঠেছে শিরোপা। ফাইনাল খেলাটি ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। মাঝে মধ্যেই এদিক-ওদিক হেলে পড়েছে ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট যুবরাজ সিংকে সঙ্গী করে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কোচিত ইনিংস জীবনে-স্বপ্নে-অস্তিত্বে ক্রিকেট একাকার হয়ে যাওয়া ভারতের ১২১ কোটি মানুষের জন্য উপহার নিয়ে এলো বিশ্বকাপ। মহেন্দ্র সিং ধোনি বিজয়ের ট্রফি হাতে নিয়ে বলেছেন, লর্ডসে ঐতিহাসিক জয়ের পর ভারতে অনেক নতুন ক্রিকেট প্রতিভার আবির্ভাব হয়েছিল। এবারেও তেমনটি ঘটবে, এমনই প্রত্যাশা। তার এ প্রত্যাশা পূরণ হলে বিশ্ব ক্রিকেট লাভবান হবে, তাতে সন্দেহ নেই। ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রিকেট জনপ্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে। এবারে ভারত ও শ্রীলংকার সঙ্গে আমরাও ছিলাম যৌথ আয়োজক। ঢাকায় ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গ্রুপ ও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত মোট আটটি খেলা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। আমাদের জাতীয় দলের পারফরম্যান্স বলা যায় মিশ্র। কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিদ্ধকার কাছে বাজেভাবে হেরে যাওয়ায়। তবে জীবনের মতোই খেলাধুলার ক্ষেত্রেও এক স্থানে মার্কটাইম করার সুযোগ নেই। ক্রিকেটের বিশ্ব আসরের মহা উৎসবের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে এখনও বড় প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় রয়ে গেছে ঘাটতি। এখন তা পূরণের জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালানোর সময়। প্রতিটি দেশই প্রস্তুতি পর্বে কোথায় ঠিকঠাক ছিল আর কোথায় ঘটেছে ভুলভ্রান্তি সেটা নিয়ে পর্র্যালোচনায় বসবে। অস্ট্রেলিয়া দল তো ইতিমধ্যেই রিকি পন্টিংকে সরিয়ে নতুন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে মাইকেল ক্লার্ককে। আমাদেরও এখন ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে সবলতার দিকগুলো আরও ধারালো করার সময়। অস্ট্রেলিয়া দলের আসন্ন সফর এ ক্ষেত্রে ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং এর ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণের নানা পর্যায়ে যুক্ত সবার এটা নিশ্চিতই জানা যে, বাংলাদেশেরও নজর কিন্তু বিশ্বসেরার মঞ্চে ওঠার। এজন্য যথাযথ প্রস্তুতির জন্য নির্ধারিত দিনগুলোর একটিও যেন হেলাফেলায় কেটে না যায়।
No comments