হুমায়ূন আহমদের লাশ নিয়ে তিন দিনের নাটক শেষ

এরপরে কাল নিউ ইয়র্কে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদে হুমায়ুনের চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা, নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এমন প্রশ্ন উঠছে। লাশের দাফন নিয়ে নিউইয়র্কে শাওনের এক রকম কথা (উনি কাউকে কিছু বলে যাননি), আর ঢাকায় নেমেই ঘোষনা, তার ওসিয়ত নুহাশ পল্লীতে দাফনের।

অতপর হুমায়ুনের মা, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন ও অগনিত ভক্তকূল, সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে শাওনের মা তহুরা আলীর ক্ষমতা আর চ্যানেল আই গ্রুপের রহস্যময় তৎপরতা (নাকি নুহাশ পল্লী দখলের পায়তারা) সব মিলিয়ে হুমায়ূনের লাশ নিয়ে দাফন করে শাওন।
বারডেম থেকে শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোতাহার হোসেন লাশ গ্রহন করে নুহাশ পল্লীর দিকে রওয়ানা দেয় মঙ্গলবার সকালে। প্রশ্ন হলো, সে কে? কেনো তাদের লাশের ওপর এ হানা?

নিউইয়র্কে মারা যাবার পরে কোনো দোয়া দরুন কোরাআন খতম কিছুই দেয়নি শাওন। বরং বিনা গোসলে পড়ে ছিলো ফিউনারেল হোমে। নিউইয়র্কে কেবল একটি জানাজাই সম্বল। তারপরে দু’দিন ফেলে রাখা হলো শাওনের ফার্স্টক্লাশ টিকেটের জন্য! ঢাকায় এনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গান আর বাদ্য- এই তো শাওনদের সৎকার! ঈদগাহের জানাজার পরে শুরু হলো লাশ নিয়ে গুলতিকিন পরিবার ও শাওনের মধ্যে বিবাদ। সারারাত চলে সেটা। ঐ সময় শাওনের চিৎকার শোনা যায় টিভিতে, “জীবিত পিতার কেউ খবর রাখেনি। মৃত লাশ নিয়ে কেন তাদের এতো টানাটানি? নূহাশ পল্লীতে যেতে ভিসা লাগে না। ভালবাসা থাকলে যখন তখন যে কেউ যেতে পারে। হুমায়ূনের অসুস্থতায় যারা কোন খবর নেন নি, বা গত ৬ বছর যাদের কেউ তার পাশে থাকেনি, আজ তাদের মায়াকান্না মানায় না। হুমায়ূনের যে ছেলে মেয়েরা তাদের পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেনি, তাকে পরিত্যাগ করেছে, তাদের আজকের এ দাবীকে আমি হাস্যকর মনে করি। অযৌক্তিক মনে করি।” এরপরে শাওনের জিদ আর তার মায়ের ক্ষমতার কাছে সবাই পরাভূত হলো।

শাওনের বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আব্দুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “শনিবার হুমায়ুন আহমেদের মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে শাওনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেখানে আমি, হুমায়ুন আহমেদের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুক্তধারা নিউইয়র্কের প্রধান বিশ্বজিৎ সাহা, তার স্ত্রী রুমা সাহা এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সাবেক চিফ রিপোর্টার ও ইটিভির নিউইয়র্ক প্রতিনিধি শাখাওয়াত হোসেন সেলিম উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনেই তাকে লাশ দাফনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শাওন বলেন, হুমায়ুন আহমেদ এ বিষয়ে কিছুই বলে যাননি। এজন্য দেশে গিয়েই সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, শাওন বললেন, হুমায়ুন আহমেদ কিছু বলে যাননি। তাই তিনি বলতে পারছেন না দাফন কোথায় হবে।” তার এই কথা রেকর্ড করতে গেলেই বাঁধা দেন শাওনের মা তহুরা আলী। তিনি বলেন, এখন কোন কথা রেকর্ড করা যাবে না। শাওনকে তিনি বারণ করেন এ বিষয়ে কোন কথা না বলতে।

এখন এ অবস্থায়,
১. হুমায়ুন আহমদের ছেলে মেয়ে ও ভাই বিষয়টার সত্যতা যাচাই করতে পারেন সেলিনা মোমেন, বিশ্বজিৎ সাহা, রুমা সাহা এবং শাখাওয়াত হোসেন সেলিম এর সাথে কথা বলে। এরপরে তারা চাইলে লাশ অন্যত্র কবরস্থ করার কথা ভাবতে পারেন।

২. নিউইয়র্কে তার চিকিৎসায় কোনো রকম অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্ত করা যেতে পারে। পারিবারিক বন্ধু জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরা অভিযোগ করেছেন, “যে মানুষ রিকভারি করছেন দেখে এলাম, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক। চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের দেহে ১০০ ভাগ সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তারপরও তার দেহে ইনফেকশন হলো কেমন করে? শাওন এর তেমন কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদের অপারেশন হওয়ার পর যে ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল, অপারেশনের ১০ দিন পর বাসায় নিয়ে তার যে যত্নের দরকার ছিল তা হয়নি। এমনও শুনেছি তার ব্যান্ডেজ নাকি বাসাতেও ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা হতো আর লাগানো হতো। এটা শুনে আমি অবাক হয়েছি। এটা কেমন কথা? এত বড় অপারেশনের রোগীকে নিয়ে এসব কি করা হয়েছে!” এটার তদন্ত করা প্রয়োজন।

৩. হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে শবেবরাতের রাত্রে হুমায়ুনের বাসায় মদের আসর বসেছিলো কিনা? সেখান থেকে ইনফেকশন হলো কিনা, তদন্ত দরকার।

৪. চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার পরে ২৪ ঘন্টা বাসায় রেখে কি করা হয়েছিলো? কেনো জরুরীভিত্তিতে এম্বুলেন্স ডাকা হলো না? বেলভিউতে কোনো নেয়া হলো?

৫. লাশ নিয়ে টানাটানি আর তহুরা আলী ও তার স্বামীর ব্যাপক অংশগ্রহন কি সম্পত্তির কব্জা করা সংক্রান্ত কি না, তা খোলাসা হওয়া দরকার।

৬. প্রয়োজনে মামলার কথাও ভাবা যেতে পারে।

অনেকে হাসবেন, এসব কি লিখছি। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে যে সব কান্ড হয়েছে, য়ে সকল কথা ভাসছে আসছে, তাতে হয়ত এসব বিবেচনার দাবী রাখে।


http://www.facebook.com/photo.php?fbid=445890965442415&set=at.103506609680854.7965.100000645456398.100000607536852.663089156.100002362912674.610947384.1369726375.100000680105732&type=1&relevant_count=1&ref=nf

No comments

Powered by Blogger.