যে খবর অপ্রত্যাশিত by মেহেরুন নেছা রুমা

সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে আমরা প্রতিদিন কোথায় কী হচ্ছে তা অনায়াসেই ঘরে বসে পেয়ে থাকি। কোনো খবর আমাদের আনন্দ দেয়, আবার কোনো কোনো খবর জেনে আমাদের হৃদয় বিচলিত হয়, ভারাক্রান্ত হয়। একটি সংবাদপত্রে প্রতিদিন যে পরিমাণ খুন-খারাবি, নারী নির্যাতন, সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি, কাটাকাটির খবর প্রকাশিত হয়


সেসব দেখে মনে হয় না আমাদের দেশে আইন-কানুন, বিচার ব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, আস্থা এখন আর বর্তমান আছে। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও স্ত্রী লাঞ্ছিত হচ্ছেন স্বামীর দ্বারা। প্রতিদিনই আমরা এমন কিছু খবর দেখতে পাই_ স্ত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। রংপুরের গৃহবধূ আঙ্গুরী বেগম এখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তার শরীরের দশভাগ পুড়ে গেছে। এখন তার গায়ে পচন ধরেছে। তাকে হাসপাতালের বারান্দায় মশারি টানিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু যৌতুকের পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে এই পশুসুলভ আচরণ করল তার স্বামী নামধারী পাষণ্ড। এমন ঘটনা শুধু এটিই নয়, প্রতিদিনের সংবাদপত্রে চোখ রাখলেই এ ধরনের খবর দেখে আমরা আঁতকে উঠি। যৌতুকের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি আমাদের সমাজ থেকে কবে যে যাবে!
আমরা কি সেই সুদিনের আলো দেখতে পাব কোনোদিন? এমনই আরেকটি খবর একই দিনের পত্রিকায়_ নওগাঁয় খাদিজা বিবি নামের এক গৃহবধূকে জবাই করে হত্যা করেছে স্বামী। মনের মধ্যে কতটা নৃশংসতা থাকলে নিজ স্ত্রীর গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করা যায়! গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, এসিড নিক্ষেপ, শারীরিক-মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত করা আর আত্মহত্যা তো রয়েছেই। আত্মহত্যা কেউ শখ করে করে না, কেউ না কেউ প্ররোচিত করে বিধায়ই একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রায়ই এক ধরনের খবর আমাদের চোখে পড়ে_ দাম্পত্য কলহের জের ধরে কোনো মা এক বা একাধিক সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যায় শামিল হয়। এমনই একটি ঘটনা_ মুন্সীগঞ্জের ইসমত আরা সাত বছরের ছেলে ফাহিমকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এসব খবর কখনোই আমাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই। সিদ্ধিরগঞ্জে সাহানা নামে এক গৃহকর্মীকে দশ বছর ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে গৃহকর্তা এবং তার সন্তানরা। কক্সবাজারের একটি দশ বছরের মেয়েকে সাত হাজার টাকায় কিনে তার ওপর জোর করে পাশবিক নির্যাতন চালানোর পর দেহব্যবসায় বাধ্য করে এক দম্পতি। এ ছাড়া মানুষ গড়ার কারিগর বলে খ্যাত শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছে ছাত্রী। এমনই এক শিক্ষক দেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা স্কুলের পরিমল জয়ধর। এ ছাড়াও শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। যদিও আইনগতভাবে শিক্ষকদের মেরে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি এখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ধরনের সংবাদ ছাড়াও আমরা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেখতে পাই। একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে এ ধরনের ঘটনা। তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে কাউকে দেখা যায় না। মনে হচ্ছে এটাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। এভাবেই পথের মাঝে শেষ হয়ে যাবে কোনো তাজা প্রাণ! কারও কিছু করার নেই। এমনকি ঝড়-তুফান ছাড়াই নদীপথে এক যানবাহন আরেক যানবাহনকে ধাক্কা মেরে ডুবিয়ে দিচ্ছে অথৈ পানিতে। আর ভেসে উঠছে সারি সারি লাশ। এ ছাড়াও খবরের পাতায় আসে না_ এমন কত কত খবর আমাদের অজানা রয়ে যায়। আমরা যে সুখী, সমৃদ্ধিশালী, শান্তিপূর্ণ দেশের স্বপ্ন দেখি, সেই দেশ কি আমরা কোনোদিনই দেখতে পাব না? কথায় নয়, আমরা কাজে-কর্মে সে রকম একটি দেশে বসবাস করতে চাই।
হ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
 

No comments

Powered by Blogger.