কোরআনের আলো-অনুতপ্তদের দেওয়া সাদকা বা জাকাত গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান
১০৩. খুয্ মিন আমওয়া-লিহিম সাদাক্বাতান তুত্বাহ্হিরুহুম ওয়াতুযাক্কীহিম বিহা- ওয়াসালি্ল আ'লাইহিম; ইন্না সালা-তাকা ছাকানু ল্লাহুম; ওয়াল্লা-হু ছামীউ'ন আ'লীম। ১০৪. আলাম ইয়া'লামূ আন্না ল্লা-হা হুওয়া ইয়াক্ববালু ত্তাওবাতা আ'ন ই'বা-দিহী ওয়াইয়া'খুযু চ্ছাদাক্বা-তি ওয়া আন্না ল্লা-হা হুওয়া ত্তাওয়্যা-বুর্ রাহীম।
১০৫. ওয়াক্বুলি'মালূ ফাছাইয়ারা ল্লা-হু আ'মালাকুম ওয়ারাছূলুহূ ওয়ালমু'মিনূন; ওয়াছাতুরাদ্দূনা ইলা- আ'লিমিল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি ফাইউনাবি্বউকুম বিমা- কুনতুম তা'মালূন। ১০৬. ওয়াআ-খারূনা মুরজাওনা লিআমরি ল্লা-হি ইম্মা- ইউআ'য্যিবুহুম ওয়াইম্মা- ইয়াতূবু আ'লাইহিম; ওয়াল্লা-হু আ'লীমুন হাকীম।
[সুরা : সুরা আত্ তাওবা, আয়াত : ১০৩-১০৬]
অনুবাদ : ১০৩. (হে নবী) আপনি তাদের (অর্থাৎ আগের আয়াতে বর্ণিত লোকদের) সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন। এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং তাদের জন্য পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠার কারণ হবেন। আর তাদের জন্য দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক হবে। আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং জানেন।
১০৪. তারা কি জানে না যে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং জাকাত গ্রহণ করেন। আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।
১০৫. (হে নবী) আপনি এদের বলে দিন, তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন করো। আল্লাহ তোমাদের ক্রিয়াকলাপের ধরন দেখবেন, তাঁর রাসুল ও মুমিনরাও তা দেখবেন। এরপর তোমাদের এমন এক সত্তার কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, যিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সব কিছু জানেন। এরপর তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন তোমরা পৃথিবীতে কে কি করেছিলে।
১০৬. এ ছাড়া আরো কিছু লোক রয়েছে, যাদের সম্পর্কে ফায়সালা মুলতবি রয়েছে আল্লাহর হুকুম না আসা পর্যন্ত। আল্লাহ তাদেরকে হয়তো শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করে দেবেন।
ব্যাখ্যা : ১০৩ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম_তাবুক যুদ্ধে গমন থেকে বিরত থাকা ১০ সাহাবির সাতজন যখন চরম অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে নিজেদের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলেছিলেন, তখন আল্লাহ তাঁদের তওবা কবুল করলেন এবং তাঁদের মুক্ত করে দেওয়া হলো। তখন তাঁরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজেদের প্রায় সব সম্পদ সাদকা হিসেবে দান করে দেওয়ার জন্য নবী (সা.)-এর কাছে নিয়ে হাজির হলেন। তিনি প্রথমে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। বললেন, আমাকে তোমাদের থেকে সম্পদ গ্রহণের হুকুম দেওয়া হয়নি। আল্লাহর হুকুম না পেলে আমি তা গ্রহণ করতে পারি না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত নাজিল হয়েছে। এই আয়াতে তাদের কাছ থেকে সাদকা গ্রহণের হুকুম দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতে সাদকার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। এক. সাদকা মানুষের জন্য মন্দ চরিত্র ও পাপাচার থেকে পবিত্রতা অর্জনের সহায়ক হয়। দুই. সাদকার দ্বারা মানুষের সৎকাজে বরকত ও উন্নতি লাভ হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এ আয়াত যদিও একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে, তবু এর ভাষা সাধারণ। এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কিরামের ইজমা রয়েছে যে রাষ্ট্রের মাধ্যমে জাকাত আদায় ও বণ্টন করা যায়। এ কারণেই হজরত সিদ্দিক আকবর (রা.) জাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
১০৫ নম্বর আয়াতে সতর্ক করা হয়েছে যে তওবার পরও কারো পক্ষেই নিশ্চিত হয়ে বসে থাকা ঠিক নয়। বরং আগামীতে নিজের কার্যকলাপ যাতে সংশোধন হয়ে যায়, সে ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া উচিত। ১০৬ নম্বর আয়াতে ফয়সালার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সেই দশ সাহাবির অবশিষ্ট তিনজনের ব্যাপারে, যাদের সাতজনের ব্যাপারে ফয়সালা আগের আয়াতগুলোতে দেওয়া হয়েছে। এই তিনজন অনুতপ্ত তো হয়েছিলেন বটেই, তবে আগে বর্ণিত সাতজনের মতো ব্যাকুল হননি। সুতরাং তাঁরা যখন নবী (সা.)-এর খেদমতে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য হাজির হলেন, তখন তিনি তাঁদের ব্যাপারে ফয়সালা মুলতবি রাখলেন যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো হুকুম আসে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, তাদের শাস্তি হিসেবে মুসলিম সমাজ থেকে বয়কট করা হয়েছিল। ৫০ দিনের শাস্তির পর তাদের তওবা কবুল হয়েছিল। এই সুরার ১১৮ নম্বর আয়াতে এর বর্ণনা রয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments