শিক্ষার মান ও পাসের হার by আবদুদ দাইন
বেশ ক'বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ। এর মধ্যে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা অনেক বেশি। এই ফল দেখে মন্ত্রীসহ অনেক গুণীজন সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। এতে বাহ্যিকভাবে মনে হচ্ছে, আমাদের সন্তানরা বেশ মেধাসম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পাসের সংখ্যা বেড়েছে, শিক্ষার গুণগত মান বাড়েনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে সংখ্যা বাড়ানোটা আমাদের সন্তান তথা দেশ ও জাতির জন্য কতখানি মঙ্গলজনক? ছাত্রছাত্রীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দুটিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫-এর পরিমাণ বাড়িয়ে আমরা আসলে একটু বাড়াবাড়ি করছি না তো?
যদি একটু কষ্ট করে পেছনে তাকাই যখন গ্রেডিং-সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল না ওই সময় যারা গড়ে ৬০ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করত তাদের মেধা কি কম ছিল? ওই পরিমাণ নম্বর পেতে তাদের কতখানি পরিশ্রম করতে হতো তা আমাদের অনেকেরই জানার কথা। তখন একজন পরীক্ষক কোনো পরীক্ষার্থীকে ৬০ নম্বর দেওয়ার আগে কয়েকবার চিন্তা করতেন; না জানি প্রধান পরীক্ষক ডেকে বসেন। এখন ৭০-৮০ নম্বর অনায়াসে দেওয়া যায়। সঠিক নম্বর দিলেই অনেক সময় প্রধান পরীক্ষকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়, নম্বর কম দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগে। এভাবে আর কিছু দিন বোর্ড টু বোর্ড প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে আমরা বেশি পরিমাণ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পাব, তবে মেধাবী শিক্ষার্থী পাব কি-না সন্দেহ, যা আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, পাসের হার নয়। যার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাই হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মর্যাদাও বাড়বে। প্রকৃত অর্থে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কারও কাছে নম্বর ভিক্ষা বা করুণা চায় না। তারা চায় উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন। তারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে বড় হতে চায়। কারও কৃপায় নয়।
বাস্তবে লক্ষ্য করা গেছে, ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া বহু শিক্ষার্থী তার পছন্দমতো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন। সরকারের সদিচ্ছায় আমাদের পাবলিক পরীক্ষা নকলমুক্ত হয়েছে এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। উত্তরপত্রে বেশি নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ও প্রতিযোগিতার কারণে আমাদের একটা প্রশংসনীয় অর্জন ম্লান হতে চলেছে।
কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেক গুণীজনের ধারণা, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরাও সৃজনশীল হয়েছে। এ কারণে পাসের হারও বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে মেধার বিকাশ তেমন হয়নি আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা শতকরা ৯৯ জন সৃজনশীল হয়নি। তবে সৃজনশীল হয়েছে ওদের নোট-গাইডবই আর কোচিং-প্রাইভেট সেন্টার। তাই সরকারের বিনামূল্যে বিতরণ করা বই পড়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হয়ে ভালো ফল করছে এ কথা মনে করে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় এখনও হয়নি। প্রকৃত মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থী গড়তে চাইলে সর্বাগ্রে বাজারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাতের কাছে অনায়াসে পাওয়া নানা কিছিমের আকর্ষণীয় নোট-গাইডবই বন্ধ করতে হবে। কোচিং-প্রাইভেট সেন্টার বন্ধ করতে হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাত খুলে নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। যখন থেকে উপরিউক্ত কাজগুলোর বাস্তবায়ন হবে তারপরের বছরই প্রকৃত মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থী বের হয়ে আসবে। এতে পাসের হার কম হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা সংশিল্গষ্ট কর্তাব্যক্তিদের লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও দেশ-জাতির প্রয়োজনেই এটা করতে হবে।
কলেজ শিক্ষক, সাঁথিয়া, পাবনা
dainsanthia@gmail.com
যদি একটু কষ্ট করে পেছনে তাকাই যখন গ্রেডিং-সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল না ওই সময় যারা গড়ে ৬০ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করত তাদের মেধা কি কম ছিল? ওই পরিমাণ নম্বর পেতে তাদের কতখানি পরিশ্রম করতে হতো তা আমাদের অনেকেরই জানার কথা। তখন একজন পরীক্ষক কোনো পরীক্ষার্থীকে ৬০ নম্বর দেওয়ার আগে কয়েকবার চিন্তা করতেন; না জানি প্রধান পরীক্ষক ডেকে বসেন। এখন ৭০-৮০ নম্বর অনায়াসে দেওয়া যায়। সঠিক নম্বর দিলেই অনেক সময় প্রধান পরীক্ষকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়, নম্বর কম দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগে। এভাবে আর কিছু দিন বোর্ড টু বোর্ড প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে আমরা বেশি পরিমাণ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী পাব, তবে মেধাবী শিক্ষার্থী পাব কি-না সন্দেহ, যা আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, পাসের হার নয়। যার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাই হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মর্যাদাও বাড়বে। প্রকৃত অর্থে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কারও কাছে নম্বর ভিক্ষা বা করুণা চায় না। তারা চায় উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন। তারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে বড় হতে চায়। কারও কৃপায় নয়।
বাস্তবে লক্ষ্য করা গেছে, ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া বহু শিক্ষার্থী তার পছন্দমতো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন। সরকারের সদিচ্ছায় আমাদের পাবলিক পরীক্ষা নকলমুক্ত হয়েছে এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল অর্জন। উত্তরপত্রে বেশি নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ও প্রতিযোগিতার কারণে আমাদের একটা প্রশংসনীয় অর্জন ম্লান হতে চলেছে।
কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেক গুণীজনের ধারণা, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণেই আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরাও সৃজনশীল হয়েছে। এ কারণে পাসের হারও বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে মেধার বিকাশ তেমন হয়নি আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা শতকরা ৯৯ জন সৃজনশীল হয়নি। তবে সৃজনশীল হয়েছে ওদের নোট-গাইডবই আর কোচিং-প্রাইভেট সেন্টার। তাই সরকারের বিনামূল্যে বিতরণ করা বই পড়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হয়ে ভালো ফল করছে এ কথা মনে করে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় এখনও হয়নি। প্রকৃত মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থী গড়তে চাইলে সর্বাগ্রে বাজারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাতের কাছে অনায়াসে পাওয়া নানা কিছিমের আকর্ষণীয় নোট-গাইডবই বন্ধ করতে হবে। কোচিং-প্রাইভেট সেন্টার বন্ধ করতে হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাত খুলে নম্বর দেওয়ার প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। যখন থেকে উপরিউক্ত কাজগুলোর বাস্তবায়ন হবে তারপরের বছরই প্রকৃত মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থী বের হয়ে আসবে। এতে পাসের হার কম হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা সংশিল্গষ্ট কর্তাব্যক্তিদের লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও দেশ-জাতির প্রয়োজনেই এটা করতে হবে।
কলেজ শিক্ষক, সাঁথিয়া, পাবনা
dainsanthia@gmail.com
No comments