ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সংশয়-মামলা হলে আইনি লড়াই চালাবে ইসি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হতে পারে। ফলে ২৪ মের ভোট নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। আইন অনুযায়ী, ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস না করায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী।


তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আইনি নোটিশের ভিত্তিতে নির্বাচন-প্রক্রিয়া বন্ধ করা হবে না। সাধারণত কমিশন এ ধরনের নোটিশের জবাব দেয় না। তবে মামলা হলে আইনি লড়াই চালাবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনি নোটিশের কথা পত্রিকায় পড়েছি। যথাসময়ে নোটিশ এলে কমিশন সচিবালয় থেকে নিশ্চয়ই জানানো হতো।’
নোটিশের ভিত্তিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন-প্রক্রিয়া বন্ধ করা হবে কি না, জানতে চাইলে আবদুল মোবারক বলেন, একজন আইনজীবীর ইচ্ছা হয়েছে, তিনি নোটিশ দিয়েছেন। সে জন্য নির্বাচন-প্রক্রিয়া বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রয়োজন হলে কমিশন আইনি লড়াই চালাবে। তা ছাড়া দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় রোববারের আগে কমিশনের বৈঠক করার সুযোগ নেই। সুতরাং নোটিশ যদি এসেও থাকে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাব দেওয়া সম্ভব নয়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সম্পাদক আসাদুজ্জামান সিদ্দিকীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বৃহস্পতিবার ফ্যাক্স ও ডাকযোগে ইসিকে আইনি নোটিশ পাঠান। এতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের কাজ বন্ধ করে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করলেও দলের অনেকেই এই মুহূর্তে নির্বাচন না করার পক্ষে মত দিচ্ছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনেকেই নির্বাচন না করার পক্ষে। তাই আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচন হবেই—এমন কথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জোর গলায় বলছেন না।
তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা মহানগরের সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস এ মুহূর্তে নির্বাচন না করার পক্ষে মত দেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রথম আলোকে জানান, তাপসের যুক্তি ছিল, বর্তমানে মহানগরে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা আছে। এ অবস্থায় নির্বাচন করলে জনমত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকবে না।
সরকারি দলের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তুরস্ক থেকে ফিরে দলের সংসদীয় বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার আন্তরিক নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় বলেন, তফসিল ঘোষণা হলেও শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন আটকে দেবে বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে, তা বুঝতে পেরে সরকার নির্বাচন বানচালের কলাকৌশল করছে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ নির্বাচন বানচালের চেষ্টার কথা অস্বীকার করেন। গতকাল ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা কমিটির এক সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বরং ডিসিসি নির্বাচনের পক্ষে।
আইন কী বলে: সিটি করপোরেশন আইনের ৩ ধারায় করপোরেশন গঠন এবং ২৭ ও ২৮ ধারায় সীমানা নির্ধারণের পদ্ধতির কথা বলা আছে। মনজিল মোরসেদের নোটিশে বলা হয়েছে, সরকার নতুন করপোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে ৩ ধারা এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সীমানা নির্ধারণ করেনি।
নোটিশে বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইসি সচরাচর এ ধরনের নোটিশের জবাব দেয় না। কোনো মামলা হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করে গত ১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশিত হয়। এতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডসংখ্যা ৩৬ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডসংখ্যা ৫৬। স্থানীয় সরকার বিভাগ ৪ ডিসেম্বর দুই সিটি করপোরেশনের জন্য নতুন ওয়ার্ড নম্বর নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে জনসংখ্যার অনুপাতে ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার কথা থাকলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা করেনি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন থেকেও মন্ত্রণালয়কে কোনো তাগিদ দেওয়া হয়নি।
তবে এর আগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ওয়ার্ডের সীমানাবিন্যাস করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে একাধিকবার তাগিদ দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.