উৎসব-আরেক নতুন সূর্য by শারমিন নাহার
আজ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ কী হর্ষ কী হর্ষ আয় তোরা আয় ছুটে সব আজ আমাদের প্রাণের উৎসব। —আবুল হোসেন
উৎসবে শামিল হতে ছুটে তো আসতেই হবে। আজ যে পয়লা বৈশাখ! নতুন বছরের শুরুর দিন। আবার আরেক নতুন সূর্য আলো ছড়াল চারপাশে, আরেক নতুনের আবাহন। সময়ের পরিক্রমায় পেছনে ফেলে এসেছি ১৪১৮ সাল।
উৎসবে শামিল হতে ছুটে তো আসতেই হবে। আজ যে পয়লা বৈশাখ! নতুন বছরের শুরুর দিন। আবার আরেক নতুন সূর্য আলো ছড়াল চারপাশে, আরেক নতুনের আবাহন। সময়ের পরিক্রমায় পেছনে ফেলে এসেছি ১৪১৮ সাল।
আজ নতুনকে বরণ করে নেওয়ার দিন। ১৪১৯ বঙ্গাব্দের আজ প্রথম দিন। শুভ নববর্ষ। আজ নগরের রাজপথে নামবে নানা বয়স আর নানা পেশার মানুষ। বাংলার সব প্রান্তেই ছড়িয়ে যাবে উৎসবের আনন্দ।
এবার বৈশাখ উদ্যাপনের আমেজ নগরে বোধ হয় একটু আগেভাগেই লেগেছে। নগরের বিপণিবিতানগুলোর মূল ফটক কুলা, চালুনি, বেলুন আর রঙিন শোলা দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর বিপণিবিতানের ভেতরটা সেজেছে বাহারি পোশাকে।
বৃষ্টির মাঝেও বৈশাখের আয়োজনের ঘাটতি হয়নি। চারুকলায় শিক্ষার্থীরা বৈশাখের আগেই খোলা আকাশের নিচে বসে প্রস্তুতি নিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা হয়েছে পাখি, ঘোড়া, হাতি, মুখোশ আরও কত কি! দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এত চেষ্টা। আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারুকলার ১১তম ব্যাচের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী মানবেন্দ্র ঘোষ বললেন, বর্ণিল নানা প্রাণীর সঙ্গে আছে অশুভ আগ্রাসী অপশক্তির মতো তৈরি নানা আকার। আর এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আছে প্রতিবাদী নানা ফর্ম। তবে দেশের সমসাময়িক নানা সমস্যা কিংবা অর্জন প্রতীকীভাবে উঠে আসবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
পয়লা বৈশাখের কদিন আগেই ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলপড়ুয়া অনি তার মায়ের সঙ্গে চারুকলা ঘুরে গেছে। একটা লক্ষ্মীসরাও কিনেছে। মায়ের কাছে গল্প শুনে শুনে তখনই সে মাকে বলেছে, এবারই নতুন পোশাক পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। অনিকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন সে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে? ছোট্ট অনি বলেছে, ‘এটা এক ধরনের প্রার্থনা। মা বলেছে, এই শোভাযাত্রায় অংশ নিলে ভালো হবে।’
অনেকে আবার মনে করে, বছরের শুরুর দিন ভালো গেলে বছরের অন্য দিনও ভালোভাবে কাটে।
চৈত্রের ২৮ তারিখে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের ধারে পাঁচ বছরের নূরুন নাহার কাঁদছে লাল চুড়ির জন্য। মা কান্না থামাতে পারছেন না। ছোট্ট শিশুর কান্না দেখেই কিনে দেওয়া হলো এক গোছা কাচের চুড়ি। পরক্ষণেই ফোকলা দাঁতে হাসি হাসল সে।
নতুন পোশাক না পেলেও অন্যের কিনে দেওয়া লাল চুড়ি পরে হয়তো ছোট্ট নূরুন নাহার মায়ের হাত ধরেই যাবে চারুকলা অথবা রমনার বটমূলে।
ধনী কিংবা গরিব—যেমন বেশই হোক না, সবাই এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। এই শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণে চেতনায় থাকবে মঙ্গলময় কামনা আর মঙ্গলময় বারতা, যা পৌঁছে যাবে সবার দ্বারে দ্বারে।
বৈশাখের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততার কমতি নেই পুরান ঢাকার ঘুড়ি কারিগর হাশেম মিয়ার বাড়িতে। ঘুড়ির কারিগর হাশেম মিয়া বলেন, পৌষের শেষ দিন থেকে পয়লা ফাল্গুন কিংবা পয়লা বৈশাখের মতো দেশীয় দিনগুলো ঘিরে ব্যস্ততা বেশি থাকে। ফরমায়েশ আসে কচ্ছপ, ঈগল, প্রজাপতির মতো নানা আকারের বাহারি ঘুড়ির। রঙিন কাগজ, বাঁশ আর আঠার সাহায্যে বানিয়েছেন বাহারি সব ঘুড়ি। অনেকেই এই দিনে ছাদে উঠে উৎসবের আনন্দ প্রকাশ করেন ঘুড়ি উড়িয়ে।
বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত ছায়ানট। ছায়ানটের অনিন্দ্য রহমান বললেন, প্রতিবছরের মতো সকালেই শুরু হবে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সকাল, প্রকৃতি, দেশ আর মাটিকে নিয়ে গান কিংবা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে এবারও আহ্বান করা হবে নতুন বছরকে। পঞ্চকবির গান কিংবা লোকগান তো বাংলার প্রাণ।
পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের দিন। ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার দিন। তবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের শুরুটা নিয়ে আছে নানা মতভেদ। কেউ বলেন সম্রাট আকবর, আবার কেউ বলেন শশাঙ্ক, কেউবা আবার সুলতান হোসেনই বাংলা সনের প্রবর্তক। শুরুটা কীভাবে হলো, সেই তত্ত্বকথার ঝুলি খোলার ভার থাকল না হয় গবেষকের জন্য। আমরা বলি, এই দিনটা কেবল বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিন।
বাঙালি এই দিনে পথে নামবে। বাঙালি সব বাধা অতিক্রম করেছে বিভিন্ন সময়ে। বাধা পেলে সে বাধা অতিক্রম করার শক্তি আর সাহস দেয় পয়লা বৈশাখ।
শারমিন নাহার
এবার বৈশাখ উদ্যাপনের আমেজ নগরে বোধ হয় একটু আগেভাগেই লেগেছে। নগরের বিপণিবিতানগুলোর মূল ফটক কুলা, চালুনি, বেলুন আর রঙিন শোলা দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর বিপণিবিতানের ভেতরটা সেজেছে বাহারি পোশাকে।
বৃষ্টির মাঝেও বৈশাখের আয়োজনের ঘাটতি হয়নি। চারুকলায় শিক্ষার্থীরা বৈশাখের আগেই খোলা আকাশের নিচে বসে প্রস্তুতি নিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা হয়েছে পাখি, ঘোড়া, হাতি, মুখোশ আরও কত কি! দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এত চেষ্টা। আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারুকলার ১১তম ব্যাচের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী মানবেন্দ্র ঘোষ বললেন, বর্ণিল নানা প্রাণীর সঙ্গে আছে অশুভ আগ্রাসী অপশক্তির মতো তৈরি নানা আকার। আর এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আছে প্রতিবাদী নানা ফর্ম। তবে দেশের সমসাময়িক নানা সমস্যা কিংবা অর্জন প্রতীকীভাবে উঠে আসবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
পয়লা বৈশাখের কদিন আগেই ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলপড়ুয়া অনি তার মায়ের সঙ্গে চারুকলা ঘুরে গেছে। একটা লক্ষ্মীসরাও কিনেছে। মায়ের কাছে গল্প শুনে শুনে তখনই সে মাকে বলেছে, এবারই নতুন পোশাক পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। অনিকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন সে এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে? ছোট্ট অনি বলেছে, ‘এটা এক ধরনের প্রার্থনা। মা বলেছে, এই শোভাযাত্রায় অংশ নিলে ভালো হবে।’
অনেকে আবার মনে করে, বছরের শুরুর দিন ভালো গেলে বছরের অন্য দিনও ভালোভাবে কাটে।
চৈত্রের ২৮ তারিখে ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের ধারে পাঁচ বছরের নূরুন নাহার কাঁদছে লাল চুড়ির জন্য। মা কান্না থামাতে পারছেন না। ছোট্ট শিশুর কান্না দেখেই কিনে দেওয়া হলো এক গোছা কাচের চুড়ি। পরক্ষণেই ফোকলা দাঁতে হাসি হাসল সে।
নতুন পোশাক না পেলেও অন্যের কিনে দেওয়া লাল চুড়ি পরে হয়তো ছোট্ট নূরুন নাহার মায়ের হাত ধরেই যাবে চারুকলা অথবা রমনার বটমূলে।
ধনী কিংবা গরিব—যেমন বেশই হোক না, সবাই এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। এই শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণে চেতনায় থাকবে মঙ্গলময় কামনা আর মঙ্গলময় বারতা, যা পৌঁছে যাবে সবার দ্বারে দ্বারে।
বৈশাখের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততার কমতি নেই পুরান ঢাকার ঘুড়ি কারিগর হাশেম মিয়ার বাড়িতে। ঘুড়ির কারিগর হাশেম মিয়া বলেন, পৌষের শেষ দিন থেকে পয়লা ফাল্গুন কিংবা পয়লা বৈশাখের মতো দেশীয় দিনগুলো ঘিরে ব্যস্ততা বেশি থাকে। ফরমায়েশ আসে কচ্ছপ, ঈগল, প্রজাপতির মতো নানা আকারের বাহারি ঘুড়ির। রঙিন কাগজ, বাঁশ আর আঠার সাহায্যে বানিয়েছেন বাহারি সব ঘুড়ি। অনেকেই এই দিনে ছাদে উঠে উৎসবের আনন্দ প্রকাশ করেন ঘুড়ি উড়িয়ে।
বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত ছায়ানট। ছায়ানটের অনিন্দ্য রহমান বললেন, প্রতিবছরের মতো সকালেই শুরু হবে ছায়ানটের অনুষ্ঠান। সকাল, প্রকৃতি, দেশ আর মাটিকে নিয়ে গান কিংবা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে এবারও আহ্বান করা হবে নতুন বছরকে। পঞ্চকবির গান কিংবা লোকগান তো বাংলার প্রাণ।
পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের দিন। ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার দিন। তবে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের শুরুটা নিয়ে আছে নানা মতভেদ। কেউ বলেন সম্রাট আকবর, আবার কেউ বলেন শশাঙ্ক, কেউবা আবার সুলতান হোসেনই বাংলা সনের প্রবর্তক। শুরুটা কীভাবে হলো, সেই তত্ত্বকথার ঝুলি খোলার ভার থাকল না হয় গবেষকের জন্য। আমরা বলি, এই দিনটা কেবল বাঙালির প্রাণের উৎসবের দিন।
বাঙালি এই দিনে পথে নামবে। বাঙালি সব বাধা অতিক্রম করেছে বিভিন্ন সময়ে। বাধা পেলে সে বাধা অতিক্রম করার শক্তি আর সাহস দেয় পয়লা বৈশাখ।
শারমিন নাহার
No comments