আমার অস্তিত্ব নিশ্চিত করে by নুজহাত চৌধুরী
আমার বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার এ দিন। আমার অস্তিত্ব নিশ্চিত করার দিন। পহেলা বৈশাখ আমাকে নির্ভরতা দেয়_ বাঙালি সংস্কৃতির শিকড় এত গভীরে প্রোথিত, কোনো অশুভ শক্তি তা উপড়ে ফেলতে পারবে না। জঙ্গিবাদের উত্থানে, অসংস্কৃতির দাপটে কখনও কখনও হতাশ যে হই না, সেটা বলব না।
হিন্দির আগ্রাসন দেখি, ইসলাম ধর্মের অপব্যবহার দেখি। উদ্বিগ্নও হই। কিন্তু যেটুকু মনোবল হারাই, সব ফিরে পাই রমনার বটমূলে কিংবা রবীন্দ্রসরোবর অথবা চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
আমার যখন বাবার হাত ধরে হাঁটার বয়স হয়নি (একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর হাতে নিহত চিকিৎসক আলীম চৌধুরী। তার ঘাতকরাই তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে), তখনই বাবা-মায়ের কোলে চেপে গিয়েছি রমনায়, সূর্য ওঠার আগে। একটু বড় হওয়ার পর মা-ই শাড়ি পরিয়েছেন, খোঁপায় দিয়েছেন ফুল। আমি হারিয়ে গেছি লাখো মানুষের ভিড়ে। কী যে আনন্দ ও স্বস্তিবোধ আমায় পেয়ে বসত। উচ্ছল আনন্দে ভেসে যেতে যেতে বন্ধুদের বলেছি_ শুভ নববর্ষ, ভালো থেকো সবাই।
এখন নববর্ষের প্রভাতে মেয়েকে সাজাই, ছেলেকে সাজাই। গরমে কষ্ট হয়। বৃষ্টিতেও পড়েছি। কিন্তু এমন দিনে যে সবার মাঝে মিশে যেতে হয়, সেটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে ওরা জেনে গেছে। যেমন আমি জেনেছি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ছে পহেলা বৈশাখের আবেদন।
আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এ দিনের আবেদন অনন্য। বটমূলে এখন ঢোকা সহজ নয়। কিন্তু চারুকলার মিছিল বাদ যায় না। ছেলেমেয়েরা চরকা খুব পছন্দ করে। এ জন্য কোনো একটা মেলায় যেতেই হয়।
শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, একুশের প্রভাতফেরিতে, ২৬ মার্চের নতুন জাতির অভ্যুদয় ঘোষণার দিনে, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এবং ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের দিনে ওরা আমার সাথী হয়। আমার মেয়ের ২ মাস বয়সেই ওকে নিয়ে ফুল দিয়েছি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। মা আমাকে নিয়ে এটা করেছে, আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে করছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এটাই যে দায়বদ্ধতা।
প্রথম পহেলা বৈশাখের স্মৃতি যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, আমি উত্তরে বলি_ জন্ম থেকেই এ দিনের সঙ্গে বাবা-মা পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া এ বোধ আমৃত্যু লালন করব। আমি বাঙালি এটা অহংকার। কখনও তা হারিয়ে যেতে দেব না।
আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির এ শিকড়কে আরও গভীরে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমার পরের প্রজন্মও এটা নিশ্চিতভাবেই করবে।
স ডা. নুজহাত চৌধুরী :মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আলীম চৌধুরীর মেয়ে
আমার যখন বাবার হাত ধরে হাঁটার বয়স হয়নি (একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর হাতে নিহত চিকিৎসক আলীম চৌধুরী। তার ঘাতকরাই তো এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে), তখনই বাবা-মায়ের কোলে চেপে গিয়েছি রমনায়, সূর্য ওঠার আগে। একটু বড় হওয়ার পর মা-ই শাড়ি পরিয়েছেন, খোঁপায় দিয়েছেন ফুল। আমি হারিয়ে গেছি লাখো মানুষের ভিড়ে। কী যে আনন্দ ও স্বস্তিবোধ আমায় পেয়ে বসত। উচ্ছল আনন্দে ভেসে যেতে যেতে বন্ধুদের বলেছি_ শুভ নববর্ষ, ভালো থেকো সবাই।
এখন নববর্ষের প্রভাতে মেয়েকে সাজাই, ছেলেকে সাজাই। গরমে কষ্ট হয়। বৃষ্টিতেও পড়েছি। কিন্তু এমন দিনে যে সবার মাঝে মিশে যেতে হয়, সেটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে ওরা জেনে গেছে। যেমন আমি জেনেছি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়ছে পহেলা বৈশাখের আবেদন।
আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্যও এ দিনের আবেদন অনন্য। বটমূলে এখন ঢোকা সহজ নয়। কিন্তু চারুকলার মিছিল বাদ যায় না। ছেলেমেয়েরা চরকা খুব পছন্দ করে। এ জন্য কোনো একটা মেলায় যেতেই হয়।
শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, একুশের প্রভাতফেরিতে, ২৬ মার্চের নতুন জাতির অভ্যুদয় ঘোষণার দিনে, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এবং ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের দিনে ওরা আমার সাথী হয়। আমার মেয়ের ২ মাস বয়সেই ওকে নিয়ে ফুল দিয়েছি রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। মা আমাকে নিয়ে এটা করেছে, আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে করছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এটাই যে দায়বদ্ধতা।
প্রথম পহেলা বৈশাখের স্মৃতি যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, আমি উত্তরে বলি_ জন্ম থেকেই এ দিনের সঙ্গে বাবা-মা পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া এ বোধ আমৃত্যু লালন করব। আমি বাঙালি এটা অহংকার। কখনও তা হারিয়ে যেতে দেব না।
আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির এ শিকড়কে আরও গভীরে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমার পরের প্রজন্মও এটা নিশ্চিতভাবেই করবে।
স ডা. নুজহাত চৌধুরী :মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আলীম চৌধুরীর মেয়ে
No comments