স্বাগত ১৪১৯-সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাক

জীর্ণ পুরনো বছর মুছে দিয়ে নববর্ষ আসে নতুন স্বপ্নময় আকাঙ্ক্ষার হাত ধরে। সেই আবহমান ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতায় বাংলা দিনপঞ্জিতে উৎকীর্ণ আজ ১৪১৯ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ। স্বাগত ১৪১৯। বাংলা নববর্ষ নিয়ে বাঙালির উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। কবিতায়, গানে, নানা লোকাচারে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দূর অতীত থেকে আমরা বয়ে


চলেছি নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সম্রাট আকবরের শাসনামলে কৃষিনির্ভর বাংলায় বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন চালু হয়েছিল, নানা বিবর্তনে তা আজও বহমান। এ দেশের বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে বাংলা নববর্ষ বহুকাল ধরে বরণীয়। চৈত্রসংক্রান্তির নানা লোকাচার আর নববর্ষ বরণে কৃষিজীবী সমাজের বিচিত্র আয়োজন লোকায়ত উৎসব হিসেবেও তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও বৈশাখের গুরুত্ব যথেষ্ট। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মমাস বৈশাখ তার সৃজনে এত নানা মাত্রিকতায় উদ্ভাসিত যে, সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের আকুতিই যেন তাতে ধ্বনিত। 'এসো এসো এসো হে বৈশাখ... তাপস নিঃশ্বাস বায়ে/মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে...' পঙ্ক্তিপুঞ্জে বিশ্বকবি বিগত বর্ষকে বিদায় জানিয়ে যে আশাজাগানিয়া উক্তি করেছেন, তারই মধ্যে নিহিত নববর্ষের মূল প্রেরণা_ 'মুছে যাক গ্গ্নানি ঘুচে যাক জরা/অগি্নস্নানে শুচি হোক ধরা...'। চৈত্রের প্রচণ্ড দাবদাহে চৌচির মাঠঘাট বৃষ্টির আশায় উন্মুখ হয়ে থাকে। উন্মুখ বাংলার কৃষিজীবী সমাজও। নতুন বছরের কাছে তাদের প্রত্যাশা বৃষ্টিস্নাত মৃত্তিকায় বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ প্রাপ্তির।
প্রচণ্ড খরার পর বৃষ্টি যেমন হতাশার শেষে আশার রূপক, তেমনি বিগত বছরের অপ্রাপ্তির রিক্ততা থেকে নববর্ষে প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্নকে শস্যের মতোই হৃদয়ে বুনে চলেছে বাংলাদেশ। বৈশাখ যেমন নব সৃষ্টির, তেমনি কালবৈশাখীর ছোবলে ধ্বংসাত্মকও। ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত সকল নবীন সৃষ্টির বীজ।
বৈশাখের সঙ্গে বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক যেমন নিবিড়, তেমনি অর্থনৈতিক সম্পর্কও তাৎপর্যপূর্ণ। আদিবাসী সমাজও বৈসাবি উৎসবে মগ্ন এ নববর্ষেই। বৈশাখের অনিবার্য ঐতিহ্য মেলা। মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কৃষিজীবী সমাজের অর্থনীতি। কারুপণ্যসহ নানা কৃষিপণ্য আর খাদ্যদ্রব্য মেলাকে অর্থবহ করে তোলে। লোক ঐতিহ্যবাহী নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা তো আছেই। নববর্ষ আজ কালের বিবর্তনে আমাদের নগর-সভ্যতার সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবও। ১৯৬৭ থেকে রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব অগ্রসর বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণে রেখেছে বিশাল ভূমিকা, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকেও দিয়েছে নতুন গতি। পহেলা বৈশাখে রমনায় এখন লাখো মানুষের ঢল নামে। সমগ্র রাজধানী ভাসে উৎসবের প্লাবনে। এ উৎসব নবীন প্রজন্মকে চিনিয়ে দিচ্ছে আপন সংস্কৃতির ঐতিহ্য। এ বৈশাখে খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। সবাইকে শুভ নববর্ষ।

No comments

Powered by Blogger.