ছাত্রী নিপীড়ন-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই
আমাদের সমাজে শিক্ষকরা বরাবরই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে অভিষিক্ত। বহু মানুষ এখনও বিশ্বাস করে_ বাবা-মার পরই একটি শিশুর জীবনে শিক্ষকের অবস্থান, তারাই মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার একজন শিক্ষক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করে যে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন
করলেন তাতে শিক্ষকদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আগের অবস্থানে থাকবে কি-না সে প্রশ্ন উঠেছে। এমন কুলাঙ্গার কোনোভাবেই শিক্ষকের মর্যাদা লাভের যোগ্য নয়। আইন ও সামাজিক মূল্যবোধের বিবেচনায় সে গুরুতর অপরাধী। তার কারণে সাধারণভাবে শিক্ষকরাও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দৃষ্টিতে আসামির কাঠগড়ায়। এ কারণে এ ধরনের ঘটনা রোধে শিক্ষকদের তরফে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। ভিকারুননিসা নূন স্কুল শুধু ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান নয়, রাজধানীর মেধাবী ছাত্রীদের শিক্ষায়তনও বটে। শিক্ষিত, সচ্ছল ও সচেতন পরিবারগুলোর প্রথম পছন্দের একটি স্কুল এটি। স্বাভাবিকভাবে, একজন অভিভাবক এ প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পাঠিয়ে তার আলোকিত ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হতে চান। আশা করেন এ প্রতিষ্ঠানে নৈতিক, মানবিক সকল শিক্ষায় আলোকিত হয়ে ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হবে তার সন্তান। এমন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীকে যদি একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হতে হয়, তবে তার চেয়ে উদ্বেগের বিষয় আর কী হতে পারে? যার দায়িত্ব আলোকিত মানুষ গড়ে তোলা তিনিই যদি অন্ধকারের জীব হন তবে আশা আর থাকল কোথায়? তার চেয়েও বড় আশঙ্কার বিষয় হলো, পাষণ্ড শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টাই প্রকারান্তরে চলেছে। যদি তা-ই হয়, তবে সেটি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি। আমরা মনে করি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ও নিপীড়ন প্রতিরোধের জন্য সেল থাকা উচিত। কেউ নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হলে সেই সেলের শরণাপন্ন হতে পারেন। আর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সেলও অভিযোগ তদন্ত করে নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো পালনীয় হওয়া উচিত। রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্কুলের ছাত্রী নিপীড়নের বিহিত চাইতে সে স্কুলের অভিভাবকদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হলো, এটি খুব দুঃখজনক অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় অভিভাবকরা রাস্তায় নেমে আসার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। অভিভাবকদের ভূমিকা প্রশংসনীয়, সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য তারা রাস্তায় নেমেছেন, গণমাধ্যমের সামনে সত্য তুলে ধরেছেন। তাদের এ উদ্যোগের কারণেই ধর্ষক দ্রুত গ্রেফতার হয়েছে। আমরা আশা করি, ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। যারা নিপীড়ক শিক্ষককে সহায়তা দিয়েছেন তাদেরও রক্ষা পাওয়া উচিত নয়। ভিকারুননিসার এ লজ্জাজনক ঘটনা আরও কিছু বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে ছাত্রী। প্রশ্ন হলো, কেন একজন শিক্ষার্থীকে একই স্কুলের শিক্ষকের কোচিং নিতে হবে। স্কুল বা ক্লাসরুমের বাইরে কেন শিক্ষক এভাবে পাঠদান করবেন? শিক্ষাঙ্গনের সার্বিক পরিবেশের জন্য এটি শুভ ফলদায়ক নয়। আমরা মনে করি, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা হোক। স্কুলের অন্য কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ থাকলে তারও যথাযথ বিহিত হোক। ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন গড়ে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আসুক।
No comments