বেহাল প্রাথমিক বিদ্যালয়-প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগ
এই যুগে এসেও কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুকুরের পানি পান করতে হয়, কোনো স্কুলে শৌচাগারব্যবস্থা নেই, এমনটা চিন্তাও করা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা কোথাও কোথাও তার চেয়েও খারাপ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত জরিপের ফল থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য।
দেশের ২০টি জেলায় সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে, যা দূর করা অতি জরুরি বলে বিবেচিত। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে খেলার মাঠ অপরিহার্য হলেও অনেক স্কুলেই খেলার মাঠের অভাব দেখা গেছে। পরিচালিত জরিপে ঢাকা শহর অন্তর্ভুক্ত করা হলে দেখা যেত, অধিকাংশ স্কুলেই খেলার মাঠ নেই। শহরাঞ্চলের স্কুলগুলোর অবস্থা এতই নাজুক যে সেখানে বহুতল ভবন করে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ। কারণ জায়গার অভাবে তারা সেখানে ঘর করতে পারছে না। এই দুরবস্থা গ্রামের স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা কম। স্কুলের অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায় যে ভবনের অভাবে গাছতলায় কিংবা কোথাও বেঞ্চের অভাবে মাদুর কিংবা পাটি বিছিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকের অভাব দীর্ঘদিনের। তবে বর্তমান সরকার দুই দফায় প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করায় এই অভাব অনেকাংশে কমে গেছে। সে ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের মধ্যে গ্রামে না যাওয়ার মানসিকতা প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। চাকরির প্রয়োজনে গ্রামে পোস্টিং নেওয়ার পরও সেখানে গরহাজির থাকার উদাহরণ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীকে সুযোগবঞ্চিত করছে। গ্রামজীবনে যোগাযোগব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি অনেকাংশে কমে এলেও এখনো অনেক জায়গা আছে, যেখানে বর্ষা এলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে বারণ করা হয়। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে হবে। অর্থাভাবে গরিব অভিভাবকরা শিক্ষার্থীকে স্কুলে যেতে দেন না। এ ক্ষেত্রে কার্যত দুপুরের খাবার জোগাড় করতে না পারাই প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করার সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি। এতে করে শিক্ষার্থীর স্কুলমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়বে। অভিভাবকদেরও আকর্ষণ বাড়বে। স্যানিটেশন-ব্যবস্থা এবং পানীয় জলের অভাব পূরণ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হবে না, কারণ এমন স্কুলের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই এ ব্যাপারে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। যেসব স্কুলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে, সেখানে শিক্ষক প্রেরণ করা খুব কঠিন বিষয় নয়। অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে নিয়মিত কাজ হিসেবেই, তাহলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
No comments