অহেতুক মাঠ গরম করার চেষ্টা কেন?-হরতাল প্রত্যাহার করুন

প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিতে কী আছে, কী নেই—সেসব না জেনেই একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ নামের একটি সংগঠন ৪ এপ্রিল হরতাল ডেকেছে। যদিও মন্ত্রিসভা সম্প্রতি যে নারী উন্নয়ন নীতিটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে, তাতে নতুন কিছু নেই।


১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে নারী উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করেছিল, বলা যায়, বর্তমান নীতি তারই অনুলিপি। এতে বলা হয়েছে, ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জরুরি বিষয়াদি, যেমন—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, উপার্জনের সুযোগ, উত্তরাধিকার সম্পদ, ঋণপ্রযুক্তি, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদসহ ভূমির ওপর অধিকার ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ ও সমান সুযোগ থাকবে। এতে উত্তরাধিকার আইন নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এমনকি ২০০৪ সালে চারদলীয় জোট সরকার প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতির সঙ্গেও এর বড় ধরনের পার্থক্য নেই। হরতাল আহ্বানকারীরা সেই সরকারের অংশীদার ছিলেন। তখন যদি নারী উন্নয়ন নীতি জায়েজ হয়ে থাকে, আজ না-জায়েজ হবে কেন?
আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, যাঁরা হরতাল ডেকেছেন, তাঁরা প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিটি পড়েও দেখেননি, ছুঁয়েও দেখেননি। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে যে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া হয়েছিল, তার ধারেকাছেও নেই এই নীতি। নারীনেত্রীরা যথার্থই বলেছেন, আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, এই নীতিতে তা পূরণ হয়নি। এটিকে কেউ কেউ শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার পরও মহলবিশেষ হরতাল ডেকেছে, তা শুধু অযৌক্তিক নয়, উসকানিমূলকও। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চলা ফতোয়াবাজির মামলা নিয়েও মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছে এই মহলটি।
দেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে কারও প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। যখনই কোনো সরকার নারীর বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেয়, চিহ্নিত মহলটি শোরগোল তোলে। এদের বেআইনি তৎপরতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক যে, একটি নারী নীতি নিয়ে গত ১২-১৩ বছর ধরে আমরা মহড়া দিয়ে আসছি, চূড়ান্ত করতে পারিনি। আরও অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মতো নারী উন্নয়ন নীতিও ক্ষমতার হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। এই দীর্ঘ সময়ে একটি উন্নয়ন নীতিই যদি আমরা ঠিক করতে না পারি, তাহলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে কী করে?
ইতিমধ্যে নারী উন্নয়ন নীতি সম্পর্কে নারীবিষয়ক মন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতি বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। সে ক্ষেত্রে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ আগামী ৪ এপ্রিলের হরতাল প্রত্যাহার করে নেবে আশা করি। অন্যথায় এই খামোখা হরতালকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.