জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ-পচা শামুকে পা কেটেছে by মশিউল আলম

লন্ডনের বেলমার্শ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩ মার্চ চূড়ান্তভাবে রায় দিয়েছেন, হুইসলব্লোয়িং ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে যেতে হবে। অর্থাৎ সুইডিশ প্রসিকিউটরদের দাবি অনুযায়ী কথিত যৌন অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করার আদেশ জারি হলো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ওপর।


সুইডেন! দেশটিকে খুব পছন্দ করতেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, যাঁর কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, যিনি এয়ারপোর্টে এয়ারপোর্টে ঘুমান। গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি এক সেমিনারে বক্তৃতা করতে গিয়ে স্টকহোমের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সুইডিশ এক পত্রিকার একজন প্রতিবেদককে অ্যাসাঞ্জ বলেছিলেন, সুইডেনে এলে তিনি বেশ মুক্ত বোধ করেন। তাঁর ওয়েবসাইটের মূল সার্ভার তিনি রেখেছেন ওই দেশেই। স্টকহোমে তাঁর বন্ধু-সমর্থকের সংখ্যাও প্রচুর। সুইডেনেই তিনি দেখা পেয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানে অতিসমৃদ্ধ ও আদর্শগতভাবে বৈপ্লবিক এক গোষ্ঠীর, যার সদস্যরা মনে করেন তথ্য ও জ্ঞানের ওপর কারোর একচেটিয়া অধিকার থাকতে নেই।
শুধু তা-ই নয়, সুইডেনই হচ্ছে সেই দেশ, যেখানে সর্বপ্রথম প্রণীত হয়েছে ‘ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট’ (১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)। দেশটিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রকাশকদের স্বাধীনতা প্রায় অবাধ। কোনো কিছু প্রকাশের দায়ে কোনো লেখক, সাংবাদিক বা প্রকাশককে শাস্তি দেওয়া সুইডেনে প্রায় অসম্ভব। তাই উইকিলিকসের মতো একটি ভার্চুয়াল প্রতিষ্ঠান, যার মূল কাজই হচ্ছে সব গোপন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা, তার নেতা, সদস্য ও ভৌত অবকাঠামোর জন্য এমন নিরাপদ স্বর্গ আর হতে পারে না। গত বছরের জুলাই মাসে উইকিলিকস আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন বাহিনীর তৎপরতা সম্পর্কে বেশ কিছু গোপন তথ্য প্রকাশ করার পর থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পেছনে যখন পেন্টাগনের ধাওয়া শুরু হয়, তখন থেকে তাঁর প্রকাশ্য চলাফেরা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। আগস্টে তিনি প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, সুইডেনেই গড়বেন নিজের জন্য আধা স্থায়ী এক ডেরা।
সেই প্রিয় সুইডেনে এখন আর যেতে চাইছেন না অ্যাসাঞ্জ। তিনি দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে তাঁর জন্য ঝুলছে বড় এক বিপদের ভারী খড়্গ। না, সাংবাদিকতা বা তথ্য প্রকাশ-সম্পর্কিত কোনো আচরণের দায়ে সুইডেনে কেউ তাঁকে অভিযুক্ত করছে না। তাঁর বিপদ এসেছে অন্য এক দিক থেকে। সে কাহিনি তাঁর নিজের জন্য তো বটেই, ভক্ত-সমর্থকদের জন্যও ভীষণ বিব্রতকর। তিনি নাকি দুজন সুইডিশ নারীকে ধর্ষণ (রেপ) ও যৌন আক্রমণ (সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট) করেছেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন সুইডিশ প্রসিকিউটররা।
বলা যেতে পারে, এটা অনেকটা ‘পচা শামুকে পা কাটা’র মতো ব্যাপার। যে দুই সুইডিশ তরুণীর ওপর যৌন অপরাধ করা হয়েছে বলে সুইডিশ প্রসিকিউটররা অ্যাসাঞ্জের বিচার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তাঁরা কিন্তু অ্যাসাঞ্জের গুণমুগ্ধ ভক্ত। একজন তো অ্যাসাঞ্জের স্টকহোম সেমিনারের (১১ আগস্ট, ২০১০) আয়োজকদের অন্যতম; স্টকহোমে অ্যাসাঞ্জের থাকার ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন নিজের ফ্ল্যাটে। সেমিনারের আগের রাতে তাঁদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত দৈহিক সংসর্গ ঘটে। তা শুরু হয় নিরাপদভাবে, কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী রাবারের বস্তুটি একপর্যায়ে টুটে যায়; তখন তরুণী অ্যাসাঞ্জকে থামতে বলেন, কিন্তু অ্যাসাঞ্জ থামেননি। এটা ওই তরুণীর ভাষ্য। এ বিষয়ে অ্যাসাঞ্জ শুধু এটুকুই বলেছেন: ‘উই হ্যাড কনসেনসুয়াল সেক্স।’ যা হোক, পরদিন সকালবেলা দুজনে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করেছেন, তারপর সেমিনারে গেছেন একসঙ্গে। তরুণীর বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে যাঁরা ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, পরে তাঁদের কেউ কেউ ইন্টারনেটে লিখেছেন, সেখানে ওই তরুণীকে দেখে একটুও মনে হয়নি যে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তাঁর অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে।
ওই সেমিনারেই অ্যাসাঞ্জের ছবি তুলছিলেন আরেক তরুণী, একজন ফটোগ্রাফার তিনি, টিভিতে অ্যাসাঞ্জকে দেখার পর থেকে ভক্ত। সেমিনার শেষে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তিনি; অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর বন্ধুরা ডিনার খেতে এক রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সময় ফটোগ্রাফার তরুণীটিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। রেস্টুরেন্টে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তাঁর আরও আলাপ হয়, তিনি মেয়েটির সঙ্গে বেশ ঠাট্টা-রসিকতা করেন। তারপর মেয়েটি অ্যাসাঞ্জকে নিজের বাসায় নিমন্ত্রণ করেন। মেয়েটির বাসা স্টকহোম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এক শহরে; অ্যাসাঞ্জ সেখানে যেতে রাজি হন, কিন্তু বলেন, ট্রেনের টিকিট কিনতে হবে মেয়েটিকেই। কারণ, গোপনচারী অ্যাসাঞ্জ তাঁর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে চান না। তরুণী নিজের পকেট থেকে রাহা খরচ দিয়ে অ্যাসাঞ্জকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে দুজনের মধ্যে প্রথমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাবারনিশ্চিত নিরাপদ দৈহিক সংসর্গ ঘটে। দ্বিতীয়বার ঘটে, মেয়েটির ভাষ্য অনুযায়ী, রাবারবিহীন অনিরাপদ দৈহিক মিলন।
তারপর দ্বিতীয় তরুণী টেলিফোনে কথা বলেন প্রথম তরুণীর সঙ্গে (দুজনের মধ্যে পূর্বপরিচয় ছিল না)। কথা বলতে বলতে উভয়ে জেনে যান যে অ্যাসাঞ্জ দুজনের সঙ্গেই দৈহিক সংসর্গ করেছেন। অ্যাসাঞ্জের বহুগামিতা তাঁদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাঁরা অ্যাসাঞ্জকে অনুরোধ করেন রক্ত পরীক্ষা করতে। কারণ, তাঁরা নিশ্চিত হতে চান অ্যাসাঞ্জের কোনো যৌনরোগ (এসটিডি) আছে কি না। কিন্তু স্বভাবত গোপনচারী অ্যাসাঞ্জ কোনো ক্লিনিকে গিয়ে রক্ত দিতে রাজি হননি। দুই তরুণী তাঁর ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে অ্যাসাঞ্জ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন, মুঠোফোনের নম্বর বদলে ফেলেন। মেয়ে দুটি আর কোনোভাবেই অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বেশ উদ্বিগ্ন বোধ করেন এবং শেষে পুলিশ স্টেশনে যান পরামর্শের জন্য। যে কর্মকর্তার কাছে সব বৃত্তান্ত বলে পরামর্শ চান, তিনি একজন নারী এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অ্যাসাঞ্জ তাঁদের সঙ্গে যা করেছেন, তা আইন অনুযায়ী ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়, অ্যাসাঞ্জ প্রসিকিউটরের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। প্রসিকিউটর সব শুনে অভিযোগ তুলে নেন এই বলে যে, কোনো ধর্ষণ বা যৌন অপরাধ ঘটেনি। কিন্তু পরে আবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। এবার এগিয়ে আসেন এক ডাকসাইটে নারীবাদী প্রসিকিউটর—ম্যারিয়ান নাঈ।
এর মধ্যে অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস একের পর এক গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রোধে উন্মত্ত করে তুলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন থেকে শুরু করে ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান নির্বিশেষে অনেক রাজনীতিক ও পেন্টাগনের কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিষোদ্গার শুরু করেন। কেউ কেউ তাঁকে হত্যা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন। অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর আইনজীবীরা মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের অভিযোগ নতুন করে তোলা, সুইডিশ প্রসিকিউশন থেকে ইউরোপীয় অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা—এ সবই ঘটেছে চূড়ান্ত অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অনুযায়ী। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট যখন চলছিল, অ্যাসাঞ্জ তখন লন্ডনে আত্মগোপন করে ছিলেন। সেটা লন্ডনের পুলিশ কর্তৃপক্ষের জানা ছিল, কিন্তু তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে অ্যাসাঞ্জ নিজেই লন্ডন পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অ্যাসাঞ্জ জামিনের আবেদন করেন, একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মঞ্জুর না করে আরও শুনানির আদেশ দেন। ১৬ ডিসেম্বর আবার শুনানি হলে আদালত কয়েকটি কঠিন শর্তে অ্যাসাঞ্জকে জামিনে মুক্তি দেন। সুইডিশ প্রসিকিউশন জামিনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের দাবিতে মামলা চালিয়ে যায়। সর্বশেষ ৩ মার্চ লন্ডনের বেলামার্শ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক হাওয়ার্ড রিডল রায় দিলেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করতে হবে।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে লন্ডন হাইকোর্টে আপিল করেছেন। আপিল অগ্রাহ্য হলে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করতে হবে। সুইডিশ প্রসিকিউটররা তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ শেষ পর্যন্ত দাঁড় করিয়েছেন, সুইডিশ আদালতে সেগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হলে অ্যাসাঞ্জের সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে চার বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু ইউরোপের মধ্যে সুইডেন হচ্ছে সেই দেশ, যেখানে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায়, আর সাজা হয় সবচেয়ে কম লোকের। বিচার নিরপেক্ষ হলে, আইনকে নিজের পথে চলতে দেওয়া হলে অ্যাসাঞ্জেরও সাজা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী দুই তরুণী পরে জানিয়েছেন, তাঁরা চাননি অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হোক, তাঁরা শুধু জানতে চেয়েছিলেন তাঁর কোনো যৌনরোগ আছে কি না। একজন তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলেও শোনা যায়। এরই মধ্যে তাঁরা অন্তরীণে চলে গেছেন, সাংবাদিকেরা আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। মামলাটি নিঃসন্দেহে দুর্বল। অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, এটা ইউরোপীয় অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করার যোগ্যও নয়, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের যুক্তিও এই মামলায় নেই।
কিন্তু অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের বেলমার্শ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ন্যায়বিচার পাননি, হাইকোর্টেও হয়তো পাবেন না; তাঁকে হয়তো শেষ পর্যন্ত সুইডেনেই পাঠানো হবে এবং সম্ভবত সে দেশেও তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না। কারণ, এই মামলা অতি সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অ্যাসাঞ্জকে ঘায়েল করা ও উইকিলিকসকে ধ্বংস করাই এর চূড়ান্ত মতলব।
অ্যাসাঞ্জ ভয় পাচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পড়তে না হয়। কারণ, সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হলে সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকে বলছেন, তখন তাঁকে হাতের মুঠোয় পেতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পথটা আরও সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে তা সহজ হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে হলে সেই দেশে তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হতে হবে, তারপর তারা সুইডেনকে বলবে অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণ করতে। কিন্তু মার্কিন প্রসিকিউটর ও আইনজ্ঞরা তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কোনো অভিযোগ এখনো দাঁড় করাতে পারেননি। সাংবাদিক বা প্রকাশক হিসেবে তাঁর বিচার করে শাস্তি দেওয়া খুব কঠিন হবে। কারণ, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে সংবাদমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলেছেন, গুপ্তচরবৃত্তি-সংক্রান্ত আইনের আওতায় অ্যাসাঞ্জের বিচার করা হবে। কিন্তু অ্যাসাঞ্জকে ওই আইনের আওতায় ফেলা কঠিন। কারণ, তিনি নিজে মার্কিন গোপন নথিগুলো চুরি করেননি, সেগুলো তাঁর হস্তগত হয়েছে মাত্র। তাঁর অপরাধ যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে তা হলো গোপন নথিগুলো প্রকাশ করা। মানে, তিনি একজন প্রকাশক। প্রকাশককে সুরক্ষা দিচ্ছে মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী। কেউ বলছেন, অ্যাসাঞ্জকে যদি মার্কিন গোপন তথ্যসম্পদ চুরির অভিযোগে ফাঁসানো না যায়, তবে তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে চুরি হওয়া তথ্যসম্পদ হস্তগত করার অপরাধে। অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর আইনজীবীরা মনে করেন, এসব কোনো অভিযোগই তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিন্তু অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে শতাব্দীর সবচেয়ে ‘ডেঞ্জারাস ম্যান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ধ্বংস করতে চায়। সুইডেনের দুই ভক্ত তরুণীর সঙ্গে ওই সব ঘটনা না ঘটলেও যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ধ্বংস করার অন্য কোনো পথ খুঁজত।
এখন সুইডেনে পচা শামুকে কাটা পায়ের ক্ষত নিয়ে অ্যাসাঞ্জ কীভাবে লড়বেন; সেই ক্ষত সেরে উঠবে, না তাতে প্রাণঘাতী গ্যাংগ্রিন শুরু হবে—এসব দেখার জন্য উদ্বেগ নিয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়।
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.