ভাড়াটেবান্ধব আইন ও সরকারি সংস্থা চাই-বাড়িভাড়ার সাতকাহন

যে সমস্যা দেখার কেউ নেই, বাড়িভাড়া সমস্যা তেমনই। ঢাকার ৯০ ভাগ বাসিন্দাই ভাড়াবাড়িতে থাকেন, কিন্তু তাঁদের ভোগান্তি কমানোয় নেই যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও ভাড়াটেবান্ধব আইন। ভাড়া বাড়ানো কিংবা বাড়ি ছাড়ানোর ব্যাপারে বাড়িওয়ালাদের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ।


এমনকি বর্গাচাষিরা ভাড়া নেওয়া জমির ওপর যতটা অধিকার পান, ততটা অধিকারও ভাড়াটেদের জন্য নেই। সমস্যাটি বহু পুরোনো এবং এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, গত ১৮ বছরে ঢাকায় বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একই সময়ে ভাড়াটেদের আয় কি ততটা বেড়েছে? দেখা যায়, যাঁদের বাঁধা আয়ে চলতে হয়, তাঁদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় বাড়িভাড়া বাবদ। বিস্ময়কর যে, দরিদ্র মানুষের বসবাসের মেস-বস্তি ও সেমিপাকা ঘরগুলোর ভাড়া তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এককথায় বললে, বাড়িভাড়ার বেলায় বাড়িওয়ালারা যে ক্ষমতা উপভোগ করেন, তা আইনসম্মত নয়। বাড়িভাড়া মোটেই জীবনযাত্রার ব্যয়ের ২০ ভাগের বেশি হওয়ার কথা নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাড়িভাড়ার তালিকা কার্যত কেউই মানে না। এ বিষয়ে ১৯৯১ সালের একটি আইন রয়েছে। কার্যত প্রেমিজেস রেন্ট কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ১৯৯১ নামের এই আইনটি কাগুজে বাঘ, বাস্তবায়ন নেই।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া ইচ্ছামতো বাড়ানো হয়। বাসার রক্ষণাবেক্ষণ, ফিটিংস ইত্যাদি সংস্কারের দায়িত্ব বাড়িওয়ালারা নেন না। ইচ্ছা হলেই স্বল্প সময়ের নোটিশে ভাড়াটেদের বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারেন। তাঁদের দাপটে ভাড়াটেরা সংকুচিত থাকেন। তবে কিছু কিছু ভাড়াটেও অনিয়ম-অসততা করেন না, তা নয়। তবে সার্বিকভাবে ভাড়াটেরা অসহায় হয়েই থাকেন।
নাগরিক অধিকার, ভোক্তা অধিকার এবং নাগরিক জীবনের স্বস্তি ও শান্তির স্বার্থে বিদ্যমান আইনটির সংস্কার দরকার। দরকার সিটি করপোরেশন কিংবা ওয়ার্ড কমিশনারের আওতায় বাড়িভাড়া কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তাঁদের মাধ্যমে সমস্যা মীমাংসা করা। সরকারিভাবে এলাকাভিত্তিক এবং বাণিজ্যিক ও আবাসিক ব্যবহারের জন্য বাস্তবভিত্তিক ভাড়ার তালিকা প্রণয়নও করতে হবে। বাড়িওয়ালারা লাভবান হবেন তাতে অসুবিধা নেই, কিন্তু ভাড়াটেরা কেবল বঞ্চিতই হতে থাকবেন—এটাও চলতে পারে না। ঢাকার জনসংখ্যা বাড়তে থাকার জন্য ভাড়াবাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়িওয়ালারা একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করেন। এদিকে খেয়াল করে সরকারিভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্পও হাতে নেওয়া যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.