মানুষরতন-একজন রঞ্জিত ও পাঠকের অনুভূতি by নাইর ইকবাল
সংবাদপত্রে অসংখ্য সংবাদের ভিড়ে কিছু কিছু সংবাদ আমাদের হূদয় ছুঁয়ে যায়। অশ্রুসিক্ত করে, মনের মধ্যে তৈরি করে তীব্র দুঃখবোধ। আবার সংবাদই আমাদের আশান্বিত করে, নতুন উদ্যমে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করে। জাতি হিসেবে এই রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের সবার মধ্যে যে হতাশা, তাতে সঞ্চার করে নতুন আশার আলো।
দুই দিন আগে প্রথম আলোয় প্রকাশিত নীলফামারীর মাদ্রাসাশিক্ষক রঞ্জিত কুমার রায়ের জীবনসংগ্রামের কাহিনি তেমনই একটি সংবাদ, যা সবাইকে আলোড়িত করে। দুই দিন ধরেই প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে রঞ্জিতের এই জীবনসংগ্রামের কাহিনি সর্বাধিক আলোচিত ও পঠিত সংবাদের তালিকায় রয়েছে।
দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাঠক প্রথম আলোর অনলাইনে এই সংবাদটি পড়ে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা সবাই চান রঞ্জিতের মতো একজন সংগ্রামী মানুষের সাফল্য। তাঁরা চান এক বেলা ইটভাটায় দিনমজুরি আর অন্য বেলা মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে যিনি অতি কষ্টে নিজের সংসারটি চালাচ্ছেন, তাঁকে যেকোনো উপায়ে সাহায্য করতে। এ দেশের মানুষ যে অপরের দুঃখে দুঃখী, অপরের জন্য সহমর্মী, তা মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রথম আলো অনলাইনের অসংখ্য পাঠকের আবেগঘন মন্তব্যে।
পাঠকদের সবচেয়ে বেশি ছুঁয়েছে রঞ্জিতের জীবনবোধ। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে সততাকে তিনি ছুড়ে ফেলে দেননি। সহজ-সরল জীবনে বিশ্বাসী এই ব্যক্তি কষ্ট করেও নিজের জ্ঞান, বিদ্যা ও বুদ্ধিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। কিন্তু যে মানুষ আলোকিত পথের দিশারি, তাঁর জীবনটা এত কষ্টের হবে কেন? তাঁকে কেনই বা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। পাঠকদের বিভিন্ন মন্তব্যে সেই জিজ্ঞাসাই বেশি করে উঠে এসেছে।
অনলাইন পাঠকদের কেউ কেউ তাঁকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বীর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘এই বীরের জন্য আমরা যদি কিছু না করি, তাহলে আর কার জন্য করব?’
ইজাজ নামের এক পাঠক তাঁর মন্তব্যে রঞ্জিতকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রঞ্জিত কুমার রায় আমাদের সমাজের সেই স্বল্পসংখ্যক মানুষের একজন, যাঁরা সৎ থেকে অন্যের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছেন।’
একজন শিক্ষক হয়েও ইটভাটায় পরিশ্রম করার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না বেশির ভাগ পাঠক। অনেকেই বলেছেন, ‘মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষককে যদি নিজের পেট চালানোর জন্য দিনমজুরের কাজ করতে হয়, তাহলে এ দেশে কীভাবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কীভাবে অন্যরা আগামী প্রজন্মের কান্ডারি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত হবে?’
প্রথম আলোর অনলাইনে ‘অহর্নিশ’ ছদ্মনাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা এক পাঠক সবকিছু ছাপিয়ে রঞ্জিতের এই জীবনকাহিনিতে আশার আলোই দেখতে পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হাজারও দৈন্যের খবরের মাঝে এ রকম একটি খবরে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই...রঞ্জিত কুমার রায় আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম।’
রঞ্জিতের এই সংবাদে পাঠকদের মন্তব্যে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ‘শ্রদ্ধা’—চমৎকার এই শব্দটি ব্যবহার করেই অনেকে নতশির হয়েছেন জীবনসংগ্রামী এই মানুষটির প্রতি।
রাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মন্তব্যে উঠে এসেছে সাধারণ নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের সীমাহীন ব্যর্থতার হতাশা।
হতাশার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বাধিক পঠিত প্রথম আলোর প্রতি সবার আশা, এ ধরনের আরও সংবাদ এ পত্রিকায় প্রকাশিত হোক। অনেকেই বলেছেন, রাষ্ট্র যেখানে দেশের মানিক-রতনদের সন্ধান করেও করে না, সেখানে প্রথম আলোসহ দেশের অন্য পত্রিকাগুলো যদি অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার মাধ্যমে এমন মানুষের সন্ধান দিত, তাহলে এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই দেশই দারুণভাবে উপকৃত হতো।
প্রিয় পাঠক, এমন বিমূর্ত মানবিকতার কাহিনি অতীতে যেমন প্রথম আলোয় অসংখ্যবার ছাপা হয়েছে, ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও ছাপা হবে। আর এমন সংবাদসহ দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজসংক্রান্ত সব সংবাদে আপনারাও সংশ্লিষ্ট হোন। www.prothom-alo.com—এই ওয়েব ঠিকানায় গিয়ে বিভিন্ন সংবাদে আপনারাও মন্তব্য করুন। কে জানে, বিভিন্ন ইস্যুতে আপনাদের মন্তব্যগুলোই হয়তো দেশকে বদলে দেওয়ার প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হবে।
নাইর ইকবাল: অনলাইন সাংবাদিক।
দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাঠক প্রথম আলোর অনলাইনে এই সংবাদটি পড়ে তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা সবাই চান রঞ্জিতের মতো একজন সংগ্রামী মানুষের সাফল্য। তাঁরা চান এক বেলা ইটভাটায় দিনমজুরি আর অন্য বেলা মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে যিনি অতি কষ্টে নিজের সংসারটি চালাচ্ছেন, তাঁকে যেকোনো উপায়ে সাহায্য করতে। এ দেশের মানুষ যে অপরের দুঃখে দুঃখী, অপরের জন্য সহমর্মী, তা মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রথম আলো অনলাইনের অসংখ্য পাঠকের আবেগঘন মন্তব্যে।
পাঠকদের সবচেয়ে বেশি ছুঁয়েছে রঞ্জিতের জীবনবোধ। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে সততাকে তিনি ছুড়ে ফেলে দেননি। সহজ-সরল জীবনে বিশ্বাসী এই ব্যক্তি কষ্ট করেও নিজের জ্ঞান, বিদ্যা ও বুদ্ধিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। কিন্তু যে মানুষ আলোকিত পথের দিশারি, তাঁর জীবনটা এত কষ্টের হবে কেন? তাঁকে কেনই বা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। পাঠকদের বিভিন্ন মন্তব্যে সেই জিজ্ঞাসাই বেশি করে উঠে এসেছে।
অনলাইন পাঠকদের কেউ কেউ তাঁকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বীর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘এই বীরের জন্য আমরা যদি কিছু না করি, তাহলে আর কার জন্য করব?’
ইজাজ নামের এক পাঠক তাঁর মন্তব্যে রঞ্জিতকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রঞ্জিত কুমার রায় আমাদের সমাজের সেই স্বল্পসংখ্যক মানুষের একজন, যাঁরা সৎ থেকে অন্যের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছেন।’
একজন শিক্ষক হয়েও ইটভাটায় পরিশ্রম করার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারছেন না বেশির ভাগ পাঠক। অনেকেই বলেছেন, ‘মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষককে যদি নিজের পেট চালানোর জন্য দিনমজুরের কাজ করতে হয়, তাহলে এ দেশে কীভাবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কীভাবে অন্যরা আগামী প্রজন্মের কান্ডারি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত হবে?’
প্রথম আলোর অনলাইনে ‘অহর্নিশ’ ছদ্মনাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা এক পাঠক সবকিছু ছাপিয়ে রঞ্জিতের এই জীবনকাহিনিতে আশার আলোই দেখতে পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হাজারও দৈন্যের খবরের মাঝে এ রকম একটি খবরে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই...রঞ্জিত কুমার রায় আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম।’
রঞ্জিতের এই সংবাদে পাঠকদের মন্তব্যে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ‘শ্রদ্ধা’—চমৎকার এই শব্দটি ব্যবহার করেই অনেকে নতশির হয়েছেন জীবনসংগ্রামী এই মানুষটির প্রতি।
রাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মন্তব্যে উঠে এসেছে সাধারণ নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের সীমাহীন ব্যর্থতার হতাশা।
হতাশার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বাধিক পঠিত প্রথম আলোর প্রতি সবার আশা, এ ধরনের আরও সংবাদ এ পত্রিকায় প্রকাশিত হোক। অনেকেই বলেছেন, রাষ্ট্র যেখানে দেশের মানিক-রতনদের সন্ধান করেও করে না, সেখানে প্রথম আলোসহ দেশের অন্য পত্রিকাগুলো যদি অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার মাধ্যমে এমন মানুষের সন্ধান দিত, তাহলে এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই দেশই দারুণভাবে উপকৃত হতো।
প্রিয় পাঠক, এমন বিমূর্ত মানবিকতার কাহিনি অতীতে যেমন প্রথম আলোয় অসংখ্যবার ছাপা হয়েছে, ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও ছাপা হবে। আর এমন সংবাদসহ দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজসংক্রান্ত সব সংবাদে আপনারাও সংশ্লিষ্ট হোন। www.prothom-alo.com—এই ওয়েব ঠিকানায় গিয়ে বিভিন্ন সংবাদে আপনারাও মন্তব্য করুন। কে জানে, বিভিন্ন ইস্যুতে আপনাদের মন্তব্যগুলোই হয়তো দেশকে বদলে দেওয়ার প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হবে।
নাইর ইকবাল: অনলাইন সাংবাদিক।
No comments