লাইসেন্স ছাড়াই গ্রাহকসেবায় চার মোবাইল অপারেটর by সজল জাহিদ

লাইসেন্স ছাড়াই সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং সিটিসেলকে। নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স এবং স্পেকট্রাম ফি পরিশোধ করেও সাত সপ্তাহ ধরে লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় আছে চার মোবাইল ফোন অপারেটর। এ অবস্থা অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছে তারা। তবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, এখনও অপারেটরদের কাছে তাদের অর্থ পাওনা রয়েছে। তা ছাড়া বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন।


ফলে এ বিষয়ে এখন তাদের পক্ষে বাড়তি কিছু করার নেই। বিটিআরসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কবে আদালত থেকে বিষয়টির সুরাহা হবে সে সম্পর্কেও তারা কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। ফলে আরও কিছুদিন এ অনিশ্চয়তার মধ্যে চারটি অপারেটরকে থাকতে হবে। তবে বিটিআরসির আইনবিষয়ক পরামর্শক খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সমকালকে বলেন, অপারেটরদের মতো বিটিআরসিও চায় যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান। দু'পক্ষের জন্যই এটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। কাজের ক্ষেত্রেও
সমস্যা হচ্ছে। তবে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলছে, সম্ভবত আদালতে বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে যথাযথ উপস্থাপন হচ্ছে না। সে কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আড়ালে পড়ে আছে।
চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরই জানিয়েছে, লাইসেন্স নবায়ন সামনে রেখে অন্তত ছয় থেকে আট মাস গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে বাড়তি কিছুই করছে না তারা। তারও আগে থেকে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ। নবায়নের চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা আর পয়সা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অপারেটররা বলছে, পুরনো যেসব সেবা কার্যক্রম ছিল সেগুলো দিয়েই কোনো রকম চালিয়ে নিচ্ছে তারা। সবসময় যে অপারেটররা গ্রাহকদের নতুন অফার দিয়ে চমকের মধ্যে রাখত তাদের প্রত্যেকেই এখন তা গুটিয়ে নিয়েছে।
বছর শেষ পর্যায়ে থাকায় বিটিআরসির সঙ্গে অপারেটরদের দেনা-পাওনার হিসাব করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগের নিয়মেই হিসাব হবে, নাকি নতুন নীতিমালার আলোকে অপারেটররা বিটিআরসিকে অর্থ পরিশোধ করবে_ সেটিও তাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এর আগে ৩১ অক্টোবর লাইসেন্স নবায়নের শর্ত হিসেবে স্পেকট্রাম ফির (৪৯ শতাংশ) প্রথম কিস্তির ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে গ্রামীণফোন। একই সঙ্গে লাইসেন্স নবায়নের সাড়ে ৮ কোটি টাকাও জমা দেয় তারা। পরে ৯ নভেম্বর বাকি তিনটি অপারেটর আরও ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা দেয়। বিটিআরসি দাবি করছে, লাইসেন্স ফি এবং স্পেকট্রাম চার্জের ভ্যাট হিসেবে চারটি অপারেটরের কাছে তাদের আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাওনা। এর বাইরে ২০০৮ সালে গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংকের কাছে বিক্রি করা স্পেকট্রামের অতিরিক্ত মূল্য হিসেবে আরও ৪০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা আছে।
দুটি বিষয়ে প্রথমে গ্রামীণফোন উচ্চ আদালতে রিট করে। পরে বাংলালিংকও একই অভিযোগে রিট পিটিশন দাখিল করে। আদালতে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স প্রদান স্থগিত করে বিটিআরসি। খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই এ বিষয়ে শুনানি শেষ করার চেষ্টা করবেন তারা।
তবে অ্যামটবের সেক্রেটারি জেনারেল আবু সাইদ খান সমকালকে বলেন, সরকারের টাকা ডান পকেটে যাবে নাকি বাঁ পকেটে যাবে তা নিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করার কারণ থাকতে পারে না। তা ছাড়া যেখানে সরকার এত অর্থ সংকটে রয়েছে সেখানে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলও রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি যথাযথভাবে আদালতের সামনে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করছেন বলে মনে হয় না।

No comments

Powered by Blogger.