ট্রাইব্যুনালে সপ্তম সাক্ষী-নির্যাতনকারীদের মধ্যে সাঈদী ছিলেন
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল বৃহস্পতিবার একাত্তরে রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন মফিজউদ্দিন পসারি (৭২)। তিনি বলেছেন, তাঁকে নির্যাতনকারী রাজাকারদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন।সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষী মফিজউদ্দিন ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা
বলেন। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরের টেংরাখালী গ্রামে। সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাঈদীকে প্রথমে ফিজিওথেরাপি দিতে বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা পর তাঁকে বেলা ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর মফিজউদ্দিন জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি ও ইবরাহিম ওরফে কুট্টি একাত্তরে সইজউদ্দিন পসারি ও মানিক পসারির বাড়িতে কাজ করতেন। একাত্তরের ৮ মে সকালে তিনি ও কুট্টি চরে মহিষ চরানোর সময় উত্তর দিকে ধোঁয়া ও আগুন দেখেন। তাঁরা মহিষ নিয়ে সইজউদ্দিনের বাড়ির আঙিনায় ফিরে দেখেন, ১২-১৪ জন পাকিস্তানি সেনা ও ২০-২২ জন রাজাকার ওই বাড়ির দিকে আসছে। তাঁরা দক্ষিণে নদীর দিকে পালানোর সময় দুজন পাকিস্তানি সেনা তাঁদের ধরে ফেলে এবং এক দড়িতে বেঁধে সইজউদ্দিনের বাড়ির সামনে বসিয়ে রাখে।
মফিজউদ্দিন বলেন, রাজাকাররা সইজউদ্দিনের বাড়ির মালামাল বের করে আঙিনায় রেখে বাড়িতে কেরোসিন ছিটিয়ে দেয়। দেলু শিকদার রাজাকারদের আগুন ধরিয়ে দিতে বলেন। এরপর রাজাকাররা তাঁদের দুজনকে বেঁধে পারেরহাটের দিকে নিয়ে যায়। পথে রাজাকাররা কুট্টির কাছে মানিক ও সইজউদ্দিন কোথায় জানতে চান। এ সময় দেলু শিকদার ও সেকান্দার শিকদার পাকিস্তানি সেনাদের উর্দুতে কিছু একটা বলার পর কুট্টির বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর তিনি একটি গুলির আওয়াজ পান ও ‘মা’ বলে চিৎকার শোনেন। পেছনে তাকিয়ে দেখেন, পাকিস্তানি সেনারা কুট্টিকে লাথি মেরে খালে ফেলে দিচ্ছে।
মফিজউদ্দিন আরও বলেন, রাজাকাররা তাঁকে পারেরহাটে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে এবং মেরে ফেলার ভয় দেখায়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী এ সময় নির্যাতনকারী রাজাকারদের নাম জানতে চান। জবাবে সাক্ষী বলেন, ওই রাজাকারদের মধ্যে ছিলেন দেলু শিকদার, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মমিন ও রাজ্জাক। ওই নির্যাতনে তাঁর আঙুল ও ঠোঁট ফেটে যায়, হাঁটু ও কোমরে জখম হয় এবং একটি দাঁত পড়ে যায়। নির্যাতনের চিহ্ন তাঁর শরীরে এখনো রয়েছে। রাত ১২টার দিকে তিনি শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসেন ও মানিক পসারির সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি সুন্দরবনে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গ্রামে ফেরেন।
জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে মফিজউদ্দিনের কাছে সৈয়দ হায়দার আলী জানতে চান, দেলু শিকদার এজলাসে আছেন কি না। জবাবে মফিজউদ্দিন কাঠগড়ায় বসা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখিয়ে দেন।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও কফিলউদ্দিন চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, না।
নিচে জেরা, প্রশ্ন ও জবাব আকারে সংক্ষেপে দেওয়া হলো—
প্রশ্ন: পিরোজপুরের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল আপনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন?—জবাব: আমি সুন্দরবনে থাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি, ফাইফরমাশ খেটেছি, সে জন্য বর্তমান সাংসদের কাছে আমাকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। এরপর তিনি কী করেছেন, তা বলতে পারব না।
প্রশ্ন: রাজাকার দেলোয়ার হোসেন মল্লিকের নাম শুনেছেন?—জবাব: না, আজকে প্রথম শুনলাম।
প্রশ্ন: যেসব রাজাকার আপনাকে মারধর ও অত্যাচার করল, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার ইচ্ছা হয়নি?—জবাব: ইচ্ছা হয়েছিল, কিন্তু সুযোগ পাইনি।
প্রশ্ন: মানিক পসারি আপনার মামাতো ভাই?—জবাব: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মানিক ও সইজউদ্দিনদের একটা সিগারেটের কারখানা ছিল?—জবাব: না, বিড়ির কারখানা ছিল, পারেরহাট বন্দরে।
প্রশ্ন: ওই কারখানার অংশীদার ছিলেন সেকান্দার শিকদার?—জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কুট্টির সঙ্গে ধরার আগেও কি আপনাকে পাকিস্তানি সেনারা ধরেছিল?—জবাব: ধরেছিল। কুট্টিসহ ধরার দুই-এক দিন আগে আমি কচা নদীতে মাছ ধরছিলাম। সে সময় দানেশ মোল্লা আমার কাছে মাছ চাইলে আমি দিতে চাইনি। আমি পাড়ে এলে দানেশ আমাকে একটা চড় মেরে বলে, কথা বললে শোনো না কেন? পরে আরেক রাজাকার রাজ্জাক আমার ঝুড়ি দানেশকে দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন: কুট্টি ও তাঁর শ্যালক সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে একাত্তরের ১ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। স্বাধীন হওয়ার পর কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে রাজাকার আতাহার আলী হাওলাদার, আশ্রাব আলী, রুহুল আমিন, আবদুল হাকিম মুন্সি, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, আবদুল মান্নান হাওলাদার, আইয়ুব আলী, কালাম চৌকিদার, মমিনউদ্দিন, দানেশ মোল্লা ও পিরোজপুর সদর থানার এএসআই শামসুর রহমান এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কুট্টি ও সিরাজকে হত্যার অভিযোগে পিরোজপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল ও তাতে সাঈদী আসামি ছিলেন না। এটা আপনি জানেন?—জবাব: জানি না।
প্রশ্ন: স্থানীয় সাংসদ আপনাকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন?— জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনাকে বয়স্ক ভাতার জন্য তালিকাভুক্তির পর সাক্ষী দিতে এসেছেন?— জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: বয়স্ক ভাতা কবে থেকে পান?—জবাব: দুই-তিন মাস আগে থেকে পাওয়া শুরু করেছি।
বিকেল চারটা পর্যন্ত জেরা চলে। এই জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ১ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর পর মফিজউদ্দিন জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি ও ইবরাহিম ওরফে কুট্টি একাত্তরে সইজউদ্দিন পসারি ও মানিক পসারির বাড়িতে কাজ করতেন। একাত্তরের ৮ মে সকালে তিনি ও কুট্টি চরে মহিষ চরানোর সময় উত্তর দিকে ধোঁয়া ও আগুন দেখেন। তাঁরা মহিষ নিয়ে সইজউদ্দিনের বাড়ির আঙিনায় ফিরে দেখেন, ১২-১৪ জন পাকিস্তানি সেনা ও ২০-২২ জন রাজাকার ওই বাড়ির দিকে আসছে। তাঁরা দক্ষিণে নদীর দিকে পালানোর সময় দুজন পাকিস্তানি সেনা তাঁদের ধরে ফেলে এবং এক দড়িতে বেঁধে সইজউদ্দিনের বাড়ির সামনে বসিয়ে রাখে।
মফিজউদ্দিন বলেন, রাজাকাররা সইজউদ্দিনের বাড়ির মালামাল বের করে আঙিনায় রেখে বাড়িতে কেরোসিন ছিটিয়ে দেয়। দেলু শিকদার রাজাকারদের আগুন ধরিয়ে দিতে বলেন। এরপর রাজাকাররা তাঁদের দুজনকে বেঁধে পারেরহাটের দিকে নিয়ে যায়। পথে রাজাকাররা কুট্টির কাছে মানিক ও সইজউদ্দিন কোথায় জানতে চান। এ সময় দেলু শিকদার ও সেকান্দার শিকদার পাকিস্তানি সেনাদের উর্দুতে কিছু একটা বলার পর কুট্টির বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। এরপর তিনি একটি গুলির আওয়াজ পান ও ‘মা’ বলে চিৎকার শোনেন। পেছনে তাকিয়ে দেখেন, পাকিস্তানি সেনারা কুট্টিকে লাথি মেরে খালে ফেলে দিচ্ছে।
মফিজউদ্দিন আরও বলেন, রাজাকাররা তাঁকে পারেরহাটে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে এবং মেরে ফেলার ভয় দেখায়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী এ সময় নির্যাতনকারী রাজাকারদের নাম জানতে চান। জবাবে সাক্ষী বলেন, ওই রাজাকারদের মধ্যে ছিলেন দেলু শিকদার, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মমিন ও রাজ্জাক। ওই নির্যাতনে তাঁর আঙুল ও ঠোঁট ফেটে যায়, হাঁটু ও কোমরে জখম হয় এবং একটি দাঁত পড়ে যায়। নির্যাতনের চিহ্ন তাঁর শরীরে এখনো রয়েছে। রাত ১২টার দিকে তিনি শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসেন ও মানিক পসারির সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি সুন্দরবনে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গ্রামে ফেরেন।
জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে মফিজউদ্দিনের কাছে সৈয়দ হায়দার আলী জানতে চান, দেলু শিকদার এজলাসে আছেন কি না। জবাবে মফিজউদ্দিন কাঠগড়ায় বসা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেখিয়ে দেন।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও কফিলউদ্দিন চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, না।
নিচে জেরা, প্রশ্ন ও জবাব আকারে সংক্ষেপে দেওয়া হলো—
প্রশ্ন: পিরোজপুরের সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল আপনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন?—জবাব: আমি সুন্দরবনে থাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি, ফাইফরমাশ খেটেছি, সে জন্য বর্তমান সাংসদের কাছে আমাকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। এরপর তিনি কী করেছেন, তা বলতে পারব না।
প্রশ্ন: রাজাকার দেলোয়ার হোসেন মল্লিকের নাম শুনেছেন?—জবাব: না, আজকে প্রথম শুনলাম।
প্রশ্ন: যেসব রাজাকার আপনাকে মারধর ও অত্যাচার করল, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার ইচ্ছা হয়নি?—জবাব: ইচ্ছা হয়েছিল, কিন্তু সুযোগ পাইনি।
প্রশ্ন: মানিক পসারি আপনার মামাতো ভাই?—জবাব: হ্যাঁ।
প্রশ্ন: মানিক ও সইজউদ্দিনদের একটা সিগারেটের কারখানা ছিল?—জবাব: না, বিড়ির কারখানা ছিল, পারেরহাট বন্দরে।
প্রশ্ন: ওই কারখানার অংশীদার ছিলেন সেকান্দার শিকদার?—জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: কুট্টির সঙ্গে ধরার আগেও কি আপনাকে পাকিস্তানি সেনারা ধরেছিল?—জবাব: ধরেছিল। কুট্টিসহ ধরার দুই-এক দিন আগে আমি কচা নদীতে মাছ ধরছিলাম। সে সময় দানেশ মোল্লা আমার কাছে মাছ চাইলে আমি দিতে চাইনি। আমি পাড়ে এলে দানেশ আমাকে একটা চড় মেরে বলে, কথা বললে শোনো না কেন? পরে আরেক রাজাকার রাজ্জাক আমার ঝুড়ি দানেশকে দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন: কুট্টি ও তাঁর শ্যালক সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে একাত্তরের ১ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। স্বাধীন হওয়ার পর কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে রাজাকার আতাহার আলী হাওলাদার, আশ্রাব আলী, রুহুল আমিন, আবদুল হাকিম মুন্সি, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা, আবদুল মান্নান হাওলাদার, আইয়ুব আলী, কালাম চৌকিদার, মমিনউদ্দিন, দানেশ মোল্লা ও পিরোজপুর সদর থানার এএসআই শামসুর রহমান এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কুট্টি ও সিরাজকে হত্যার অভিযোগে পিরোজপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল ও তাতে সাঈদী আসামি ছিলেন না। এটা আপনি জানেন?—জবাব: জানি না।
প্রশ্ন: স্থানীয় সাংসদ আপনাকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন?— জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: আপনাকে বয়স্ক ভাতার জন্য তালিকাভুক্তির পর সাক্ষী দিতে এসেছেন?— জবাব: সত্য নয়।
প্রশ্ন: বয়স্ক ভাতা কবে থেকে পান?—জবাব: দুই-তিন মাস আগে থেকে পাওয়া শুরু করেছি।
বিকেল চারটা পর্যন্ত জেরা চলে। এই জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ১ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
No comments