পরীক্ষার ফল-শিক্ষায় প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

ষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ২৮ ডিসেম্বর। পাসের হার খুব সন্তোষজনক_ প্রায় ৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। এ বছর ১৫ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। গত বছর পাস করেছিল ১২ লাখ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ দুই বছরেই আমাদের দেশ পেয়ে গেল অষ্টম শ্রেণী পাস করা ২৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অন্তত অর্ধেক ছাত্রী। উপবৃত্তি ও বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ তাদের জন্য নতুন জগতের দুয়ার


খুলে দিয়েছে। বিনামূল্যে বই প্রদানের কর্মসূচিও সব ছাত্রছাত্রীর জন্য মস্ত প্রণোদনা। স্বল্পোন্নত দেশের সারিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলের তাৎপর্য অনেক। দেশের অন্তত পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবারে দিনে দুই বেলা খাবার জোটে না। কিন্তু শিক্ষার যে প্রসার, তাতে এসব পরিবারেও জ্ঞানের আলোকচ্ছটা পড়ছে_ তাতে সন্দেহ নেই। এ প্রসঙ্গেই আমরা কিছু বিষয়ের প্রতি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য জরুরি। প্রথমত, শিক্ষকদের মান বাড়ানো। এ জন্য অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেধাবীদের এ মহান পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আকর্ষণীয় বেতন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন। বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ আসছে যে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অনেকেই শিক্ষক নিয়োগের জন্য ঘুষ গ্রহণ করেন এবং ভবন নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সরকারের বরাদ্দের একটি অংশ নিজেদের পকেটে ভরেন। জনপ্রতিনিধি কিংবা শাসক দলের প্রতি আনুগত্যের মানদণ্ডে নয়, বরং প্রকৃত শিক্ষানুরাগীদেরই ব্যবস্থাপনার কাজে যুক্ত করা চাই। তৃতীয়ত, পাঠ্যবইয়ের মান উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণকালে এ বিষয়ে সরকারের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন। একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানের চাহিদা পূরণে এর বিকল্প নেই। চতুর্থত, শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ আরও বাড়ানো। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা খাতে অর্থদানের জন্য উৎসাহ প্রদান করা চাই। বর্তমানে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বেসরকারি উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করছি। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিকিৎসা ও প্রকৌশল শিক্ষার জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ সম্পর্কে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এবং তাকে অমূলক বলা যাবে না। সে তুলনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার প্রসার ও মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই। আমাদের দেশে শিক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অনুদানের ঐতিহ্য রয়েছে এবং তা অবশ্যই অনুসরণ হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে এ কাজ সহজ হয়ে যাবে। পঞ্চমত, অর্জিত শিক্ষাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরিবেশ সৃষ্টি। এর সঙ্গে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি জড়িত। আবার এটাও ঠিক, যে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা হচ্ছে তাকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে আর্থ-সামাজিক অবস্থা পাল্টানো সম্ভব হয়। সরকার এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এসব বিষয়ের প্রতি আরও মনোযোগী হবেন_ এটাই প্রত্যাশিত। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাইকে অভিনন্দন।

No comments

Powered by Blogger.