বিরোধী দলের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হোক-বর্ষশুরুর সংসদ অধিবেশন
আমরা বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদটি স্মরণ করে বলব—শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। ইংরেজি বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিএনপি যে সংসদ অধিবেশনে যোগদানের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়নি, সেটা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এখান থেকে একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটতে পারে। আগামী ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আহ্বান করার পর বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছিল।
বিরোধী দলের সরব উপস্থিতি ছাড়া সংসদ যে কার্যকারিতা হারায়, এ বিষয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। অকার্যকর সংসদ শুধু সরকারি দলের জন্য নয়, বিরোধী দলের জন্যও বিপদ। এ বিপদ উত্তরণে বিরোধী দলকে সংসদে যেতে হবে। পাশাপাশি সরকারি দলকে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেন বিরোধী দল সংসদে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
এর আগে বিএনপি বঙ্গভবনে সংলাপে যাওয়ার সম্মতি জানিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও দূর করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বিএনপির নেতিবাচক অবস্থানের আশঙ্কা করছিলেন। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবেই’ সংলাপে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁদের ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটালেন। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির অনুসরণ ও আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের চেষ্টার প্রতি সবুজ সংকেত। তিনি এটাও বলেছেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। আমরা চাই না, তাঁর কোনো উদ্যোগ ব্যর্থ হোক।’ বর্তমান রাজনীতির অচলাবস্থা কাটানোর পথে এটা এক ধাপ অগ্রগতি।
এ পটভূমিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, তাঁরা কখনো সংসদ বর্জন বা সংসদে ফিরে না যাওয়ার কথা বলেননি, তাঁরা শুধু সংসদ অধিবেশনে যাচ্ছেন না। এ মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। এখন দেখতে হবে যে এ ইতিবাচক অবস্থান ফলপ্রসূ করার জন্য সরকারি দল কতটা এগিয়ে আসে।
বিএনপির সাংসদ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিল সংসদে আনুন, আমরা অবশ্যই যাব। তবে আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে, এ বিল উত্থাপন করা হবে।’ সংসদে যাওয়ার জন্য পূর্বশর্ত দেওয়া ঠিক নয়। বরং সংসদে গিয়েই বিরোধী দল তাদের দাবিদাওয়া জানাতে পারে।
সংসদে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়টি উত্থাপন করার জন্য বিএনপির প্রতি সরকারি দল এর আগে একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছে। যদি তারা সেই পুরোনো বক্তব্যের আলোকে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে, তাহলে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। বিএনপির সংসদ অধিবেশনে যোগদানের পথ প্রশস্ত করতে সরকারকেও সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখাতে হবে। এভাবে ইংরেজি নববর্ষের সূচনায় সংসদের একটি বড় অর্জন সাধিত হতে পারে।
বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, ‘ইস্যুভিত্তিক ওয়াকআউট ছাড়া কোনো দল বা জোট সংসদের সেশন বা বৈঠক বর্জন করতে পারবে না।’ ভোটারদের কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়িত্ব বিএনপি কোনোভাবেই খাটো করে দেখতে পারে না। সংসদ অধিবেশনে যোগদান করা বিরোধী দলের ‘সুযোগ’ বা ‘সুবিধা’ নয়, এটা তাদের অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগে তারা নীতিনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে, এটাই প্রত্যাশিত।
No comments