১৪ দলের গণমিছিল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার শপথ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে গণমিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল। মিছিলের পর সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে না যাওয়ার শপথ নিয়েছেন মহাজোটের নেতারা। পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমাবেশে জাতীয় পার্টির নেতারা বক্তব্য দিলেও প্রস্তুতি না থাকায় গণমিছিলে অংশ নেননি। সমাবেশ থেকে একই দাবিতে আগামী ৭ জানুয়ারি সব জেলায় এবং ১১ জানুয়ারি সব উপজেলায়


সমাবেশ-মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড থেকে আসা ১৪ দলের অসংখ্য মিছিলের স্রোত মিশেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ নানা পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। একই দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে স্থাপিত মঞ্চে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সমবেতদের শপথবাক্য পাঠ করান। সমবেত হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় জানান। সমাবেশ শুরুর আগে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ঘরে ঘরে গিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একটা রাজাকার জীবিত থাকতেও ঘরে ফিরব না। ওরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। আর সহ্য করব না।’
১৪ দলের নেতা-কর্মীদের পদচারণে জিরো পয়েন্ট থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, শিশুপার্ক হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। মহানগরের সবকটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সাংসদেরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে আসেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধাদের মিছিলটিও ছিল বিশাল।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধীদের জেলখানা থেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেবেন, এটাই স্বাভাবিক।
উপদেষ্টামণ্ডলীর আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর গোপনে লোক এনে বোমা মেরে ঢাকাকে মিসরের তাহরির স্কয়ার বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা হতে দেয়নি।
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে আরও অভিজ্ঞ আইনজীবীদের বিচার-প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি প্রবীণ আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দাওয়াতের জন্য অপেক্ষা করছেন কেন? আপনাদের দায়বদ্ধতা নেই? অবিলম্বে বিচার-প্রক্রিয়ায় যুক্ত হোন।’
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া চোরাগোপ্তা হামলা করতে পারেন, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনাল বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত, গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার পথ থেকে সরে না এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর জনগণ আপনার বিচার দাবি করবে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ মজিবুল হক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করুন। জাতীয় পার্টির দ্ব্যর্থহীন সমর্থন থাকবে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, দেশে অপরাজনীতি চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার অপরাজনীতির ধারা প্রতিহত করতে হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণতন্ত্রী পার্টির নূরুর রহমান, ন্যাপের এনামুল হক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.