মেলবোর্ন টেস্ট-পেসে পরাভূত ভারত

বার সামনে গ্রায়েম সোয়ান, পেছনে কেভিন পিটারসেন, ম্যাট প্রিয়ররা। দুই যুগ পর অ্যাশেজ ধরে রাখার আনন্দে অস্ট্রেলীয়দের হূদয় বিদীর্ণ করে ‘স্প্রিংলার’ নৃত্যে মেতেছিল ইংলিশরা। এক বছর আগে, ঠিক কালকের দিনটিতেই। এবারও চতুর্থ দিনেই হলো বক্সিং ডে টেস্ট জয়ের উৎসব। তবে এবার জয়োৎসব করল অস্ট্রেলিয়াই। অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলিংয়ে বিধ্বস্ত হয়ে ভারত হারল ১২২ রানে। গত অ্যাশেজে ঘোষিত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলিংয়ের ক্রান্তিকাল।


ম্যাকগ্রা-গিলেস্পি-লিদের উত্তরসূরিদের তুলাধোনা করে ছেড়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংলিশরা। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর ভারতের বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টে ঘোষিত হলো অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলিংয়ের দুর্দান্ত আগামী।
বিশ্বের সেরা বলে বিবেচিত ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দিল মূলত অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সারির পেস আক্রমণ। প্রথম পছন্দের তিন পেসার হ্যারিস-কামিন্স-জনসন চোটের কারণে দলের বাইরে। চোট বাইরে রেখেছে শেন ওয়াটসনকেও। কিন্তু ‘বদলিরা’ কী দারুণভাবেই না নিজেদের মেলে ধরলেন! ভারতের ২০ উইকেটের ১৯টিই নিয়েছেন তিন পেসার প্যাটিনসন-হিলফেনহস-সিডল। মূল তিন পেসার হ্যারিস-জনসন-কামিন্সেরই এখন দলে ঢোকা দায়!
কাল সকালে কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটা পাননি মাইক হাসি, জহির খানের দুর্দান্ত এক আউটসুইঙ্গারে ফিরে যান আগের দিনের সঙ্গে আর ১০ রান যোগ করেই। অস্ট্রেলিয়া তবু ২৯২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে শেষ উইকেট জুটির সৌজন্যে। ৪৩ রানের অমূল্য এক জুটি গড়েন অস্ট্রেলিয়ার ১০ ও ১১ প্যাটিসন-হিলফেনস। পরিকল্পনাহীন বোলিং আর মহেন্দ্র সিং ধোনির বিস্ময়কর রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজানোও যথেষ্টও সাহায্য করেছে এই জুটিকে। প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ (অপরাজিত ৩৭) করার পথে প্যাটিনসন দেখিয়েছেন, যত্ন নিলে তাঁর ব্যাটিংও ভবিষ্যতে দলের সম্পদ হবে।
দুই দলের শরীরী ভাষার পার্থক্যই শেষ পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়েছে ম্যাচের ফলাফলে। শেষ জুটির লড়াইয়ে উজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়া লাঞ্চের আগেই তুলে নেয় বীরেন্দর শেবাগকে। হিলফেনহসের খাটো লেংথের বলটাতে টাইমিং দারুণ হয়েছিল শেবাগের, তবে নিচে রাখতে পারেননি। বুলেটটাকে গালিতে হাতে জমান মাইক হাসি। গম্ভীরের ঘণ্টা খানেকের অস্বস্তিকর উপস্থিতি শেষ হয় দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। প্যাটিনসনের দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গার রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক দিয়ে উপড়ে দেয় স্টাম্প। ১৬১ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র চতুর্থবার দুই ইনিংসেই বোল্ড হলেন দ্রাবিড়। অসাধারণ বছরটার শেষ হলো দৃষ্টিকটুভাবে, এই টেস্টে তিনবার বোল্ড হয়েছেন ‘দ্য ওয়াল’, একবার নো বলে!
মেলবোর্নে ব্যর্থতার ধারা আরেকটু ‘সমৃদ্ধ’ করে প্রিয় ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগের হাতে ক্যাচ দেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। দুই ইনিংসে ৩ রান ৩৬ বলে, এমনিতে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর গড় ৫০ ছুঁই-ছুঁই, কিন্তু মেলবোর্নে ১৪.২৫! ওয়ানডের বড় তারকা বিরাট কোহলি বুঝিয়ে দিলেন, টেস্টের ভাষা বুঝতে এখন পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। ভরসা হয়ে তবু ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। রানআপ শুরু করা প্যাটিনসনকে থামিয়ে হঠাৎই সিডলের হাতে বল তুলে দিলেন ক্লার্ক। প্রথম বলেই গালিতে ক্যাচ। আরও একবার শততম সেঞ্চুরি আর ভারতের জয়ের আশা—দুটিই একসঙ্গে শেষ। ডেভ ওয়ার্নারের অসাধারণ ক্যাচে চা-বিরতির ঠিক ৭০ মিনিট পর শেষ হয় জয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
অল্পের জন্য টানা তিন টেস্টে ৫ উইকেট হয়নি, তবে তৃতীয় টেস্টে দ্বিতীয় ম্যাচসেরা পুরস্কার পেয়েছেন প্যাটিনসন। দেশের বাইরে ভারতের এটি টানা পঞ্চম পরাজয়, টানা পঞ্চম হার এমসিজিতেও। আর গত অস্ট্রেলিয়ার সফর থেকে (২০০৭-০৮) দেশের বাইরে ভারতের ষষ্ঠ সিরিজ শুরু হলো হার দিয়ে! সূত্র: স্টার ক্রিকেট।

৫১
টেন্ডুলকারের টেস্ট সেঞ্চুরি ৫১টি, টেস্ট পরাজয়ের স্বাদও পেলেন ৫১ বার!

No comments

Powered by Blogger.