প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ-প্রথম দিনেই অঘটন

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে এবার বড় দল অনেক। কেউ শক্তিমত্তায় বড়, কেউ নামে বড়, কেউ বাজেটে বড়। এত সব বড় দলের ভিড়ে কাদের হারটা যে অঘটন, বলা মুশকিল। তবে কাল প্রথম দিনের খেলায় হেরে গেছে নামের দিক দিয়ে বড় দুই দল আবাহনী-মোহামেডান। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিন মৌসুম পর প্রিমিয়ার লিগে ফেরা ব্রাদার্সের কাছে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর ২৯ রানের হার অঘটনই। ফতুল্লায় বাজেট এবং শক্তিমত্তায় বড় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৫


উইকেটে হারিয়েছে আরেক ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডানকে। বিকেএসপিতে দিনের অন্য ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরকে একই ব্যবধানে হারিয়েছে গাজী ট্যাংক।
ব্রাদার্সের ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্য ছিল মাত্র ২২৫ রান। ভিআইপি গ্যালারি থেকে সারাক্ষণই শ্লীল-অশ্লীল ভাষায় চিৎকার করে আম্পায়ার ও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের চাপে রাখা ২৫-৩০ জন সমর্থক—মিরপুরে আবাহনীর পক্ষে সবই ছিল। তার পরও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২২ বল বাকি থাকতেই বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা অলআউট ১৯৫ রানে। ৬৩ রানে ৪ উইকেট পড়লেও আবাহনীর আশা জাগিয়ে রেখেছিল পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট জুটি। পঞ্চম উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যান মিঠুন মানহাস (৫০) আর ফরহাদ হোসেন (২৯) করেন ৪৯। দলের ১১২ রানে মিঠুন আউট হওয়ার পর ষষ্ঠ উইকেটে ইলিয়াস সানির (২৬*) সঙ্গে ফরহাদের জুটিতে আসে আরও ৪১ রান। কিন্তু ১৫৩ রানে ফরহাদের বিদায়ের পর মাত্র ৪২ রানেই পড়ে যায় আবাহনীর শেষ ৫ উইকেট।
এর আগে নাজিমউদ্দিন (৪২) ও নাফিস ইকবালের (২২) ৬১ রানের ওপেনিং জুটির পর ব্রাদার্সকে জেতার মতো রান এনে দেন মূলত তাপস ঘোষ আর আবদুর রাজ্জাক। ৪৩.৩ ওভারে ১৬৭ রানে ৭ উইকেট পড়েছিল ব্রাদার্সের। তাপস-রাজ্জাক মিলে বাকি ৬ ওভার ৩ বলে যোগ করেন ৫৭। ৬৪ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসে তিন বাউন্ডারির সঙ্গে এক ছক্কা তাপসের। এক ছক্কা আর পাঁচ বাউন্ডারিতে রাজ্জাক অপরাজিত ৩৮ রান করেছেন ২৭ বলে। পরে বল হাতে এই দুই বাঁহাতি স্পিনারই নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। এর মধ্যে নিজের বলে তাপসের নেওয়া মিঠুনের ক্যাচটা এক কথায় দুর্দান্ত।
বিকেএসপিতে গতবারের রানার্সআপ মোহামেডানের ২০১ রানে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান উমর আমিনের অবদানই বেশি। ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৫৯ রান করেছেন, ৪৪ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর রাজিন সালেহর (৩২) সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেছেন ৮৫ রান। জবাবে শেখ জামালের দুই ওপেনারই বড় কাজটা করে দিয়েছেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যান দীপক জুনের (৮০) সঙ্গে ১৩১ রানের ওপেনিং জুটি হয়েছে শামসুর রহমানের (৬০)। তবে মোহামেডানের রান আরেকটু বেশি হলে বিপদেও পড়তে হতে পারত শেখ জামালকে। ১৩১ রানে দীপক আউট, এরপর ৩৬ রানেই পড়ে যায় তাদের ৫ উইকেট। সেই বিপর্যয়ে বাঁধ দিয়ে শ্রীলঙ্কার জিহান মুবারক (২০*) ও মাহমুদুল হাসানই (১৬*) জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দলকে।
বিকেএসপিতে প্রাইম দোলেশ্বর ব্যাটসম্যানদের সামনে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন গাজী ট্যাংকের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ সামি। মাত্র ৩১ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পথে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান কামরান আকমল (৫২) ও নাদিফ চৌধুরীর (৭২) ফিফটির সৌজন্যে তার পরও ৯ উইকেটে ২৩২ রান করে প্রাইম দোলেশ্বর। তবে গাজী ট্যাংককে হারানোর জন্য তা যথেষ্ট হয়নি। পেসার নাজমুল হোসেনের করা ইনিংসের পঞ্চম বলেই ওপেনার রনি তালুকদারকে হারালেও আরেক ওপেনার আসিফ আহমেদ (৭৪) ও আইয়ুব দোগারের (৫৬) ফিফটিতে ৯ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় গতবার তৃতীয় হওয়া গাজী ট্যাংক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
 আবাহনী-ব্রাদার্স
ব্রাদার্স: ৫০ ওভারে ২২৪/৭ (তাপস ঘোষ ৪৭*, নাজিমউদ্দিন ৪২, রাজ্জাক ৩৮*, নাফিস ২২, আফতাব ২২, ধীমান ২২; সাকলাইন ২/২১, মাহমুদউল্লাহ ২/৩৫)। আবাহনী: ৪৬.২ ওভারে ১৯৫ (মিঠুন মানহাস ৫০, ফরহাদ হোসেন ২৯, নারিন্দার ২৭, ইলিয়াস ২৬*, আনামুল ২৫; তুষার ২/২১, তাপস ঘোষ ২/২৫, রাজ্জাক ২/২৬, সোহেল তানভির ২/৩৫)। ফল: ব্রাদার্স ২৯ রানে জয়ী।
 মোহামেডান-শেখ জামাল
মোহামেডান: ৪৯.৪ ওভারে ২০১ (উমর আমিন ৫৯, রাজিন ৩২, দেলোয়ার ২৬*, হামিদুল ২৪, ইমতিয়াজ ২০; ডলার ৩/৫৬, আরাফাত ২/২৭, সোহরাওয়ার্দী ২/৩৬)। শেখ জামাল: ৪৭.২ ওভারে ২০৪/৫ (দীপক ৮০, শামসুর ৬০, জিহান মুবারক ২০*; হাম্মাদ আজম ২/৩২, অমিতাভ ২/৪২)। ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ৫ উইকেটে জয়ী।
 গাজী ট্যাংক-প্রাইম দোলেশ্বর
দোলেশ্বর: ৫০ ওভারে ২৩২/৯ (নাদিফ ৭২, কামরান আকমল ৫২, সগীর ২৪, মিজানুর ২০; মোহাম্মদ সামি ৪/৩১)। গাজী ট্যাংক: ৪৮.৩ ওভারে ২৩৩/৫ (আসিফ ৭৪, আইয়ুব দোগার ৫৬, নাসির ৪৬, অলক ৩২*; নাজমুল ২/৩৮)। ফল: গাজী ট্যাংক ৫ উইকেটে জয়ী।

No comments

Powered by Blogger.