আইনের আওতায় আসছে এমএলএম ব্যবসা by কিসমত খোন্দকার

প্রতারণামূলক যে কোনো ব্যবসা বন্ধ করার পাশাপাশি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসাকে আইনের আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ডিরেক্ট সেল আইন-২০১১ নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তোলা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে। প্রতারণামূলক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি ও জরিমানার বিধান রাখা


হয়েছে নতুন এ আইনে। যে সব এমএলএম কোম্পানি বর্তমানে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ব্যবসা করছে আইনটি অনুমোদনের পর তাদের নতুন আইনের আওতায় লাইসেন্স নিতে হবে। এছাড়াও ডিরেক্ট সেল পদ্ধতিতে ২১টি পণ্যের ব্যবসা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইনের অধীনে এমএলএম কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আলাদা একটি পরিদফতর গঠন করা হবে। সূত্র জানায়, এর আগে গত নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিরেক্ট সেল আইন-২০১১-এর খসড়া চূড়ান্ত করে। আইনের খসড়া প্রণয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আইনের খসড়াটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেটিং গ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরুর আগে মন্ত্রিপরিষদের নীতিগত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এরপর তা আইনে রূপান্তরিত করতে জাতীয় সংসদের পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৭০টি প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধন নিয়ে এমএলএম ব্যবসা করছে। দেশে এমএলএম ব্যবসায় নিয়োজিত অধিকাংশ কোম্পানির নানা ধরনের প্রতারণামূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে সরকার ২০১০ সাল থেকে এমএলএম ব্যবসার জন্য নিবন্ধন কাজ বন্ধ করে। নিবন্ধিত কোম্পানি ছাড়াও অবৈধ উপায়েও অনেক কোম্পানি সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সব ভঁূইফোড় কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ছে। এদের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার জন্যই সরকার ডিরেক্ট সেল (এমএলএম) আইন-২০১১ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
সূত্র জানায়, খসড়া আইনে ১৩টি অধ্যায়ে মোট ৫০টি ধারা এবং ২টি তফসিল রয়েছে। খসড়া আইনে বিভিন্ন এমএলএম ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও বিভিন্ন অপরাধ জামিন অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতারণামূলক যে কোনো ধরনের ব্যবসা বন্ধ করতে ডিরেক্ট সেল (এমএলএম) আইনের খসড়া তৈরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইসিটি, আইসিবি, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টকসহ বেশ ক'টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশ পর্যালোচনা করে খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনে পণ্যের গায়ে মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমান গুনতে হবে। কেউ পণ্যের মান ও দাম নিয়ে মিথ্যা ঘোষণা দিলে তার বিরুদ্ধে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের জন্য আইনে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেউ অযৌক্তিক দাম বাড়ালে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করলে অনধিক ৩ বছরের শাস্তি ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলে তাকে এক বছর থেকে তিন বছর কারাভোগ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। নতুন আইনে সব অপরাধ জামিন অযোগ্য, আমলযোগ্য এবং আপসযোগ্য। ম্যাজিস্ট্রেটের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে সেশন জজ আদালতে আপিলের বিধান রাখা হয়েছে।
ডিরেক্ট সেল পদ্ধতিতে ২১টি পণ্য ব্যবসা বা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য কবে এমন পণ্য বা সেবা, স্থাবর সম্পত্তি যেমন, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান বা অফিস স্পেস, গাছ ইত্যাদি। সমবায় পদ্ধতির খামার বা সমিতি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কমিশন বা বোনাস হিসেবে কোন ধরনের শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, সব ধরনের সঞ্চয়পত্র, বোনাস স্কিম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলি বণ্টন, লটারির টিকিট এগুলোও রয়েছে এর মধ্যে।
খসড়া আইনে প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, পারদ, হাইড্রো কার্বনস, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপন্নকারী পদার্থ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, এসিড ও স্পর্শকাতর রাসায়নিক পদার্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পদার্থ, ধাতব মুদ্রা, মাদকদ্রব্য ও তামাক জাতীয় দ্রব্য, নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ, খাদ্যে ব্যবহার্য ক্ষতিকর রং, ভেজাল মিশ্রিত দ্রব্য/পণ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ, অচল, বিষাক্ত ও নষ্ট পণ্য, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ও বিদেশ থেকে চোরাই পথে আসা পণ্য, অশ্লীল ছবির ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি, রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী বা ধর্ম বিকৃতকারী বই, প্রচারপত্র, ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি এবং সরকার কর্তৃক বা আইন দ্বারা বিক্রয় বা সরবরাহ নিষিদ্ধকৃত অন্য যে কোনো পণ্যের ব্যবসা বা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.