যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে তারা এসব করছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, সমগ্র বিশ্ব যখন বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে দেখছে, তখন একটি রাজনৈতিক দল বোমাবাজি, গাড়িতে অগি্নসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করছে। এই দলটি ক্ষমতায় থেকে দেশকে কিছু দিতে পারেনি। ক্ষমতাকে তারা নিজেদের ভোগ-বিলাসে ব্যবহার করেছে। অর্থ কামিয়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধী আর দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে এসব করছে তারা। কিন্তু দেশের যুব সমাজসহ আপামর
জনসাধারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় জনগণের কোনো দায় পড়েনি। আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি ধরে রাখতে চাই। এ জন্য ধৈর্য ধরছি। গতকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, এফবিসিসিআইর পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা, কয়েকজন সচিব, দেশের ৬৮টি চেম্বার ও ২৯০টি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্যের পর এসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখছে ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে এ খাত কীভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ করে বলেন, কিসের জন্য তারা এসব করছে। তিনি বলেন, আমরাও হেরেছি। কিন্তু জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিতে চাইনি। যেটা অতীতে ছিল। জনগণ যাকে চায় তাকে ভোট দেবে। তারা দেশের অর্থ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে তা ধরাও পড়েছে। এখন বিদেশিরাই এসে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। অরফানেজের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অথচ তাদের চোর বলা যাবে না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন। কেউ অপরাধ না করলে তার শাস্তি হবে না। তারা এই অপরাধীদের বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার তা হতে দেবে না। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখেছেন। আমি জোর করেই বলতে পারি, অন্য যে কোনো সরকারের তুলনায় আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ব্যবসা করতে আসেনি। আওয়ামী লীগ ব্যবসা, বিনিয়োগকে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, 'আসুন, সকলে মিলে দেশটাকে সুখী, সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে তুলি।'
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের শিল্প-কারখানা সবই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঙ্গু সন্তানকে যেভাবে লালন-পালন করা হয় সেভাবেই দেশের শিল্প খাতকে সচল করেছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এসএমই খাতের গুরুত্ব রয়েছে, স্বাধীনতার পরপরই তা তিনি অনুধাবন করেছিলেন। এ জন্য সংবিধানেও এসএমই খাতটিকে সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় অর্থনৈতিক নীতিমালায়ও এসএমই খাত গুরুত্ব পেয়েছে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও তা পেয়েছিল। ২০১০ সালে সরকার একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিল্পনীতিতে ২১টি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি এসএমই শিল্প। তিনি বলেন, শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের সবখানে শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেবে। বর্তমান সরকার চায় সারাদেশে শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য সরকার ক্লাস্টারভিত্তিক জরিপ করছে। কোথায়, কী ধরনের কাঁচামাল পাওয়া যায় বা কী ধরনের শিল্প গড়ে তোলা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার ৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমি পাওয়া একটি সমস্যা। তার মধ্যেও সরকার জমির ব্যবস্থা করছে। তিনি দেশের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দেন। এতে আমদানি কমার পাশপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে এসএমই খাতে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন কার্যক্রমের আওতায় স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। বিসিক শিল্প নগরীতেও প্লট বরাদ্দের বেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না নারী উদ্যোক্তারা। এ জন্য সরকার জয়িতা নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।
সরকারের ব্যাংক ঋণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার ঘি খাচ্ছে না। তা দেশের সড়ক ও সেতু নির্মাণের মতো অবকাঠামো উন্নয়নেই ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফল ব্যবসায়ীসহ আপামর জনসাধারণ ভোগ করছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, সরকারি বিদ্যুৎ শিল্পে ব্যবহার করুন, আর অফিসে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করুন। এতে সরকারের ব্যয় কম হবে। আপনারাও বেশি বিদ্যুৎ পাবেন। ব্যবসায়ীদের পণ্যের মান ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধোঁকা দিতে গিয়ে নিজেরা ধোঁকায় পড়বেন না। সামান্য বেশি আয় করতে গিয়ে পুরো দেশের বাজার নষ্ট করবেন না। যখন পণ্য উৎপাদন করবেন তার মান ঠিক রাখবেন। মুনাফার জন্য মূল্যবৃদ্ধি, রফতানি বাজার হারানোর মতো কাজ করবেন না। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনেতিক মন্দার মধ্যেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। দেশের ব্যবসায়ীরা চাইলেও সরকারকে ঋণ দিতে পারেন। সরকার এখন কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে যাচ্ছে। নিজেরা গ্যাস উত্তোলন করছে। এসব কাজে ব্যবসায়ীরা আসতে পারেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের অর্থনীতি সব সময় সংকটের মধ্য দিয়েই চলে আসছে। রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয় সবই চাহিদার তুলনায় কম। তিনি বলেন, আমরা অলৌকিকভাবে মঙ্গা দূর করেছি। যেভাবে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা হয়েছে তা অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। তিনি বলেন, অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাজার সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সমস্যা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। এ জন্য তিনি নারীদের ব্যবস্থাপনায় আলাদা একটি এসএমই ব্যাংক স্থাপনের সুপারিশ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, এসএমই খাতের সম্প্রসারণ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। দরিদ্রদের আয় বাড়বে। এতে সমগ্র অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ২৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সরকারকে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রতিবছর আরও ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলে আগামী তিন বছরে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা করতে হলে ভর্তুকি আরও বাড়বে। এ. কে. আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারের ভর্তুকির বোঝা বাড়াতে চান না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেলে, ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে না হলে অতিরিক্ত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিষয়টি সরকারকে আলাদা করে ভাবতে হবে। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে। অপরদিকে বিলাস পণ্যের আমদানি বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ কমাতে হবে। শিল্প খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত অর্থবছরে ৫৩০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া অথবা পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনা করলে সরকারের লোকসান কমবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিক ভালো। সেখানে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় সবই বাড়ছে। এর মূল কারণ বিসিকের অবকাঠামো সুবিধা। অর্থাৎ অবকাঠামোসহ সুবিধা থাকলে সব জায়গায়ই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এ জন্য তিনি অবকাঠামো উন্নয়নের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। তিনি সিলেট অঞ্চলে তিনটি এবং দেশের অন্যান্য স্থানে প্রয়োজনীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দাবি জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা তুলে ধরেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার স্টল পরিদর্শন করেন। এবারের মেলায় মোট ১৩১টি স্টল ও ১৯টি প্যাভেলিয়ন থাকবে। এর মধ্যে ৬৪টি উদ্যোক্তা এবং ৩৪টি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলা চলবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, এফবিসিসিআইর পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা, কয়েকজন সচিব, দেশের ৬৮টি চেম্বার ও ২৯০টি ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, এসএমই ও নারী উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্যের পর এসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখছে ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে এ খাত কীভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশ করে বলেন, কিসের জন্য তারা এসব করছে। তিনি বলেন, আমরাও হেরেছি। কিন্তু জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিতে চাইনি। যেটা অতীতে ছিল। জনগণ যাকে চায় তাকে ভোট দেবে। তারা দেশের অর্থ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে তা ধরাও পড়েছে। এখন বিদেশিরাই এসে তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। অরফানেজের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অথচ তাদের চোর বলা যাবে না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন। কেউ অপরাধ না করলে তার শাস্তি হবে না। তারা এই অপরাধীদের বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার তা হতে দেবে না। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখেছেন। আমি জোর করেই বলতে পারি, অন্য যে কোনো সরকারের তুলনায় আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ব্যবসা করতে আসেনি। আওয়ামী লীগ ব্যবসা, বিনিয়োগকে সহযোগিতা করতে চায়। তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, 'আসুন, সকলে মিলে দেশটাকে সুখী, সমৃদ্ধিশালী হিসেবে গড়ে তুলি।'
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের শিল্প-কারখানা সবই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঙ্গু সন্তানকে যেভাবে লালন-পালন করা হয় সেভাবেই দেশের শিল্প খাতকে সচল করেছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে এসএমই খাতের গুরুত্ব রয়েছে, স্বাধীনতার পরপরই তা তিনি অনুধাবন করেছিলেন। এ জন্য সংবিধানেও এসএমই খাতটিকে সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় অর্থনৈতিক নীতিমালায়ও এসএমই খাত গুরুত্ব পেয়েছে। বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও তা পেয়েছিল। ২০১০ সালে সরকার একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছে। ওই শিল্পনীতিতে ২১টি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি এসএমই শিল্প। তিনি বলেন, শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের সবখানে শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেবে। বর্তমান সরকার চায় সারাদেশে শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য সরকার ক্লাস্টারভিত্তিক জরিপ করছে। কোথায়, কী ধরনের কাঁচামাল পাওয়া যায় বা কী ধরনের শিল্প গড়ে তোলা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার ৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমি পাওয়া একটি সমস্যা। তার মধ্যেও সরকার জমির ব্যবস্থা করছে। তিনি দেশের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের পরামর্শ দেন। এতে আমদানি কমার পাশপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে এসএমই খাতে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন কার্যক্রমের আওতায় স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। বিসিক শিল্প নগরীতেও প্লট বরাদ্দের বেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না নারী উদ্যোক্তারা। এ জন্য সরকার জয়িতা নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে।
সরকারের ব্যাংক ঋণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার ঘি খাচ্ছে না। তা দেশের সড়ক ও সেতু নির্মাণের মতো অবকাঠামো উন্নয়নেই ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফল ব্যবসায়ীসহ আপামর জনসাধারণ ভোগ করছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, সরকারি বিদ্যুৎ শিল্পে ব্যবহার করুন, আর অফিসে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করুন। এতে সরকারের ব্যয় কম হবে। আপনারাও বেশি বিদ্যুৎ পাবেন। ব্যবসায়ীদের পণ্যের মান ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধোঁকা দিতে গিয়ে নিজেরা ধোঁকায় পড়বেন না। সামান্য বেশি আয় করতে গিয়ে পুরো দেশের বাজার নষ্ট করবেন না। যখন পণ্য উৎপাদন করবেন তার মান ঠিক রাখবেন। মুনাফার জন্য মূল্যবৃদ্ধি, রফতানি বাজার হারানোর মতো কাজ করবেন না। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনেতিক মন্দার মধ্যেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। দেশের ব্যবসায়ীরা চাইলেও সরকারকে ঋণ দিতে পারেন। সরকার এখন কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে যাচ্ছে। নিজেরা গ্যাস উত্তোলন করছে। এসব কাজে ব্যবসায়ীরা আসতে পারেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের অর্থনীতি সব সময় সংকটের মধ্য দিয়েই চলে আসছে। রাজস্ব আয়, বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয় সবই চাহিদার তুলনায় কম। তিনি বলেন, আমরা অলৌকিকভাবে মঙ্গা দূর করেছি। যেভাবে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা হয়েছে তা অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। তিনি বলেন, অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাজার সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সমস্যা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। এ জন্য তিনি নারীদের ব্যবস্থাপনায় আলাদা একটি এসএমই ব্যাংক স্থাপনের সুপারিশ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, এসএমই খাতের সম্প্রসারণ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। দরিদ্রদের আয় বাড়বে। এতে সমগ্র অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ২৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সরকারকে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রতিবছর আরও ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলে আগামী তিন বছরে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা করতে হলে ভর্তুকি আরও বাড়বে। এ. কে. আজাদ বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারের ভর্তুকির বোঝা বাড়াতে চান না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেলে, ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে না হলে অতিরিক্ত দাম দিয়ে বিদ্যুৎ কিনবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিষয়টি সরকারকে আলাদা করে ভাবতে হবে। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে। অপরদিকে বিলাস পণ্যের আমদানি বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ কমাতে হবে। শিল্প খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত অর্থবছরে ৫৩০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া অথবা পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনা করলে সরকারের লোকসান কমবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিক ভালো। সেখানে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় সবই বাড়ছে। এর মূল কারণ বিসিকের অবকাঠামো সুবিধা। অর্থাৎ অবকাঠামোসহ সুবিধা থাকলে সব জায়গায়ই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এ জন্য তিনি অবকাঠামো উন্নয়নের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। তিনি সিলেট অঞ্চলে তিনটি এবং দেশের অন্যান্য স্থানে প্রয়োজনীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দাবি জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা তুলে ধরেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার স্টল পরিদর্শন করেন। এবারের মেলায় মোট ১৩১টি স্টল ও ১৯টি প্যাভেলিয়ন থাকবে। এর মধ্যে ৬৪টি উদ্যোক্তা এবং ৩৪টি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলা চলবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
No comments