তিনটি কয়লাভিত্তিক, একটি সৌরশক্তির-চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি
বেসরকারি খাতের দুটি কোম্পানির সঙ্গে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি অনুস্বাক্ষর ও একটি সৌর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুৎ ভবনে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। মোট এক হাজার ৮৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র তিনটি স্থাপন করবে ওরিয়ন গ্রুপ (লংকিং ওরিয়ন যৌথ উদ্যোগ)। আর ১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে
সোলারিয়াম পাওয়ার লিমিটেড। দেশে এই প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে (আইপিপি) কয়লাভিত্তিক ও সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হলো।
পিডিবির সচিব আজিজুল ইসলাম, ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম এবং সোলারিয়াম পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আবেদীন নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কেন্দ্র তিনটি স্থাপনে কবে নাগাদ চূড়ান্ত চুক্তি হতে পারে জানতে চাইলে সালমান ওবায়দুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পিডিবি তাঁদের বলেছে, অনুস্বাক্ষরিত চুক্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন (ভেটিং) পেতে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।
কয়লাভিত্তিক ৫২২ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র হবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটি উৎপাদনে আসতে ৪৫ মাস সময় লাগবে। এই কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট (এক কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম হবে ৪ দশমিক ০৯৫ টাকা।
এ ছাড়া খুলনার লবণচোরা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রতিটি ২৮২ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিন বছরের মধ্যে এই দুটি কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে তিন টাকা ৭৯ পয়সা। খুলনা কেন্দ্রের তিন টাকা ৮৮ পয়সা। কেন্দ্রগুলোর জন্য উদ্যোক্তা কোম্পানিই কয়লা আমদানি করবে।
সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক ওই তিনটি কেন্দ্রের বিদ্যুতের যে দাম ধরা হয়েছে, তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। পিডিবি এবং ভারতের এনটিপিসি বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২৬ মেগাওয়াটের যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি স্থাপনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, সেটির প্রস্তাবিত দাম এর প্রায় দ্বিগুণ।
সৌর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হবে ময়মনসিংহের ফুলপুরে। চুক্তি অনুযায়ী ২৪ মাসের মধ্যে এ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। এ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হয়েছে সাড়ে পাঁচ টাকা। এই দামের ব্যাপারেও সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি সূত্র বিস্ময় প্রকাশ করেছে। তাঁরা বলেন, সৌর তাপবিদ্যুৎ (সোলার থারমাল পাওয়ার) উৎপাদিত হয় সূর্য থেকে তাপ নিয়ে। বাংলাদেশে সূর্যের তাপ যে পরিমাণ পাওয়া যায় তাতে এই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় সাড়ে পাঁচ টাকার দ্বিগুণের বেশি হওয়ার কথা।
গতকাল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম বলেন, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র তিনটি নির্মাণে ১০৪ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে। কেন্দ্র তিনটির জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইতিমধ্যে তাঁরা জমি কিনেছেন।
সোলারিয়াম পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আবেদিন বলেন, সূর্যের তাপনির্ভর কেন্দ্রটি স্থাপনে ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
চুক্তি সইয়ের আগে এই উদ্যোগকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, কয়লাকে মূল জ্বালানি ধরে ২০১৪ সালের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে এ কেন্দ্রগুলো স্থাপনের চুক্তি করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎসচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, পিডিবির চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত ৪৮টি চুক্তির অধীনে মোট ৫২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলোর সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ছয় হাজার ৪০৩ মেগাওয়াট। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি কেন্দ্র চালু হয়েছে। চলতি মাসেই আরও ২৫৫ মেগাওয়াট চালু হওয়ার কথা। এ ছাড়া, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া এই সময়ে ৯৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
No comments