শীতের তীব্রতা আরও দু-এক দিন থাকবে-শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা বেড়েছে

কুয়াশার ঘেরাটোপ আর তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় কুয়াশার আবরণ সূর্যকে আড়াল করে রাখছে। আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, কয়েক বছরে দেশে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা বেড়েছে। দিনের তাপমাত্রা এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম আছে। তাই আজ বুধবারও শীতের তীব্রতা একই থাকবে। আগামী দু-এক দিনের আগে শীতের দাপট কমছে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ সূর্যের হাসি


অল্প কিছুক্ষণের জন্য দেখা দিলেও বেলা গড়াতেই কুয়াশার চাদরে তা ঢাকা পড়ে। আবহাওয়াবিদেরা বলেছেন, ডিসেম্বরের মাঝপথে শুরু হওয়া এই শৈত্যপ্রবাহ দেশের আবহাওয়ার জন্য নতুন ইঙ্গিত দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া আর আগের মতো আচরণ করছে না। শৈত্যপ্রবাহ ও দাবদাহের সংখ্যা বেড়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের কাছে থাকা দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯০০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত দেশে বছরে গড়ে তিনটি শৈত্যপ্রবাহের দেখা মিলত। কয়েক বছর ধরে শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা বেড়ে ছয়টি হয়েছে। ৬০ বছর আগে সাধারণত জানুয়ারি থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ত এবং শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতো। এখন তা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থেমে থেমে চলছে।
আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসের শেষ দিকে ও জানুয়ারি মাসের শুরুতে এবং ফেব্রুয়ারিতে আরও চার থেকে ছয়টি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে, শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা বাড়লেও দেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ১৯৫০ সালে দেশে বছরে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১০ সালে গড় তাপমাত্রা বেড়ে ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। তবে শীতকালে ১০ থেকে ১৫ দিন প্রবল শীত থাকছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা জার্মান ওয়াচের হিসাবে, ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আবহাওয়ার চরম রূপ দেখা গেছে বেশি। এই সময়ে বাংলাদেশ মোট ২৫১ বার চরম আবহাওয়া অর্থাৎ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, শৈত্যপ্রবাহ, দাবদাহের মুখে পড়েছে। এতে সাত হাজার ৮১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেল (আইপিসিসি) চলতি মাসে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের আবহাওয়া আরও চরম হয়ে উঠবে।
সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক আবদুল মান্নান অবশ্য এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া, জলাভূমি ও গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াকেও দায়ী করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত ৬০ বছরের আবহাওয়ার সঙ্গে এর আগের ৬০ বছরের তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, আবহাওয়া ধীরে ধীরে চরম হয়ে উঠছে।
শীতার্ত মানুষের জন্য খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে তিন লাখ কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৯ দশমিক ২ এবং ১৭ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

No comments

Powered by Blogger.