যে কথা যায় না বলা-ভ্রু কুঁচকে লেখা পড়বেন না
‘নারীর সমান অধিকার’ কথাটাকে অনেকে একটা উগ্র বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে। যাদের এ ধরনের মানসিকতা আছে,তাদের বলি—দয়া করে ভ্রু কুঁচকে রেখেআমার এ লেখাটা পড়বেন না।কারণ, আমি নির্দিষ্ট করে নারীর সমান অধিকারের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলতে আসিনি বরং অনেক সময়পুরুষেরা ‘নারীর সমান অধিকার’ কথাটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময় নারীদের সঙ্গে যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, তারই বয়ান করতে এসেছি। কিছুদিন আগে বাসে
উঠে বসার জায়গা না পেয়ে আমরা কয়েকজন ছাত্রীদাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রায়বাসেই চালকের আসনের পেছনে দু-তিনজন যাত্রী বসার জায়গা থাকে, যেখানে সচরাচর নারীরাই বসে থাকেন। তো বাসের সেই সিটটাতে আগে থেকেই দুজন পুরুষ বসা ছিলেন। তবে সামনে চার-পাঁচজন মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় তারা দুজন একটু উসখুস করছিলেন। তবে উঠে যাননি, বরং উসখুস ভাবটা কাটাতেই কি না জানি না, হঠাৎ তাদের একজন পুরুষ পাশের জনকে কিছুটা কৈফিয়তের ভঙ্গিতেই বলে উঠলেন, ‘আগে মেয়েদের বাসে সিট ছেড়ে দিতাম, কিন্তু ওরা যখন থেকে সমান অধিকারের কথা বলে, তখন থেকে আর সিট ছাড়ি না। সমান অধিকার চাও, তো থাকো দাঁড়িয়ে!’ তাঁর এ কথায় পাশে বসে থাকা যুবকটিও মাথা নেড়ে সায় দিল।
খুবই অবাক হলাম। আশ্চর্য! আমরা তো কেউ তাঁদের সিট ছেড়ে দিতে বলিনি, অথবা তাঁদের ভেতর অপরাধবোধ যেন কাজ করে, সে রকম কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাইনি। তাহলে অকারণে এ ধরনের অপমানসূচক কথা বলে ‘কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেওয়া কেন? দুপুরের অসহ্য গরম আর ধুলোবালিতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসে দাঁড়িয়ে থাকতেই কষ্ট হচ্ছিল। তার ওপর এ ধরনের কথা তো কাঁটা ঘায়ে নুন জল দেওয়া।নারীর সমান অধিকার কথাটা নিয়ে এখনো অনেকের মনে দ্বিধা রয়েছে। প্রায়ই দেখা যায়, সমান অধিকার চাইতে গিয়েপুরুষের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তাই আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়অনেক নারী সম-অধিকার চাওয়ার চেয়ে পুরুষের দয়ার বা করুণার পাত্রী হয়েই তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যেপৌঁছাতে চেষ্টা করেন।
মুনিরা প্রীতু
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments