পানির জন্য যুদ্ধ!
একটু পানি কোথায় পাই বলুন তো?' এমন প্রশ্ন খুব দ্রুতই চলে আসবে মানুষের সামনে। কারণ, পৃথিবীতে জলসম্পদ খুবই সীমিত। এ জরুরি বিষয়টা আমাদের অনেকেরই অবশ্য মাথায় ঢোকে না। ফলে যা হওয়ার, তাইহচ্ছে।প্রয়োজনের তুলনায় আমরা শুধু বেশি পানি ব্যবহারই করি না, অপব্যবহারও করে থাকি। এভাবে পানি ব্যবহার করতে থাকলে তা সত্যিই একদিন ফুরিয়ে যাবে। আমরা অনেকে ভাবি, পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। সুতরাং পানির ঘাটত
হবে কেন? কিন্তু এটা আমাদের মোটেও ধারণার মধ্যে নেই যে, এ পানির বেশিরভাগই লবণাক্ত। মোট পানির মাত্র আড়াই শতাংশ ব্যবহার উপযোগী। আবার এই সীমিত পানিরও দুই-তৃতীয়াংশ আটকে আছে বরফ আকারে; কোথাও পাহাড়ে আবার কোথাও হিমবাহে। তারপর যা বাকি রইল, তার ২০ শতাংশ আবার অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়, যেখানে ইচ্ছা করলেই মানুষের চটজলদি পেঁৗছানোর উপায় নেই। পানি নিয়মিত টেনে তোলার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলেছেন, আগামী ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশ্বে ব্যবহার উপযোগী পানির পরিমাণ অনেক কমে যাবে।
যা-ই হোক, মানবজীবনে পানির যেহেতু কোনো বিকল্প নেই, তাই অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। পানির ভাণ্ডারের ক্ষয় রুখতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করার চেষ্টা করতে হবে। বৃষ্টি বা পুকুরের পানি কীভাবে ধরে রেখে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়েও অবিলম্বে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার বিশেষ পদ্ধতিকে বলা হয় 'রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং'। পুকুর বা বিভিন্ন জলশয়ের পানি বিশুদ্ধ রাখতে কাপড় কাচা, গোসল করা, বাসন-কোসন মাজা বা গবাদি পশুকে গোসল করানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বৃষ্টির পানি বা পুকুরের পানি ব্যবহার করার সুফল হলো, এ পানি আর্সেনিকমুক্ত। মানুষের সচেতনতার অভাবে অনেক সময় দেখা যায়, মৃত কোনো পশুকে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আবার কলকারখানার সব বর্জ্য নদীর পানিতে ফেলা হয়। ফলে এ পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
পানি থাকতেই পানির মর্যাদা না বুঝলে আগামী দিনে সভ্যতার ভয়ঙ্কর সংকট যে দেখা দেবে_ ব্যাপক গবেষণায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এমন দিন আসবে, যখন কাছে নতজানু হয়ে মানুষ বলতে বাধ্য হবে_ 'প্রকৃতি, এক ফোঁটা হলেও জল দাও।' প্রকৃতি তখন অসহায় হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তার দিকে তাকালে হয়ত দেখা যাবে ক্রোধ আর ক্রোধ! কারণ, আমরাই তো এই পানি সংকটের জন্য দায়ী। পানি সংকটের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে যে সব নির্দেশ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো_
ক. পানি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরবরাহ পরিচালনা ব্যবস্থায় স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা।
খ. পানিসম্পদ পরিচালনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের পরিকল্পনা যুক্ত করা।
গ. পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারজনিত পদ্ধতি সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে যথাযথভাবে অবহিত করানো এবং পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের যুক্ত করা। সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী, স্বেচ্ছাসেবী এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
ঘ. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের মতো নির্দিষ্ট মূল্যে পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা। দৈনন্দিন কাজ এবং শিল্প-কালকারখানায় ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা পানির মূল্য নির্ধারণ করা। পানি দূষণের কারণগুলো চিহ্নিত করে দুষণকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পানির অভাবে সভ্যতাই বিলুপ্ত হতে পারে। তাই বেঁচে থাকতে হলে আমাদের পানির জন্য লড়াই করতে হবে। আজ যে যুদ্ধ তেলের জন্য, আগামীতে সে যুদ্ধ হবে পানির জন্য! আর যাতে তা না হয়, তার জন্য এখন থেকেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
ফয়সাল আহমেদ
No comments