কিমের ‘রহস্যময়’ কিছু তথ্য
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-ইলের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে গতকাল স্তম্ভিত হয়ে যায় দেশবাসী। ‘প্রিয় নেতা’র মৃত্যুতে কেঁদেছে উত্তর কোরিয়া, কেঁদেছে মানুষ। ১৭ ডিসেম্বর রেল ভ্রমণের সময় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। বিশ্ববাসী তাঁকে একরোখা একনায়ক বলে জানলেও, তাঁর মৃত্যুর পর দেখা গেল দেশবাসী তাঁকে কতটা ভালোবাসত।
এত সব কিছুর পরও তিনি যেন ‘রহস্যময়’ জীবনযাপন করতেন। তাঁর অনেক তথ্যই অজানা। কিমের জীবনের রহস্যময় এবং উত্তর কোরিয়ার অজানা এমন কিছু তথ্য জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ।
—উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় নথি অনুযায়ী কিম ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী বায়েকদু মাউনটেনের একটি গোপন সামরিক ঘাঁটিতে জন্ম নেন। অন্যদিকে সোভিয়েত সরকারের নথি অনুযায়ী, কিম রাশিয়ার ভায়াত্সকোয়ে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আর জন্ম তারিখটা অবশ্য এক বছর আগের, অর্থাত্ ১৯৪১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। উত্তর কোরিয়ায় জাপানের দখলদারির সময় কিমের বাবা রাশিয়ায় আত্মগোপনে ছিলেন।
—ধারণা করা হয়, কিম জং-ইলের উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (১৫৭ সেন্টিমিটার)। তবে তিনি নিজের উচ্চতা বেশি দেখাতে জুতার তলায় আলাদা হিল ব্যবহার করতেন, এমনটি চুলের স্টাইলেও পরিবর্তন এনেছিলেন।
—সন্দেহ করা হয় কিম তাঁর ছোট ভাই কিম সু-রাকে খুন করেছেন। ওই সময় কিমের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তবে ওই সন্দেহ সন্দেহই থেকে গেছে, কখনো প্রমাণিত হয়নি।
—কিম ১৯৬০ সালে কিম ইল-সাং বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। চার বছর পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
—ধারণা করা হয় কিম পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন। তার সবচেয়ে ছোট ছেলে কিম জং-উনই তাঁর উত্তরাধিকারী হবেন বলে মনে করা হয়।
—বড় ছেলে কিম জং-নামকে একসময় নিজের উত্তরাধিকারী ভাবতেন কিম। তবে জাল পাসপোর্টে টোকিও সফরকালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নাম প্রিয়ভাজনের তালিকা থেকে বাদ পড়েন।
—সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় কিমের মা কিম জং সুক মারা যান বলে তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে। তবে ধারণা করা হয়, তিনি গুলিতে আহত হয়ে মারা যান।
—কিম জং-ইলের অন্তত ৫০টি নাম আছে। দেশবাসী তাঁকে এসব নামে ডাকত। এর মধ্যে আছে ডিয়ার লিডার (প্রিয় নেতা), সুপ্রিম লিডার (সর্বোচ্চ নেতা), আওয়ার ফাদার (আমাদের বাবা), দ্য জেনারেল, জেনারেলিসিমো অন্যতম।
—কিম সব সময়ই ট্রেনে রাষ্ট্রের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ভ্রমণ করতেন। ধারণা করা হয়, তিনি আকাশপথে ভ্রমণে ভয় পেতেন এবং তাঁর বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
—সিনেমা দেখার পোকা ছিলেন কিম জং-ইল। তাঁর সংগ্রহে ২০ হাজারের বেশি সিনেমার ভিডিও ছিল বলে জানা যায়।
—তার প্রিয় চলচ্চিত্র ছিল ‘র্যাম্বো’, ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ’, ‘গজিলা’।
—কিম প্রয়াত হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলরের বিশেষ ভক্ত ছিলেন।
—কিম উত্তর কোরিয়ার চলচ্চিত্র শিল্প তৈরির জন্য ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ কোরীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শিন সাং-ওক ও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী চিও ইউন-হিকে অপহরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁরা উত্তর কোরিয়ায় অবস্থানকালে সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮৬ সালে তাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
—১০০ পর্বের দেশাত্মবোধ তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রযোজনা করেছিলেন কিম। এ ছাড়া তিনি ‘অন দ্য আর্ট অব সিনেমা’ নামে একটি বইও লিখেছেন।
—তিতিন ছয়টি অপেরা কম্পোজ করেছিলেন। ছিলেন সংগীতের অনুরাগী ছিলেনও।
—হলিউডের ছবি ‘টিম আমেরিকার’ প্রধান খলনায়কের নামকরণ করা হয় কিমের নামে।
—উত্তর কোরিয়ায় তাঁর প্রাসাদতুল্য ১৭টি বাসভবন রয়েছে।
—উত্তর কোরিয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে, কিমের যেদিন যে মুড থাকে, সেদিনের আবহাওয়াও সে রকম আচরণ করে।
—উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের অন্যতম গোপন রাষ্ট্র হিসেবে মনে করা হয়।
—বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী এখন উত্তর কোরিয়ার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাবে দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ সেনাসদস্য কর্মরত আছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার।
—উত্তর কোরিয়া ১৯৮০-র দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজ থেকে পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করে বলে মনে করা হয়।
—কিম নিজেকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মনে করলেও উত্তর কোরিয়ার দুই কোটি ৩৯ লাখ মানুষ স্বাধীনভাবে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না।
—উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় কোনো ধর্মের স্বীকৃতি নেই।
—উত্তর কোরিয়ার পুরুষের গড় আয়ু ৭৬ বছর এবং নারীদের গড় আয়ু ৮৩ বছর।
No comments