ইআরজি-আইজিসির সেমিনারে অভিমত-সুশাসনের অভাব হলে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব নয়

সুশাসনের অভাব থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। অর্থনীতিতে অনেক সক্রিয় সূচক রয়েছে বলেই সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা একটা পর্যায়ের পর আর সম্ভব হবে না। গতকাল মঙ্গলবার ‘নীতিনির্ধারণের সঙ্গে গবেষণার সংযোগ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ইস্যু’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারের সুশাসনবিষয়ক অধিবেশনে বক্তারা এ কথা বলেন।


বক্তারা আরও অভিমত দেন, বাংলাদেশে ছোট পরিসরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মডেল রয়েছে। এসব মডেল বৃহত্তর আঙ্গিকে কাজে লাগাতে হবে। অবশ্য অনেকে এ-ও বলেন, গণতন্ত্রের চেহারা যাই হোক কেন, গণতন্ত্র আছে বলেই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি) এবং ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি) যৌথভাবে স্থানীয় এক হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার পাশাপাশি একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সুশাসনের সম্পৃক্ততা ব্যাখ্যা করতে কৃষি খাতের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, কৃষকেরা এখন কম দামে সার পাচ্ছেন। এ জন্য টাকা খরচ করতে হচ্ছে না তাঁদের। প্রক্রিয়াটি অনেক স্বচ্ছ হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধিতে। মঙ্গার প্রকোপ কমানোকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মনে করেন সরকারের টাকা তাঁদের নিজেদের টাকা। তাঁদের সুশাসনের আওতায় আনার কোনো কৌশল নেই। তৃণমূলের পাশাপাশি ওপরের দিকেও সমস্যা রয়েছে।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সুশাসনের ঘাটতিজনিত ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছোট ছোট জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা থেকে বৃহৎ আঙ্গিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, আশির দশকে গণতন্ত্র না থাকলেও প্রবৃদ্ধির অভাব ছিল, সুশাসন ভালো ছিল। আবার নব্বইয়ের দশকে প্রবৃদ্ধি বেশ হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তবে সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এটা উন্নয়নের একটি চমক।
কেন পর্যাপ্ত সুশাসন না থাকার পরও প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রবৃদ্ধি চালক হিসেবে প্রবাসী আয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষি খাত ভূমিকা রেখেছে বলে জানান।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক সুশাসনের অভাব অর্থনৈতিক সুশাসনকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই দুটির বন্ধন সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, বলা হয়, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ তো গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি করেছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন, স্বাস্থ্য, বিদ্যালয়ে নিবন্ধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বড় সমস্যা হলো আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেন জীববিজ্ঞানের নতুন নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকাণ্ড অনলাইন ও প্রযুক্তিনির্ভর করার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন।
এই অধিবেশনে কর বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

No comments

Powered by Blogger.