বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি-বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কেউ বাঁধুক
রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে দুর্বল বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটিও ২০ বছরে কার্যকর করা যায়নি। গত মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক রিপোর্টে রাজধানীতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের অসহায় অবস্থা ফুটে উঠেছে। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন রয়েছে এবং তার যথাযথ প্রয়োগও করা হয়।
এতে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়ের স্বার্থই রক্ষিত হয়। বাড়ি মালিক সমিতির নেতা সমকালের প্রতিবেদকের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিকতা হিসেবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ১৯৯১- ০৭ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ১১৬.৯৬ শতাংশ হলেও একই সময়ে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া ২৫৯.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুক্তিতে বর্তমানে যে হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং হচ্ছে তার সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির খোঁড়া যুক্তিকেও বাড়িওয়ালারা ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু কোন ধরনের বাড়ি বা ঘরের কত ভাড়া হবে সেটা কি কেবল বাড়িওয়ালারাই নির্ধারণ করে দেবেন? আমাদের দুর্ভাগ্য, ২০ বছর আগে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করা হলেও কে এই দায়িত্বটি পালন করবে সে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত না হওয়ায় আইনটি আজ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি। অথচ সীমাবদ্ধতা নিয়েও আইনটি কার্যকর করা গেলে বাড়ি মালিকরা যথেচ্ছভাবে যখন-তখন ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারতেন না। জায়গার দাম বেড়েছে, নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে, এর সঙ্গে আছে ব্যাংক ঋণের সুদ হারও। তবে সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধির হারের চেয়েও অনেক বেশি হারে বর্তমানে বাড়ি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ আইনটি অকার্যকর থাকার কারণে ভাড়াটিয়ারা এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ খুঁজে না পেয়ে বাড়িওয়ালাদের মর্জির ওপর নিজেদের আবাস ভাগ্যকে সফে দিয়েছেন। আসলে এখন বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজধানীসহ সারাদেশে এক ধরনের তুঘলকি কাণ্ড চলছে। অবিলম্বে এর অবসান হওয়া দরকার। এ জন্য বর্তমান বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করে অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। এতে বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও কমবে। সরকার এবং ডিসিসির আয়ও বাড়বে।
No comments