বেতার যেন হিজ মাস্টারস ভয়েস by নির্মল সেন
আমার এক কাকা পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি একটা রেডিও কিনেছিলেন। রেডিওটি ছিল মেগাফোন কোম্পানির। এ রেডিওতে একটি ছবি ছিল। ছবিতে একটি কুকুর ছিল। কুকুরটি মেগাফোনের পাশে কান পেতে রেডিও শুনছে। এ ছবিটির নিচে লেখা ছিল 'হিজ মাস্টারস ভয়েস'। আমি আজ অসুস্থ। একসময় সাংবাদিক ছিলাম। এখন আমার সব খবর জানতে ইচ্ছা করে। চোখে ভালো দেখি না। পড়তে পারি না। টেলিভিশন দেখতে পারি না। তাই আমার বেতারের
ওপর নির্ভর করতে হয়। সন্ধ্যা হলে একটি রেডিও নিয়ে শুয়ে পড়ি। রেডিও শুনে মনে হয় সেই 'হিজ মাস্টারস ভয়েস'।
বেতারে প্রায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর প্রচারিত হয়। এসব খবরে যদি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কোনো ভাষণ থাকে তা বিশেষভাবে প্রচার করা হয়। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর আসি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথায়। তাদের কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তা খবরের মাঝে বিশেষ গুরুত্ব পায়। খবরের মাঝে টেলিকাস্ট করে বেতার মন্ত্রীদের খবর শোনায়। এমনিতেই সব খবরই থাকে মন্ত্রী এবং সরকারকেন্দ্রিক। আবার যদি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ভাষণ হয় তা রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে প্রচার করা হয়। কিন্তু লক্ষণীয়, সেখানে বিরোধী দলের কোনো খবর থাকে না। যদি কোনো নেগেটিভ খবর থাকে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি চারদলীয় জোটের ডাকা হরতাল ভালো হয়নি। এটা আমি বাড়িতে বসেই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু বিরোধী দল হরতাল ডাকলেই বেতারে বলা হয়, সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। আমাদের বিবিসি শুনতে হয় সঠিক খবর জানার জন্য। ঝালকাঠির লিমন র্যাবের হাতে মার খেয়েছিল। হবিগঞ্জে কয়েকটি মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। মাঝে মধ্যেই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি লোক মারা যাচ্ছে। এসব খবর আমাদের শুনতে হয় বিবিসি থেকে। সব খবর জানতে হলে নির্ভর করতে হয় বিবিসির ওপর। কিছুদিন আগে নোয়াখালীর এক যুবককে, তারও আগে সাভারের আমিনবাজারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার বিস্তারিত খবর দেশের বেতারে পাওয়া যায়নি।
২৪ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন। সে ভাষণ রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে শুনেছি। আমি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার পিতার মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা করার জন্য। তার আমলেই এর আগে একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছে। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সেদিন নিউইয়র্কে শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উন্নয়ন মডেল সম্পর্কে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করবেন কি-না। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন 'না'। এ কথা কিন্তু বাংলাদেশ বেতারে প্রচার হয়নি। আমরা বিবিসিতে শুনেছি। তবে পরের দিন বাংলাদেশ বেতারে এ কথা প্রচার করা হয়েছে। পরের দিন ৭-৮ বার যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তার সবটুকুই শেখ হাসিনার ভাষণ। বাংলাদেশ বেতার সপ্তাহে একদিন সার্কের নিউজ শোনায়। কিন্তু গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার ভাষণ বলতে বলতে সার্কের কোনো সংবাদই প্রচার করেনি। এমনকি সিকিমের ভূমিকম্প সম্পর্কে একটি অক্ষরও বলেনি। এবারের ভূমিকম্পে সিকিমে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হয়েছে গৃহহারা। বাংলাদেশ বেতার এসব খবর প্রচার করেনি। ইতিমধ্যে আমাদের সম্পর্কে একটি খবর বিবিসি থেকে শুনতে হয়েছে। সে খবরে বলা হয়েছে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা আসেননি। তার কারণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্য নন। তিনি লোকসভার সদস্য। তাকে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিততে হবে। এই চিন্তায় তিনি কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। এ কথা আমি আগেও লিখেছি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য মমতা ঢাকায় আসেননি_ এ কথা আমাদের শুনতে হয়েছে বিবিসি থেকে। বাংলাদেশ বেতার এসব সংবাদ প্রচার করে না।
এবারে আসি বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত উত্তরণ অনুষ্ঠানে। উত্তরণ অনুষ্ঠানে এতদিন ভালো ভালো খবর দিত। এখন উত্তরণ অনুষ্ঠান বেশিরভাগ সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির সংবাদ প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, কোনো দলীয় সম্পদ নয়। আইয়ুব খানের আমলে তাদের কথা ছাড়া অন্য কোনো কথা প্রচারিত হতো না। এখনও মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতার 'হিজ মাস্টারস ভয়েস' হয়ে যাচ্ছে। আমি বেতার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব সবসময় সরকারদলীয় খবরের সঙ্গে বিরোধী দলের খবর প্রচার করতে। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে শুধু বিরোধী দলের কথা প্রচার করবেন না। মাঠে যা ঘটে তা প্রকৃতভাবে প্রচার করবেন_ এটাই আমার আবেদন এবং প্রত্যাশা।
নির্মল সেন :সাংবাদিক
বেতারে প্রায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর প্রচারিত হয়। এসব খবরে যদি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কোনো ভাষণ থাকে তা বিশেষভাবে প্রচার করা হয়। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর আসি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথায়। তাদের কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তা খবরের মাঝে বিশেষ গুরুত্ব পায়। খবরের মাঝে টেলিকাস্ট করে বেতার মন্ত্রীদের খবর শোনায়। এমনিতেই সব খবরই থাকে মন্ত্রী এবং সরকারকেন্দ্রিক। আবার যদি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ভাষণ হয় তা রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে প্রচার করা হয়। কিন্তু লক্ষণীয়, সেখানে বিরোধী দলের কোনো খবর থাকে না। যদি কোনো নেগেটিভ খবর থাকে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি চারদলীয় জোটের ডাকা হরতাল ভালো হয়নি। এটা আমি বাড়িতে বসেই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু বিরোধী দল হরতাল ডাকলেই বেতারে বলা হয়, সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। আমাদের বিবিসি শুনতে হয় সঠিক খবর জানার জন্য। ঝালকাঠির লিমন র্যাবের হাতে মার খেয়েছিল। হবিগঞ্জে কয়েকটি মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। মাঝে মধ্যেই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি লোক মারা যাচ্ছে। এসব খবর আমাদের শুনতে হয় বিবিসি থেকে। সব খবর জানতে হলে নির্ভর করতে হয় বিবিসির ওপর। কিছুদিন আগে নোয়াখালীর এক যুবককে, তারও আগে সাভারের আমিনবাজারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার বিস্তারিত খবর দেশের বেতারে পাওয়া যায়নি।
২৪ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন। সে ভাষণ রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে শুনেছি। আমি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। তিনি তার পিতার মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা করার জন্য। তার আমলেই এর আগে একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়েছে। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সেদিন নিউইয়র্কে শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উন্নয়ন মডেল সম্পর্কে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করবেন কি-না। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন 'না'। এ কথা কিন্তু বাংলাদেশ বেতারে প্রচার হয়নি। আমরা বিবিসিতে শুনেছি। তবে পরের দিন বাংলাদেশ বেতারে এ কথা প্রচার করা হয়েছে। পরের দিন ৭-৮ বার যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তার সবটুকুই শেখ হাসিনার ভাষণ। বাংলাদেশ বেতার সপ্তাহে একদিন সার্কের নিউজ শোনায়। কিন্তু গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার ভাষণ বলতে বলতে সার্কের কোনো সংবাদই প্রচার করেনি। এমনকি সিকিমের ভূমিকম্প সম্পর্কে একটি অক্ষরও বলেনি। এবারের ভূমিকম্পে সিকিমে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হয়েছে গৃহহারা। বাংলাদেশ বেতার এসব খবর প্রচার করেনি। ইতিমধ্যে আমাদের সম্পর্কে একটি খবর বিবিসি থেকে শুনতে হয়েছে। সে খবরে বলা হয়েছে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা আসেননি। তার কারণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্য নন। তিনি লোকসভার সদস্য। তাকে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিততে হবে। এই চিন্তায় তিনি কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। এ কথা আমি আগেও লিখেছি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য মমতা ঢাকায় আসেননি_ এ কথা আমাদের শুনতে হয়েছে বিবিসি থেকে। বাংলাদেশ বেতার এসব সংবাদ প্রচার করে না।
এবারে আসি বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত উত্তরণ অনুষ্ঠানে। উত্তরণ অনুষ্ঠানে এতদিন ভালো ভালো খবর দিত। এখন উত্তরণ অনুষ্ঠান বেশিরভাগ সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির সংবাদ প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, কোনো দলীয় সম্পদ নয়। আইয়ুব খানের আমলে তাদের কথা ছাড়া অন্য কোনো কথা প্রচারিত হতো না। এখনও মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ বেতার 'হিজ মাস্টারস ভয়েস' হয়ে যাচ্ছে। আমি বেতার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব সবসময় সরকারদলীয় খবরের সঙ্গে বিরোধী দলের খবর প্রচার করতে। আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে শুধু বিরোধী দলের কথা প্রচার করবেন না। মাঠে যা ঘটে তা প্রকৃতভাবে প্রচার করবেন_ এটাই আমার আবেদন এবং প্রত্যাশা।
নির্মল সেন :সাংবাদিক
No comments