মানবতাবিরোধীদের সুযোগ নয়-রাজনীতি by নুরুল ইসলাম বিএসসি
অনেকে মনে করেছিলেন, হঠাৎ মানুষ গুম, তারপর হত্যা, নদীতে লাশের মিছিল_ এসবই আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা করছে; কিন্তু ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনায় এটা পরিষ্কার যে, জামায়াত-শিবিরের লোকজন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে, জনমনে সন্দেহের বীজ ঢোকাতে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে প্রচার করতে এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের কর্মকাণ্ডে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গাড়ি কী দোষ করেছে?
গাড়িতে তারা আগুন দেবে কেন? হরতালও ঘোষণা করা হয়নি বা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাহলে গাড়িতে আগুন দেওয়ার কারণ কী? কারণ একটা আতঙ্ক ছড়ানো ও জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে বিষ ঢোকানো
ঢাকাই যেন সমগ্র বাংলাদেশ। বিএনপির টার্গেট, ঢাকাকে অচল করা। ১৮ ডিসেম্বর কাকডাকা ভোরে বোমা ফাটিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং ওই ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে, এক সঙ্গে সারাদেশে পাঁচশ' স্থানে বোমা ফাটানোর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটা যে জামায়াতের কর্মকাণ্ড তা চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়। বিএনপির ধারণা, ঢাকাকে অচল করতে পারলে সরকারের পতন হবে আর সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় এসে মানবতাবিরোধী বিচার কার্যক্রম স্থগিত ও তারেক রহমানকে দেশে এনে প্রধানমন্ত্রী বানানো যাবে। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে এমন কাণ্ডে সবাই হতবাক। ভাগ্য ভালো ছিল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের দিন রাতে তাদের ষড়যন্ত্রের ছক আন্দাজ করতে পেরেছিল। নতুবা শত শত বাসে করে মুক্তিযোদ্ধার নামে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার এনে তাণ্ডব চালিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিত। খবরে প্রকাশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে জড়ো করে ঢাকার চারপাশে তাণ্ডব চালিয়ে, একই সঙ্গে সারাদেশে তাণ্ডব চালানোর নির্দেশ দেওয়া হতো। শোনা যায়, গভীর রাতে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের সকালে সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে বোঝা যায়, একটি পরিকল্পনা করেই তারা মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশের আড়ালে, বিরাট চক্র তৈরি করে এগোনোর চেষ্টা করেছিল। সরকারকে আরও গভীরে গিয়ে, পেছনে আরও শানে নজুল আছে কি-না খতিয়ে দেখা দরকার।
অনেকে মনে করেছিলেন, হঠাৎ মানুষ গুম, তারপর হত্যা, নদীতে লাশের মিছিল_ এসবই আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা করছে; কিন্তু ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনায় এটা পরিষ্কার যে, জামায়াত-শিবিরের লোকজন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে, জনমনে সন্দেহের বীজ ঢোকাতে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে প্রচার করতে এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের কর্মকাণ্ডে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গাড়ি কী দোষ করেছে? গাড়িতে তারা আগুন দেবে কেন? হরতালও ঘোষণা করা হয়নি বা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাহলে গাড়িতে আগুন দেওয়ার কারণ কী? কারণ একটা আতঙ্ক ছড়ানো ও জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে বিষ ঢোকানো। এক সঙ্গে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়, বিএনপি-জামায়াত একটি নির্দিষ্ট ষড়যন্ত্রের ছকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এ সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ পর্যায়ে থাকবে, রায় কী হয় এ মুহূর্তে বলা যাবে না। রায় যা-ই হয় আপিল হবে, আপিলে আরও সময়ক্ষেপণ হবে। এরশাদ-বামরা যদি প্রার্থনা প্রত্যাহার করে শেখ হাসিনা পুনঃসরকার গঠনে ব্যর্থ হলে বিচার কার্যক্রম কি শেষ করা সম্ভব হবে? এতে পরিণতি কী হতে পারে অনুমান করুন! যাদের এখন বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, তারা যদি ছাড়া পায়, মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পক্ষের লোকজন এ দেশে বসবাস করতে পারবে কি? বিএনপি জোট যদি প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করে, আগেও যেভাবে তারা করেছিল তাহলে দেশের অবস্থা কী হবে?
এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডলারের দাম এবং বিভিন্ন বাণিজ্য নিয়ে সমস্যা আছে। এগুলো বড় সমস্যা। আজ না হয় কাল দেশ ভালো থাকলে সমস্যাগুলো সমাধান করা যাবে। কিন্তু মানবতাবিরোধীরা ছাড়া পেলে দেশ কি বর্তমান অবস্থায় থাকবে? আমিনীরা এমনিতেই দেশটাকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে তিনজনকে নতুন করে আমিনী মুরতাদ ঘোষণা করেছেন। এত চাপের মধ্যে থেকেও যে ব্যক্তি ভালো মানুষকে মুরতাদ ঘোষণা দিতে পারেন চাপমুক্ত হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে। তাদের শক্তি তখন দ্বিগুণ হবে। কোরআন সুন্নাহর মতে দেশ চালাতে চাইবেন, বিরোধীদের তারা ফাঁসিতে ঝোলাবেন। যারা বাম রাজনীতি করেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তাদের কাছে দেশবাসীর একটাই প্রত্যাশা_ অভিমান নয়, চাওয়া-পাওয়া নয়, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামীতে শেখ হাসিনা যাতে সরকার গঠন করতে পারে সেদিকে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনার জন্য নয়, এ দেশের বর্তমান ও আগামীর মানুষের জন্য করতে হবে। এখানেই আসল বামের পরিচয়, আমাদের সবার রাজনীতি। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, আমরা কোন দেশ চাই? প্রগতির স্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ, বিজ্ঞানের সুফলভোগী দেশ, নাকি মধ্যযুগীয় বর্বর দেশ। আমিনী-মানবতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এলে, আমরা কি বর্বর দেশের একটিতে পরিণত হবো না?
বিএনপি চেয়ারপারসন রোডমার্চ করে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যারা বর্তমান সরকারের ওপর অভিমান করেছেন বা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদেরও সমর্থন বর্তমান খালেদা জিয়ার প্রতি। অভিমান বাস্তবতা এককথা নয়। বাস্তবতার বিচারে আগামী প্রজন্মের পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে সবকিছু ভুলে এ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আগামীতে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়া বলেছেন, 'ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছে।' সরকার ব্যর্থ নয়। যেখানে সরকার বড় যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করছে, যেখানে সরকার বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল, সেখানে সরকার গুম বা হত্যা করতে যাবে কেন? হত্যা বা গুম না করে বিচারও তো করা যেত। আসল ঘটনা, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বলেই খালো জিয়া সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। ১৮ ডিসেম্বরের কর্মকাণ্ডে তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। মানুষ আগে বিভ্রান্তিতে থাকলেও এখন পুরোদমে বিশ্বাস করে, জামায়াত-শিবির গুম-হত্যার রাজনীতি করছে। তাদের কাজ সরকারের জন্য শাপে বর হয়েছে। এবার আসা যাক জেনারেল এরশাদ প্রসঙ্গে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এরশাদ সাহেব স্ববিরোধী কাজ-কারবার করছেন। একদিকে মহাজোটে থাকার কথা বলছেন, অন্যদিকে তিনশ' আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করছেন। তিনি কী করতে চান, হয়তো তিনি নিজেই জনগণের আস্থা অথবা বারবার মুখে মহাজোটের কথা বললেও সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তার বদ্ধমূল ধারণা, জাতীয় পার্টি তিনশ' আসনে প্রার্থী দিতে পারলে আগামীতে মন্ত্রিসভা গঠনে কেউ তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তার দু'একজন অনুসারীর সঙ্গে কথা বললে ধারণাটা আরও পরিষ্কার হওয়ার কথা। এরশাদ সাহেব মূলত ভারতপন্থি হলেও টিপাইমুখ নিয়ে সমঝোতা গেম খেলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজের দলে টানার চেষ্টা করছেন। তিনি মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলেন, শুনলে মনে হয় তিনি এক্ষুণি মহাজোট ছেড়ে দেবেন। প্রকৃত ঘটনা হয়তো এরশাদ সাহেব উপলব্ধি করতে পারছেন না। সভা-সমাবেশে লোক দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মহাজোটে ছিলেন বলে এত আসনে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছে। মহাজোট ছাড়লেই বোঝা যাবে, কত ধানে কত চাল।
বিএনপি এরশাদকে মহাজোট থেকে বের করার নানা কৌশল শুধু নয়, নিজেদের পক্ষে টেনে আগামীতে সরকার গঠন করতে নানা সুযোগ-সুবিধার টোপের জাল বিস্তার করছে। এরশাদ সাহেবের আশপাশের লোকজনকেও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে এরশাদ সাহেব জোট ত্যাগ করলে (যা তিনি এখন না করে এই সরকারের বয়স এক বছর থাকতে করবেন) আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, যারা বাম দলে আছেন, তারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেও নিতে পারে। তখন হবে কী?
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
ঢাকাই যেন সমগ্র বাংলাদেশ। বিএনপির টার্গেট, ঢাকাকে অচল করা। ১৮ ডিসেম্বর কাকডাকা ভোরে বোমা ফাটিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং ওই ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে, এক সঙ্গে সারাদেশে পাঁচশ' স্থানে বোমা ফাটানোর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটা যে জামায়াতের কর্মকাণ্ড তা চোখ বুঝে বলে দেওয়া যায়। বিএনপির ধারণা, ঢাকাকে অচল করতে পারলে সরকারের পতন হবে আর সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় এসে মানবতাবিরোধী বিচার কার্যক্রম স্থগিত ও তারেক রহমানকে দেশে এনে প্রধানমন্ত্রী বানানো যাবে। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে এমন কাণ্ডে সবাই হতবাক। ভাগ্য ভালো ছিল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের দিন রাতে তাদের ষড়যন্ত্রের ছক আন্দাজ করতে পেরেছিল। নতুবা শত শত বাসে করে মুক্তিযোদ্ধার নামে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার এনে তাণ্ডব চালিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিত। খবরে প্রকাশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে জড়ো করে ঢাকার চারপাশে তাণ্ডব চালিয়ে, একই সঙ্গে সারাদেশে তাণ্ডব চালানোর নির্দেশ দেওয়া হতো। শোনা যায়, গভীর রাতে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের সকালে সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে বোঝা যায়, একটি পরিকল্পনা করেই তারা মুক্তিযোদ্ধার সমাবেশের আড়ালে, বিরাট চক্র তৈরি করে এগোনোর চেষ্টা করেছিল। সরকারকে আরও গভীরে গিয়ে, পেছনে আরও শানে নজুল আছে কি-না খতিয়ে দেখা দরকার।
অনেকে মনে করেছিলেন, হঠাৎ মানুষ গুম, তারপর হত্যা, নদীতে লাশের মিছিল_ এসবই আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা করছে; কিন্তু ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনায় এটা পরিষ্কার যে, জামায়াত-শিবিরের লোকজন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে, জনমনে সন্দেহের বীজ ঢোকাতে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে প্রচার করতে এ হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের কর্মকাণ্ডে তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গাড়ি কী দোষ করেছে? গাড়িতে তারা আগুন দেবে কেন? হরতালও ঘোষণা করা হয়নি বা গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাহলে গাড়িতে আগুন দেওয়ার কারণ কী? কারণ একটা আতঙ্ক ছড়ানো ও জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে বিষ ঢোকানো। এক সঙ্গে একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়, বিএনপি-জামায়াত একটি নির্দিষ্ট ষড়যন্ত্রের ছকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এ সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ পর্যায়ে থাকবে, রায় কী হয় এ মুহূর্তে বলা যাবে না। রায় যা-ই হয় আপিল হবে, আপিলে আরও সময়ক্ষেপণ হবে। এরশাদ-বামরা যদি প্রার্থনা প্রত্যাহার করে শেখ হাসিনা পুনঃসরকার গঠনে ব্যর্থ হলে বিচার কার্যক্রম কি শেষ করা সম্ভব হবে? এতে পরিণতি কী হতে পারে অনুমান করুন! যাদের এখন বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, তারা যদি ছাড়া পায়, মুক্তিযুদ্ধের শক্তির পক্ষের লোকজন এ দেশে বসবাস করতে পারবে কি? বিএনপি জোট যদি প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করে, আগেও যেভাবে তারা করেছিল তাহলে দেশের অবস্থা কী হবে?
এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডলারের দাম এবং বিভিন্ন বাণিজ্য নিয়ে সমস্যা আছে। এগুলো বড় সমস্যা। আজ না হয় কাল দেশ ভালো থাকলে সমস্যাগুলো সমাধান করা যাবে। কিন্তু মানবতাবিরোধীরা ছাড়া পেলে দেশ কি বর্তমান অবস্থায় থাকবে? আমিনীরা এমনিতেই দেশটাকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে তিনজনকে নতুন করে আমিনী মুরতাদ ঘোষণা করেছেন। এত চাপের মধ্যে থেকেও যে ব্যক্তি ভালো মানুষকে মুরতাদ ঘোষণা দিতে পারেন চাপমুক্ত হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারবে। তাদের শক্তি তখন দ্বিগুণ হবে। কোরআন সুন্নাহর মতে দেশ চালাতে চাইবেন, বিরোধীদের তারা ফাঁসিতে ঝোলাবেন। যারা বাম রাজনীতি করেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান তাদের কাছে দেশবাসীর একটাই প্রত্যাশা_ অভিমান নয়, চাওয়া-পাওয়া নয়, আগামী প্রজন্মের স্বার্থে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামীতে শেখ হাসিনা যাতে সরকার গঠন করতে পারে সেদিকে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনার জন্য নয়, এ দেশের বর্তমান ও আগামীর মানুষের জন্য করতে হবে। এখানেই আসল বামের পরিচয়, আমাদের সবার রাজনীতি। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, আমরা কোন দেশ চাই? প্রগতির স্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ, বিজ্ঞানের সুফলভোগী দেশ, নাকি মধ্যযুগীয় বর্বর দেশ। আমিনী-মানবতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এলে, আমরা কি বর্বর দেশের একটিতে পরিণত হবো না?
বিএনপি চেয়ারপারসন রোডমার্চ করে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মন বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যারা বর্তমান সরকারের ওপর অভিমান করেছেন বা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদেরও সমর্থন বর্তমান খালেদা জিয়ার প্রতি। অভিমান বাস্তবতা এককথা নয়। বাস্তবতার বিচারে আগামী প্রজন্মের পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে সবকিছু ভুলে এ সরকারকে সমর্থন দিয়ে আগামীতে ক্ষমতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়া বলেছেন, 'ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছে।' সরকার ব্যর্থ নয়। যেখানে সরকার বড় যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করছে, যেখানে সরকার বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল, সেখানে সরকার গুম বা হত্যা করতে যাবে কেন? হত্যা বা গুম না করে বিচারও তো করা যেত। আসল ঘটনা, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বলেই খালো জিয়া সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। ১৮ ডিসেম্বরের কর্মকাণ্ডে তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। মানুষ আগে বিভ্রান্তিতে থাকলেও এখন পুরোদমে বিশ্বাস করে, জামায়াত-শিবির গুম-হত্যার রাজনীতি করছে। তাদের কাজ সরকারের জন্য শাপে বর হয়েছে। এবার আসা যাক জেনারেল এরশাদ প্রসঙ্গে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এরশাদ সাহেব স্ববিরোধী কাজ-কারবার করছেন। একদিকে মহাজোটে থাকার কথা বলছেন, অন্যদিকে তিনশ' আসনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করছেন। তিনি কী করতে চান, হয়তো তিনি নিজেই জনগণের আস্থা অথবা বারবার মুখে মহাজোটের কথা বললেও সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তার বদ্ধমূল ধারণা, জাতীয় পার্টি তিনশ' আসনে প্রার্থী দিতে পারলে আগামীতে মন্ত্রিসভা গঠনে কেউ তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তার দু'একজন অনুসারীর সঙ্গে কথা বললে ধারণাটা আরও পরিষ্কার হওয়ার কথা। এরশাদ সাহেব মূলত ভারতপন্থি হলেও টিপাইমুখ নিয়ে সমঝোতা গেম খেলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজের দলে টানার চেষ্টা করছেন। তিনি মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলেন, শুনলে মনে হয় তিনি এক্ষুণি মহাজোট ছেড়ে দেবেন। প্রকৃত ঘটনা হয়তো এরশাদ সাহেব উপলব্ধি করতে পারছেন না। সভা-সমাবেশে লোক দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মহাজোটে ছিলেন বলে এত আসনে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছে। মহাজোট ছাড়লেই বোঝা যাবে, কত ধানে কত চাল।
বিএনপি এরশাদকে মহাজোট থেকে বের করার নানা কৌশল শুধু নয়, নিজেদের পক্ষে টেনে আগামীতে সরকার গঠন করতে নানা সুযোগ-সুবিধার টোপের জাল বিস্তার করছে। এরশাদ সাহেবের আশপাশের লোকজনকেও লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে এরশাদ সাহেব জোট ত্যাগ করলে (যা তিনি এখন না করে এই সরকারের বয়স এক বছর থাকতে করবেন) আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই, যারা বাম দলে আছেন, তারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেও নিতে পারে। তখন হবে কী?
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
No comments