প্রবাস জীবন-জোহানেসবার্গের নোয়াখালী! by আলতাব হোসেন
বৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার খুব একটা পথ নেই। নোয়াখালীর লোকজনই প্রথম মোজাম্বিক-তানজানিয়া ঘুরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার দুর্গম পথ আবিষ্কার করেন। তাদের দেখানো সেই পথে অন্যরাও লাইন দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন সেখানে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ নোয়াখালীর। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করেন, নোয়াখালী নামে একটা আলাদা দেশ আছে। জোহানেসবার্গ,
কেপটাউন ও ডারবানে বাংলাদেশিদের দোকান বা রেস্টুরেন্টগুলো নোয়াখালী হিসেবেই পরিচিত। ডারবানের সি বিচ এলাকায় সুস্বাদু খাবারের জন্য বহুল পরিচিত হোটেলের নাম আল মেহরান। যদিও স্থানীয়দের কাছে নোয়াখালী হোটেল নামেই আল মেহরান পরিচিত।
দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে বহু জাতির মিলেমিশে বসবাস করার দেশ। দেশটি আদিবাসী কালোদের ঐতিহ্যবাহী মাতৃভূমি এবং ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের দ্বিতীয় মাতৃভূমি। তা
ছাড়া এখানে কয়েক মিলিয়ন মিশ্র বর্ণের ও এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের নোয়াখালীর মানুষও একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবাসীরা মূলত শ্রমিক হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ প্রবাসীই ব্যবসায়ী। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় মূলত নোয়াখালীর লোকজনই বেশি।
জোহানেসবার্গ শহরের ফোর্ডসবাগ অঞ্চলে বাঙালিদের সাত-আটটি রেস্টুরেন্ট আছে, যেগুলো স্থানীয় ভারতীয় তো বটেই, সাদা-কালোদের কাছেও সুস্বাদু খাবারের জন্য পছন্দের। বিসমিল্লাহ, আল মেহরান বা আল মক্কা জাতীয় রেস্টুরেন্টগুলো হয়ে গেছে চেইন রেস্টুরেন্ট; ডারবান-কেপটাউন এসব শহরেও তাদের শাখা আছে। কিন্তু বাঙালিদের মূল ব্যবসা রেস্টুরেন্ট নয়, গ্রোসারি শপ। ডারবান পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফ্রবিন সিং জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রোসারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের এখানে পরিচয়ই হয়ে গেছে 'গ্রোসারি ব্যবসায়ী'। এখানকার সোনা-হীরার ব্যবসা এখনও সাদাদের। এর বাইরে বড় ব্যবসা সব ভারতীয়দের, পাকিস্তানিরা ইলেকট্রনিক্স আর বাংলাদেশিরা গ্রোসারি ব্যবসা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন।
জোহানেসবার্গের বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আমজাদ হোসেন চয়ন সমকালকে জানান, বর্তমানে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে বাস করছেন। তাদের অনেকেই মুদি, মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক্সের দোকান চালান। রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত আছেন কেউ কেউ। এখানে বাংলাদেশিরা কর্মচারী নন, মালিক বা ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার কারণে কালোদের রোষানলে পড়ে মারা পড়ছেন বলে তিনি মনে করেন। তার নিজের একাধিক সুপার মল, কয়েকটি বড় খামারসহ হোটেল ব্যবসা রয়েছে উল্লেখ করে সমকালকে বলেন, তিনি নিজেও নোয়াখালীর মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় নোয়াখালীর লোকজন বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন বলেও তিনি জানান। তার হাত ধরেই আত্মীয়স্বজনসহ নোয়াখালীর কয়েক হাজার মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করে খাচ্ছেন বলে জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও আল মেহরান রেস্টুরেন্টের ফারুক হোসেন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে বাংলাদেশিরা শুধু খেটে খাওয়া শ্রমিক নন, এখানে তারা রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত। ইউরোপ, বিশেষত ইংল্যান্ডে এখন সিলেটিদের একটা দ্বিতীয় প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। সেখানকার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যারা মূল স্রোতে ঢুকছেন, প্রথম প্রজন্মে তারা ছিলেন শুধুই শ্রমিক। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম প্রজন্মের লোক প্রায় সবাই ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, ১৬৫২ থেকে ১৭৯৫ সাল পর্যন্ত দাসপ্রথা চালু থাকার সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় দাস ব্যবসা খুব জনপ্রিয় ছিল। স্থানীয় শ্রমিকের অভাব বলে শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা সস্তায় দাস কিনতে আগ্রহী ছিলেন। এসব দাসের মধ্যে অনেকেই ভারত থেকে যান। উনিশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দাসপ্রথা বাতিল হওয়ার পর নাতাল ঔপনিবেশিক সরকার সেখানে শ্রমিক ঘাটতি মোকাবেলায় ভারতীয় অভিবাসীদের ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এসব অভিবাসী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যার যার সেবা শেষ করার পর স্বাধীন সামাজিক মর্যাদা ভোগ করবেন এবং কিছু ভূমি ও অর্থ পাবেন। সে সময় একেক দল ভারতীয় নাগরিক ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন।
ডারবান থেকে জোহানেসবার্গ পর্যন্ত বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মবিশ্বাসের বহু দক্ষিণ আফ্রিকানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা কেউ ধনী, আবার কেউ দরিদ্র। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের গুণগত মান অন্বেষণ করেন, আবার কেউ কেউ বংশপরম্পরায় জমি চাষ করেন। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার লোকজনের প্রধান খাদ্য কাসাভা হলেও এখন তারা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যদিও বিস্তীর্ণ জমি এখন পর্যন্ত খালি পড়ে আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে বহু জাতির মিলেমিশে বসবাস করার দেশ। দেশটি আদিবাসী কালোদের ঐতিহ্যবাহী মাতৃভূমি এবং ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের দ্বিতীয় মাতৃভূমি। তা
ছাড়া এখানে কয়েক মিলিয়ন মিশ্র বর্ণের ও এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের নোয়াখালীর মানুষও একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবাসীরা মূলত শ্রমিক হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ প্রবাসীই ব্যবসায়ী। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় মূলত নোয়াখালীর লোকজনই বেশি।
জোহানেসবার্গ শহরের ফোর্ডসবাগ অঞ্চলে বাঙালিদের সাত-আটটি রেস্টুরেন্ট আছে, যেগুলো স্থানীয় ভারতীয় তো বটেই, সাদা-কালোদের কাছেও সুস্বাদু খাবারের জন্য পছন্দের। বিসমিল্লাহ, আল মেহরান বা আল মক্কা জাতীয় রেস্টুরেন্টগুলো হয়ে গেছে চেইন রেস্টুরেন্ট; ডারবান-কেপটাউন এসব শহরেও তাদের শাখা আছে। কিন্তু বাঙালিদের মূল ব্যবসা রেস্টুরেন্ট নয়, গ্রোসারি শপ। ডারবান পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফ্রবিন সিং জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রোসারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের এখানে পরিচয়ই হয়ে গেছে 'গ্রোসারি ব্যবসায়ী'। এখানকার সোনা-হীরার ব্যবসা এখনও সাদাদের। এর বাইরে বড় ব্যবসা সব ভারতীয়দের, পাকিস্তানিরা ইলেকট্রনিক্স আর বাংলাদেশিরা গ্রোসারি ব্যবসা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন।
জোহানেসবার্গের বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আমজাদ হোসেন চয়ন সমকালকে জানান, বর্তমানে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে বাস করছেন। তাদের অনেকেই মুদি, মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক্সের দোকান চালান। রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত আছেন কেউ কেউ। এখানে বাংলাদেশিরা কর্মচারী নন, মালিক বা ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার কারণে কালোদের রোষানলে পড়ে মারা পড়ছেন বলে তিনি মনে করেন। তার নিজের একাধিক সুপার মল, কয়েকটি বড় খামারসহ হোটেল ব্যবসা রয়েছে উল্লেখ করে সমকালকে বলেন, তিনি নিজেও নোয়াখালীর মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় নোয়াখালীর লোকজন বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন বলেও তিনি জানান। তার হাত ধরেই আত্মীয়স্বজনসহ নোয়াখালীর কয়েক হাজার মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করে খাচ্ছেন বলে জানান।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও আল মেহরান রেস্টুরেন্টের ফারুক হোসেন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে বাংলাদেশিরা শুধু খেটে খাওয়া শ্রমিক নন, এখানে তারা রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত। ইউরোপ, বিশেষত ইংল্যান্ডে এখন সিলেটিদের একটা দ্বিতীয় প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। সেখানকার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যারা মূল স্রোতে ঢুকছেন, প্রথম প্রজন্মে তারা ছিলেন শুধুই শ্রমিক। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম প্রজন্মের লোক প্রায় সবাই ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, ১৬৫২ থেকে ১৭৯৫ সাল পর্যন্ত দাসপ্রথা চালু থাকার সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় দাস ব্যবসা খুব জনপ্রিয় ছিল। স্থানীয় শ্রমিকের অভাব বলে শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা সস্তায় দাস কিনতে আগ্রহী ছিলেন। এসব দাসের মধ্যে অনেকেই ভারত থেকে যান। উনিশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দাসপ্রথা বাতিল হওয়ার পর নাতাল ঔপনিবেশিক সরকার সেখানে শ্রমিক ঘাটতি মোকাবেলায় ভারতীয় অভিবাসীদের ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এসব অভিবাসী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যার যার সেবা শেষ করার পর স্বাধীন সামাজিক মর্যাদা ভোগ করবেন এবং কিছু ভূমি ও অর্থ পাবেন। সে সময় একেক দল ভারতীয় নাগরিক ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন।
ডারবান থেকে জোহানেসবার্গ পর্যন্ত বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মবিশ্বাসের বহু দক্ষিণ আফ্রিকানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তারা কেউ ধনী, আবার কেউ দরিদ্র। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের গুণগত মান অন্বেষণ করেন, আবার কেউ কেউ বংশপরম্পরায় জমি চাষ করেন। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার লোকজনের প্রধান খাদ্য কাসাভা হলেও এখন তারা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। যদিও বিস্তীর্ণ জমি এখন পর্যন্ত খালি পড়ে আছে।
No comments