অপরাজনীতির আগুনে পোড়ে জীবন ও সম্পদ by মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
১৮ ডিসেম্বর ২০১১, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ঢাকার কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীবাহিনীর সংঘর্ষ, বোমাবাজি, গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের খবর যখন প্রচারিত হচ্ছিল, তখন বেশির ভাগ মানুষই এর কোনো কারণ বা রহস্য খুঁজে পাচ্ছিল না। কেননা সংঘর্ষ হওয়ার মতো কোনো কর্মসূচির কথা পত্রপত্রিকা বা টিভি চ্যানেলগুলোতে আগের ভাগে প্রচারিত হয়নি। দুপুরে যখন একজনের মৃত্যুর খবর এবং গাড়ি
পোড়ানোর কথা দেশের অন্য অঞ্চল থেকেও আসতে শুরু করে, তখন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় খবর শুনতে গিয়ে সংঘর্ষের কিছু ভিডিওচিত্র দেখা গেলেও ঘটনার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ পাওয়া যায়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগ আনলেন_যা গতানুগতিক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ সাহেব যে বক্তব্য দিলেন, তাও ততটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের বক্তব্য আশা করা গিয়েছিল অনেক বেশি তথ্যবহুল হবে। কিন্তু তাও হয়নি। ফলে বেশির ভাগ মানুষ ১৮ ডিসেম্বর দিনব্যাপী ঢাকাসহ সারা দেশে আসলে কী ঘটেছিল, প্রাথমিকভাবে তা জানা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হয়েছে। এটি ছিল একটি বড় ধরনের গোপন কর্মসূচির বাস্তবায়ন। অন্যভাবে অবশ্যই বলা যায়, এটি ছিল বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করার একটি গোপন পরিকল্পনা।
রাস্তায় কর্মীরা বসে যেতে পারলে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়া সরকারের পক্ষে খুব সহজ হতো কি না বলা মুশকিল। এতে দেশে একটি বড় ধরনের রক্তারক্তির ঘটনা ঘটে যেতে পারত, তাতে 'আন্দোলনকারীরা' দেশে ও বিদেশে এক ধরনের সহানুভূতিও লাভ করতে পারত। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রের সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের আচরণ এক নয়, কোন দল কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকে, কার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটা মহৎ, সৎ ও অগ্রসরমান_তা সব সময় সব মানুষের কাছে সমানভাবে বোধগম্য থাকে না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বুঝতে পারলেও সবাই যে তা ধরতে পারে বা বুঝতে পারে, তা কিন্তু সব সময় বলা যাবে না।
মিসরের তাহরির ময়দানে গণতন্ত্রের জন্য অনেক দল ও গোষ্ঠীই সমবেত হয়েছিল। মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি যৌক্তিক পরিণতি হয়েছিল তাহরির স্কয়ারের অবস্থান ধর্মঘট। বাংলাদেশেও কোনো কোনো মহল থেকে তাহরির স্কয়ারের মতো ঘটনা সংঘটিত করার কথা বলা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে কি সরকার পরিবর্তনের বৈধ পন্থা নেই? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা থাকা সত্ত্বেও একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে, হটাতে হবে_এমন কথা যাঁরা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, টকশো, লেখালেখি ও আলোচনা সভায় বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্র বলতে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় থাকা, যা খুশি তা করা বা বলাকেই বোঝেন ও মানেন। ক্ষমতায় অন্যের থাকাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে চান না_এটিই বোঝায়। বর্তমান সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসন করছে। তাদের সব কাজই ভালো হচ্ছে তা কেউ দাবি করে বলে শুনিনি, কেউ তা করলেও এর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেওয়া যাবে না। কেননা কোনো সরকারই শতভাগ সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশকে পরিচালিত করতে পারবে_তেমনটি আমরা বাস্তবসম্মত মনে করতে পারি না।
এমনি অবস্থায় বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলো বর্তমান সরকারের সমালোচনা করলেও বর্তমান সরকার থেকে আদর্শিক, চারিত্রিক, চিন্তাধারা, পরিকল্পনা ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই তারা অপেক্ষাকৃত ভালো তেমন প্রমাণ অতীতে দিতে পারেনি, বর্তমানেও তাদের তেমন কোনো মিশন-ভিশন আছে বলে দেখা যাচ্ছে না। সে ধরনের অবস্থান থেকে যখন বিএনপি মিসর বা মধ্যপ্রাচ্যের গণ-অভ্যুত্থানের যে স্বপ্ন দেখছে, জনগণকে দেখাচ্ছে তা মোটেও সাযুজ্যপূর্ণ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক আগেই এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে বিকশিত করার, সে ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর অবস্থান হচ্ছে গণতন্ত্রে প্রবেশ করার লড়াইয়ের। আমরা ১৯৭১-৭২ সালের গণতন্ত্রে প্রথম প্রবেশ করেছি, ১৯৯০-৯১ সালে দ্বিতীয়বার এবং ২০০৯ সালে তৃতীয়বার প্রবেশ করেছি। সুতরাং বাংলাদেশে যাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের গণ-অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা ঘটানোর তত্ত্ব হাজির করেন, তাঁরা রাজনীতির ইতিহাস কতটা অনুধাবন করে বলেন বা করেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে তরুণদের মধ্যে যারা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখা ও শেখার সুযোগ কম পায় বা মোটেও পায় না, তারা আবেগ ও অন্ধত্ব দিয়ে বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে তা যেভাবে সংঘটিত করতে চায়_তা বিশ্বসভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির অনেক নিয়মমতোই হয় না, বরং তাতে উল্টোটাই বেশি বিদ্যমান। বাংলাদেশে রাজনীতিতে এ ধরনের অন্ধবিশ্বাসের কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তারাই সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনার সঙ্গে নিজের দেশকে একাকার করে মিলিয়ে দেখে অনেক কিছু অর্জনের আশা করে, নিজেরা 'জীবন' দিয়ে তা পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। যেসব রাজনৈতিক নেতা এ ধরনের বক্তব্য দেন, তাঁরা এসব তরুণকে সেভাবেই উজ্জীবিত করেন নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা কী দিতে পেরেছেন, তা তো আমরা নিকট অতীতেই দেখেছি। রাজনীতির জটিল দিকগুলো সৎভাবে বোঝা, জানা ও বাস্তবায়ন করা কত কঠিন কাজ, তা কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই বোঝেন বলে মনে হয় না। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাবলিতে ফিরে আসা যাক।
বাংলা ও ইংরেজি বেশ কয়টি দৈনিক পত্রিকায় ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাবলির যেসব প্রতিবেদন ও সংবাদ ছাপা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে বিএনপির একটি প্রভাবশালী মহল ঢাকায় 'তাহরির স্কয়ারের' অনুরূপ একটি অবস্থান ধর্মঘট সৃষ্টির পরিকল্পনা থেকে ১৮ তারিখ 'মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা' সভার আয়োজন করে। বিজয়ের মাসে এমন কর্মসূচি থাকা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যে কৌশলে 'সংবর্ধনা' সভার কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা স্বাভাবিক ছিল না। বিভিন্ন শহর থেকে তরুণ বয়সের যেসব কর্মীকে বাস বোঝাই করে আনা হচ্ছিল, তাও স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসব কর্মীর অনেকেই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত বলে পত্রপত্রিকাগুলো উল্লেখও করেছে। তা ছাড়া শেষরাতে বা খুব ভোরে রমনা এলাকায় ২০-২৫ বছরের কর্মীদের সমবেত হওয়া, পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করলে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেওয়া, ককটেল ও বোমা ফাটানো, গাড়ি ভাঙচুরে লিপ্ত হওয়া মোটেও সহজ-সরল কোনো ব্যাপার ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপির অনুষ্ঠান বিকেল ৩টায় যেখানে নির্ধারিত ছিল, সেখানে এত ভোরে এসব তরুণের বাস বোঝাই করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অভিমুখে যাওয়া কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়ানোর বিষয় নয়। মতিঝিল, নয়াপল্টন, মালিবাগ-মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় সকালে বাসবোঝাই তরুণদের সরব উপস্থিতি অনেকেরই নজরে পড়েছে। এতে কেউ কেউ তেমন কিছুই হয়তো ভাবতে পারেনি, আবার অনেকেরই মনে এতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের কর্মীরাই এতে বিশেষভাবে তৎপর ছিল। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বরিশালসহ অন্য শহরেও সমাবেশ ঘটানোর পূর্বপ্রস্তুতি ছিল। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও বাধার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর উন্মত্ততায় মেতে ওঠে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির কর্মীরা। ঢাকাসহ আটটি জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা হয়। রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটার মধ্য থেকে এ কথা স্পষ্ট যে জামায়াতের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে বিএনপির একটি অংশ দেশব্যাপী একই দিন একই সময়ে একটি বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল। যদি তা না হতো, তাহলে ঢাকার ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এভাবে দেশব্যাপী ঘটত না, একই রকম আচরণের বহিঃপ্রকাশ হতো না।
দেশে হঠাৎ করে গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার বেশ অস্বস্তিতে আছে। তবে সরকার এ ব্যাপারে তার দায় এড়াতে পারে না। এমন একটি অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অবস্থান রাস্তায় কোনোভাবে ঘটানো সম্ভব হলে হয়তো মানুষের সমর্থনও তাড়াতাড়ি পাওয়া যেত। গুপ্তহত্যার বিষয়গুলো এখনো মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়_কারা এর সঙ্গে জড়িত। যারা এ ধরনের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত তারা বেশ দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং নেতিবাচক ধারার লোক। বোঝা যাচ্ছে, দেশব্যাপী একসঙ্গে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের চেয়েও বড় ধরনের সহিংস ঘটনা সংঘটিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকারীরা বেশ অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। সেদিন ঢাকায়ই তারা জড়ো করতে পেরেছিল অসংখ্য তরুণকে_যারা হয়তো জীবন বাজি রেখেই রাস্তায় নেমেছিল। ঢাকার বাইরেও প্রস্তুতির ধরন বেশ গোছানো ছিল। গত সেপ্টেম্বরেও কাকরাইলের মোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আচমকা যেভাবে ভাঙচুর ও তাণ্ডবে নেমে পড়েছিল, সেটি ছিল একটি ছোট্ট রিহার্সাল। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বরের আয়োজনটি অনেক বেশি পরিকল্পিত, দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে জামায়াত ও বিএনপির তরুণ শক্তিকে মিলিতভাবে কাজে লাগানোর ঘটনা। এখানে ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের চোরাগোপ্তা হামলায় প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর ছাপ থাকাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিএনপি যতই এখন ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, কিন্তু বিষয়টি যে চারদলীয় জোটের অভ্যন্তরে বিশেষ কোনো শক্তির বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ ছিল, তা বুঝতে কারো কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয় না। দেশব্যাপী সংঘটিত সহিংস ঘটনার চরিত্র লক্ষ করলে বোঝা যায় যে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করতে মোটেও কুণ্ঠিত নয়, তারা সেভাবেই দীক্ষিত। নৈরাজ্য সৃষ্টির দীক্ষায় প্রশিক্ষিত তারুণ্য দেশকে কোনোভাবেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্তির আস্বাদন গ্রহণে অবদান রাখতে পারে না। এরা ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে বীরত্ব প্রকাশ করতে পারে, কোনো একটি শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য গোপন ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টি ও গড়ার পথ এটি নয়, এ সত্য তারা জানে না। ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের তরুণরা যে ইতিহাস রচনা করেছিল তা কোনো ষড়যন্ত্রের পথে অর্জিত হয়নি; বরং গৌরব, মহিমা ও আত্মত্যাগের সুমহান দীক্ষায় সেই সময় তরুণদের বড় অংশ বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর 'তাহরির স্কয়ার' প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে বিপুলসংখ্যক তরুণ মাঠে নেমেছিল, তারা আসলে ইতিহাসের ভুল পাঠের শিকার। বাংলাদেশে অসংখ্য তরুণ এমন রোমান্টিক বিপ্লববাদের গিলোটিনে আত্মাহুতি দিয়েছে, পেছনের নায়করা বিপ্লবের সুরা পান করিয়ে এসব তরুণকে গিলোটিনে পাঠিয়ে নিজেরা বিত্ত-সম্পদ নিয়ে দিব্যি আছেন। এখন বিপ্লবের সেই যুগ নেই, তার পরও কেউ কেউ তেমন কথাই উচ্চারণ করে কিছুসংখ্যক তরুণের তারুণ্যকে ব্যবহার করেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। তরুণদের সঠিক ইতিহাস ও রাজনীতির পাঠদানের দায়িত্ব তাই জ্ঞানী এবং সৎ নেতৃত্বকে নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইতিহাসবিদ
রাস্তায় কর্মীরা বসে যেতে পারলে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়া সরকারের পক্ষে খুব সহজ হতো কি না বলা মুশকিল। এতে দেশে একটি বড় ধরনের রক্তারক্তির ঘটনা ঘটে যেতে পারত, তাতে 'আন্দোলনকারীরা' দেশে ও বিদেশে এক ধরনের সহানুভূতিও লাভ করতে পারত। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রের সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের আচরণ এক নয়, কোন দল কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকে, কার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটা মহৎ, সৎ ও অগ্রসরমান_তা সব সময় সব মানুষের কাছে সমানভাবে বোধগম্য থাকে না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বুঝতে পারলেও সবাই যে তা ধরতে পারে বা বুঝতে পারে, তা কিন্তু সব সময় বলা যাবে না।
মিসরের তাহরির ময়দানে গণতন্ত্রের জন্য অনেক দল ও গোষ্ঠীই সমবেত হয়েছিল। মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি যৌক্তিক পরিণতি হয়েছিল তাহরির স্কয়ারের অবস্থান ধর্মঘট। বাংলাদেশেও কোনো কোনো মহল থেকে তাহরির স্কয়ারের মতো ঘটনা সংঘটিত করার কথা বলা হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে কি সরকার পরিবর্তনের বৈধ পন্থা নেই? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা থাকা সত্ত্বেও একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে, হটাতে হবে_এমন কথা যাঁরা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, টকশো, লেখালেখি ও আলোচনা সভায় বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্র বলতে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় থাকা, যা খুশি তা করা বা বলাকেই বোঝেন ও মানেন। ক্ষমতায় অন্যের থাকাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে চান না_এটিই বোঝায়। বর্তমান সরকার পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসন করছে। তাদের সব কাজই ভালো হচ্ছে তা কেউ দাবি করে বলে শুনিনি, কেউ তা করলেও এর সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেওয়া যাবে না। কেননা কোনো সরকারই শতভাগ সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশকে পরিচালিত করতে পারবে_তেমনটি আমরা বাস্তবসম্মত মনে করতে পারি না।
এমনি অবস্থায় বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলো বর্তমান সরকারের সমালোচনা করলেও বর্তমান সরকার থেকে আদর্শিক, চারিত্রিক, চিন্তাধারা, পরিকল্পনা ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই তারা অপেক্ষাকৃত ভালো তেমন প্রমাণ অতীতে দিতে পারেনি, বর্তমানেও তাদের তেমন কোনো মিশন-ভিশন আছে বলে দেখা যাচ্ছে না। সে ধরনের অবস্থান থেকে যখন বিএনপি মিসর বা মধ্যপ্রাচ্যের গণ-অভ্যুত্থানের যে স্বপ্ন দেখছে, জনগণকে দেখাচ্ছে তা মোটেও সাযুজ্যপূর্ণ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক আগেই এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এর কোনো তুলনাই চলে না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে বিকশিত করার, সে ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর অবস্থান হচ্ছে গণতন্ত্রে প্রবেশ করার লড়াইয়ের। আমরা ১৯৭১-৭২ সালের গণতন্ত্রে প্রথম প্রবেশ করেছি, ১৯৯০-৯১ সালে দ্বিতীয়বার এবং ২০০৯ সালে তৃতীয়বার প্রবেশ করেছি। সুতরাং বাংলাদেশে যাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের গণ-অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা ঘটানোর তত্ত্ব হাজির করেন, তাঁরা রাজনীতির ইতিহাস কতটা অনুধাবন করে বলেন বা করেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে তরুণদের মধ্যে যারা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখা ও শেখার সুযোগ কম পায় বা মোটেও পায় না, তারা আবেগ ও অন্ধত্ব দিয়ে বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে তা যেভাবে সংঘটিত করতে চায়_তা বিশ্বসভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির অনেক নিয়মমতোই হয় না, বরং তাতে উল্টোটাই বেশি বিদ্যমান। বাংলাদেশে রাজনীতিতে এ ধরনের অন্ধবিশ্বাসের কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তারাই সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনার সঙ্গে নিজের দেশকে একাকার করে মিলিয়ে দেখে অনেক কিছু অর্জনের আশা করে, নিজেরা 'জীবন' দিয়ে তা পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। যেসব রাজনৈতিক নেতা এ ধরনের বক্তব্য দেন, তাঁরা এসব তরুণকে সেভাবেই উজ্জীবিত করেন নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা কী দিতে পেরেছেন, তা তো আমরা নিকট অতীতেই দেখেছি। রাজনীতির জটিল দিকগুলো সৎভাবে বোঝা, জানা ও বাস্তবায়ন করা কত কঠিন কাজ, তা কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই বোঝেন বলে মনে হয় না। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাবলিতে ফিরে আসা যাক।
বাংলা ও ইংরেজি বেশ কয়টি দৈনিক পত্রিকায় ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাবলির যেসব প্রতিবেদন ও সংবাদ ছাপা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে বিএনপির একটি প্রভাবশালী মহল ঢাকায় 'তাহরির স্কয়ারের' অনুরূপ একটি অবস্থান ধর্মঘট সৃষ্টির পরিকল্পনা থেকে ১৮ তারিখ 'মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা' সভার আয়োজন করে। বিজয়ের মাসে এমন কর্মসূচি থাকা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যে কৌশলে 'সংবর্ধনা' সভার কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা স্বাভাবিক ছিল না। বিভিন্ন শহর থেকে তরুণ বয়সের যেসব কর্মীকে বাস বোঝাই করে আনা হচ্ছিল, তাও স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসব কর্মীর অনেকেই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত বলে পত্রপত্রিকাগুলো উল্লেখও করেছে। তা ছাড়া শেষরাতে বা খুব ভোরে রমনা এলাকায় ২০-২৫ বছরের কর্মীদের সমবেত হওয়া, পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করলে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেওয়া, ককটেল ও বোমা ফাটানো, গাড়ি ভাঙচুরে লিপ্ত হওয়া মোটেও সহজ-সরল কোনো ব্যাপার ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপির অনুষ্ঠান বিকেল ৩টায় যেখানে নির্ধারিত ছিল, সেখানে এত ভোরে এসব তরুণের বাস বোঝাই করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অভিমুখে যাওয়া কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়ানোর বিষয় নয়। মতিঝিল, নয়াপল্টন, মালিবাগ-মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় সকালে বাসবোঝাই তরুণদের সরব উপস্থিতি অনেকেরই নজরে পড়েছে। এতে কেউ কেউ তেমন কিছুই হয়তো ভাবতে পারেনি, আবার অনেকেরই মনে এতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ছাত্রশিবিরের কর্মীরাই এতে বিশেষভাবে তৎপর ছিল। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বরিশালসহ অন্য শহরেও সমাবেশ ঘটানোর পূর্বপ্রস্তুতি ছিল। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও বাধার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর উন্মত্ততায় মেতে ওঠে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির কর্মীরা। ঢাকাসহ আটটি জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা হয়। রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটার মধ্য থেকে এ কথা স্পষ্ট যে জামায়াতের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে বিএনপির একটি অংশ দেশব্যাপী একই দিন একই সময়ে একটি বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল। যদি তা না হতো, তাহলে ঢাকার ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এভাবে দেশব্যাপী ঘটত না, একই রকম আচরণের বহিঃপ্রকাশ হতো না।
দেশে হঠাৎ করে গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার বেশ অস্বস্তিতে আছে। তবে সরকার এ ব্যাপারে তার দায় এড়াতে পারে না। এমন একটি অবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অবস্থান রাস্তায় কোনোভাবে ঘটানো সম্ভব হলে হয়তো মানুষের সমর্থনও তাড়াতাড়ি পাওয়া যেত। গুপ্তহত্যার বিষয়গুলো এখনো মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়_কারা এর সঙ্গে জড়িত। যারা এ ধরনের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত তারা বেশ দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং নেতিবাচক ধারার লোক। বোঝা যাচ্ছে, দেশব্যাপী একসঙ্গে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের চেয়েও বড় ধরনের সহিংস ঘটনা সংঘটিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকারীরা বেশ অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। সেদিন ঢাকায়ই তারা জড়ো করতে পেরেছিল অসংখ্য তরুণকে_যারা হয়তো জীবন বাজি রেখেই রাস্তায় নেমেছিল। ঢাকার বাইরেও প্রস্তুতির ধরন বেশ গোছানো ছিল। গত সেপ্টেম্বরেও কাকরাইলের মোড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আচমকা যেভাবে ভাঙচুর ও তাণ্ডবে নেমে পড়েছিল, সেটি ছিল একটি ছোট্ট রিহার্সাল। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বরের আয়োজনটি অনেক বেশি পরিকল্পিত, দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে জামায়াত ও বিএনপির তরুণ শক্তিকে মিলিতভাবে কাজে লাগানোর ঘটনা। এখানে ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের চোরাগোপ্তা হামলায় প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর ছাপ থাকাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বিএনপি যতই এখন ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, কিন্তু বিষয়টি যে চারদলীয় জোটের অভ্যন্তরে বিশেষ কোনো শক্তির বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ ছিল, তা বুঝতে কারো কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয় না। দেশব্যাপী সংঘটিত সহিংস ঘটনার চরিত্র লক্ষ করলে বোঝা যায় যে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করতে মোটেও কুণ্ঠিত নয়, তারা সেভাবেই দীক্ষিত। নৈরাজ্য সৃষ্টির দীক্ষায় প্রশিক্ষিত তারুণ্য দেশকে কোনোভাবেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্তির আস্বাদন গ্রহণে অবদান রাখতে পারে না। এরা ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে বীরত্ব প্রকাশ করতে পারে, কোনো একটি শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য গোপন ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টি ও গড়ার পথ এটি নয়, এ সত্য তারা জানে না। ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের তরুণরা যে ইতিহাস রচনা করেছিল তা কোনো ষড়যন্ত্রের পথে অর্জিত হয়নি; বরং গৌরব, মহিমা ও আত্মত্যাগের সুমহান দীক্ষায় সেই সময় তরুণদের বড় অংশ বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর 'তাহরির স্কয়ার' প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে বিপুলসংখ্যক তরুণ মাঠে নেমেছিল, তারা আসলে ইতিহাসের ভুল পাঠের শিকার। বাংলাদেশে অসংখ্য তরুণ এমন রোমান্টিক বিপ্লববাদের গিলোটিনে আত্মাহুতি দিয়েছে, পেছনের নায়করা বিপ্লবের সুরা পান করিয়ে এসব তরুণকে গিলোটিনে পাঠিয়ে নিজেরা বিত্ত-সম্পদ নিয়ে দিব্যি আছেন। এখন বিপ্লবের সেই যুগ নেই, তার পরও কেউ কেউ তেমন কথাই উচ্চারণ করে কিছুসংখ্যক তরুণের তারুণ্যকে ব্যবহার করেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। তরুণদের সঠিক ইতিহাস ও রাজনীতির পাঠদানের দায়িত্ব তাই জ্ঞানী এবং সৎ নেতৃত্বকে নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইতিহাসবিদ
No comments