অদ্ভুত ফরম্যাটের এক আসর

গ্রুপ পর্ব শেষ। তার পরও রূপসী বাংলা হোটেলে অংশগ্রহণকারী ১০ দলই উপস্থিত। এমন নয় যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিমানের সূচি ভজঘট হয়ে গেছে। আসলে মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের সূচিটাই এমন যে, ফাইনালের দিনেও হোটেলে থাকবে আটটি দল।সচরাচর টুর্নামেন্ট যত এগিয়ে যায়, দলের সংখ্যা ততই কমতে থাকে। কিন্তু মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বকে যেন কোনো সাধারণ টুর্নামেন্ট মনে করলে ভুলই করা হবে।


এমন দুর্বোধ্য সূচি এবং সুদীর্ঘ টুর্নামেন্ট সত্যিকার অর্থেই বিরল। ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপটা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। ভাগ্যিস, ছেলেদের ক্রিকেটে আইসিসি এ 'ফর্মুলা'য় সূচি তৈরি করেনি! তাহলে টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসেই হয়তো অনেকে 'হোমসিক' হয়ে বাড়ি চলে যেতেন!
অংশগ্রহণকারী ১০ দলকে ভাগ করা হয়েছে দুটো গ্রুপে। গ্রুপে সিঙ্গল লিগ পদ্ধতিতে সবার সঙ্গে সবার ম্যাচ। গ্রুপের শীর্ষ দল চলে যাবে সেমিফাইনালে, দ্বিতীয় দল প্লে-অফ খেলবে অন্য গ্রুপের তৃতীয় দলের সঙ্গে। এভাবে দুই গ্রুপের দুটি সেমিফাইনাল প্লে-অফ। সেই ম্যাচে হেরে যাওয়া দল আবার খেলবে অন্য গ্রুপের চতুর্থ দলের সঙ্গে, এই ম্যাচ দুটো হবে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচের দুই দল নির্ণয়ের জন্য। সে ম্যাচে আজ বাংলাদেশ খেলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে, তার কেতাবি নাম 'পঞ্চম স্থান নির্ধারণী সেমিফাইনাল'। সব মিলিয়ে বেশ দুর্বোধ্য, যা শুধু সংবাদমাধ্যমে নয় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে ক্রিকেটারদের মধ্যেও। যেমন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন জানতেন, গ্রুপে দুটো ম্যাচ জিতলেই তৃতীয় হয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়ে যাবে। কিন্তু মধ্যিখানে যে শুভংকরের ফাঁকি হিসেবে 'প্লে অফ' আছে, সেটা বুঝতে পেরেছেন দিন দুয়েক আগে। 'দুটো ম্যাচ জেতাটাই ছিল গ্রুপ পর্বের লক্ষ্য, ভেবেছিলাম দুই ম্যাচ জিতলেই ওয়ানডে মর্যাদা পেয়ে যাব। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি, আরো কিছু পথ বাকি।' এবং এখন অবশ্য সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ সম্পর্কেও জানা আছে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিতলে খেলতে হবে আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার প্লে-অফ ম্যাচের জয়ী দলের সঙ্গে। এত দিন বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো বাছাই পর্বেই প্লে-অফ শব্দটা শোনা যেত, এখন ক্রিকেটেও চলে এসেছে প্লে-অফ। শুধু তা-ই নয়, মূল আয়োজনের বছর দুয়েক আগে হয়ে যাওয়া মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব রীতিমতো প্লে-অফের ভারে ভারাক্রান্ত! পয়েন্ট টেবিলের তলানির দুই দলকে নিয়ে হয়েছে ৯ম-১০ম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফ। ২৬ নভেম্বর ফাইনালের সঙ্গে সমানতালে চলবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী প্লে-অফ, ৫ম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফ ও ৭ম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফ। দুর্ভাগ্য শুধু রানার্সআপ দলের! তারা প্লে-অফ খেলার জন্য কোনো প্রতিপক্ষ পাচ্ছে না। ফাইনালের পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের জয়ী দলের সঙ্গে রানার্সআপ দলের একটা প্লে-অফ ম্যাচ আয়োজনের ধারণাটা কেন যে আইসিসির কর্তাব্যক্তিদের মাথায় এল না!

No comments

Powered by Blogger.