সমুদ্রসৈকতে আমরা ... by সাইফা আলম সঞ্চি ও লিজা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবন। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও সেমিনার উপস্থাপনার এক ব্যস্তময় মুহূর্ত। এগুলো শেষ করে আবার ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে বাসা, আবাসিক হল অথবা মেসে যাওয়া। মাঝে মধ্যে এটি আবার একঘেয়েমিতে রূপ নেয়। সেই একঘেয়েমি জীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে এবারের শীতের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে ব্যতিক্রমী সব শিক্ষা সফর।


তাই নিজেদের চলতি জীবনে শীতের একটুখানি হিমেল পরশ ছড়িয়ে দিতে সম্প্রতি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি আয়োজন করে এক আনন্দের শিক্ষা সফর।
ছাত্রকল্যাণ সমিতির এ শিক্ষা সফরের গন্তব্যের তালিকায় ছিল সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বকুলতলায় ভোর ৬টায় জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও সবাই নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে আসতে সকাল ৭টা বেজে যায়। পরে হুড়মুড় করে ক্যাম্পাস থেকে বাসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় ঝালকাঠি জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণ। প্রথমেই চলে নিজেদের গ্রুপ ছবি তোলার হিড়িক যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্যাম্পাস জীবনে যারা বাথরুম সিঙ্গার হিসেবে খ্যাত তারাও 'আমিও পারি' বলে নিজেকে জাহির করতে জোর গলায় বেসুরে সুরে জুড়ে দেয় জনপ্রিয় সব গান। এটি বাসের ভেতর এক অন্য রকম পরিবেশের সৃষ্টি করে। এতে তাল মেলায় অন্য সহপাঠীরাও। তাই তো চিৎকার-চেঁচামেচি করতে গিয়ে অনেকে তাদের নিজস্ব সুন্দর সুরটিও সাময়িকের জন্য খুঁইয়েছেন। ক্যাম্পাসকে আমরা বিদায় না জানাতে চাইলেও ক্যাম্পাসই যে আমাদের বিদায় দিতে চাচ্ছে। এ নবীন বয়সে একটু রেওয়াজ করে নিচ্ছিলাম আর কি! এভাবেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বাসে চিৎকার-চেঁচামেচি উপেক্ষা করেই জোর গলায় আওয়াজ দেন সমিতির সহ-সভাপতি ও কৃষি অনুষদের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র নাজমুল হক হাওলাদার এবং ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী মাহবুবা তাসমিন ঐশী। তাদের এ বক্তব্যের সঙ্গে ইশারায় আওয়াজ দেন কৃষি অনুষদের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্রী মোমেনা মেহেরিন সুইটি, সমিতির সভাপতি কাওসার সিকদার, বিবিএ অনুষদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আসাদুর রহমান সনন ও ওয়াদুদ, কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের মরিয়ম আক্তার মৌসুমী, শাহজালাল এবং আতিক।
পুরো ৩ ঘণ্টা বাসে হৈ-হুল্লোড় শেষে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সকাল সাড়ে ১০টায় বাস থামে। আবারও চিরাচরিত আওয়াজ দিয়েই সবাই নেমে যায়। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের একঘেয়েমি জীবনের গ্গ্নানি থেকে মুক্ত হতে সবাই বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র ও সাংবাদিক গোলাম মাওলা এবং কৃষি অনুষদের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রী তারিন সাবরিন তামান্না বলেন, 'উফ! কোথা থেকে কোথায় এলাম।' নিজের ক্লান্তি দূর করার আগে সবাই সমস্বরে একইভাবে উক্তি করে। তাদের অনুভূতি দেখে যেন মনে হয়, দীর্ঘদিন খাঁচায় ভর্তি বিষণ্নমনা পাখিগুলো আজ মুক্তি পেয়েছে। সাগরের পানিতে পানি ছিটাছিটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায় ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়ার সেই স্মৃতিতে। দুপুরে সবাই খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার সমুদ্রসৈকতে। এবারে যেন আগের চেয়ে আরও আনন্দ উপভোগ করা। পানির ভেতরে নাচা-নাচি, কেউবা ফ্যাশন শো দেখান আবার কাউকে মাইকেল জ্যাকসনের মতো ড্যান্স দিতে দেখা যায়। গোলাম মোর্শেদ এবং সোলায়মান রাকিব সবাইকে কৌতুক শুনিয়ে আনন্দটা আরও বাড়িয়ে দেন। এবার ফিরে আসার গল্প। ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময় সমিতির উপদেষ্টামণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের যেমনটা দেখাচ্ছিল তার উল্টোটা ঘটে ঠিক ফিরে আসার সময়। সবার চোখে-মুখে কেমন যেন একরাশ বিরক্তি, বিষণ্নতা ও মনমরা ভাব! চলে আসতে চাইলে কি এই মজার সমুদ্রসৈকত থেকে আসা যায়! ভ্রমণের ওই কয়েক ঘণ্টায় মনে হয়েছিল জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ যেন এখানেই নিহিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের এতটা বছরে যতটা আনন্দ করেছি তার থেকেও বেশি আনন্দ করেছি এ কয়েক ঘণ্টায়।

No comments

Powered by Blogger.