চিত্রনাট্যে পলায়ন পর্ব অতঃপর গৃহপ্রবেশ by দাউদ হোসাইন রনি
চমৎকার একটা চিত্রনাট্য সাজিয়ে বসেছেন সারিকা। সেই চিত্রনাট্যের ফাঁদে পা দিয়ে গুজব বানানোর কারিগররা রীতিমতো দিশেহারা! এরই মধ্যে খরচ করে ফেলেছেন দিস্তার পর দিস্তা কাগজ। বাট, দ্য গেইম ইজ ওভার নাউ! পলায়ন পর্ব সেরে আবার হাতের নাগালে চলে এলেন সারিকা। ফাঁস করে দিয়েছেন চিত্রনাট্যের প্রতিটি দৃশ্য। লিখেছেন দাউদ হোসাইন রনি
দীঘি জলে কার ছায়া? চটপটে কন্যার ঝটপট উত্তর, 'দীঘি পাড়ে যে থাকবে তার ছায়াই হবে। জিজ্ঞেস করার মতো কোনো প্রশ্ন হলো এটা?' উত্তর দিলেন বটে সারিকা। কিন্তু ভাবনায় ডুবে রইলেন। ভাবলেন, প্রশ্নকর্তার নিশ্চয়ই অন্য মতলব আছে। সাংবাদিক বলে কথা! তাঁর কথায় এতটা অনাস্থা রাখা ঠিক হচ্ছে না। পুবাইলের শুটিং ইউনিটে তখন মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। পাশেই টলটলে দীঘি। এক দৌড়ে দীঘির পাড়ে সারিকা। স্বচ্ছ দীঘির জলে তাকিয়ে আঁতকে উঠলেন_একি, জলে এটা কার ছবি! জলের ওপর সারিকা, কিন্তু জলে ভাসে যন্ত্রের ছবি। অচেনা যন্ত্রটা বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছিল তাঁকে। মুখে কথা নেই। এক ধরনের অসহায়ত্ব মেয়েটার চোখে-মুখে।ঠিক তিন মাস পর গত সোমবার রাতে সেই সাংবাদিকের ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে কল। ফোনের ওপারে রীতিমতো উচ্ছ্বাসে কাঁপছেন সারিকা_'অবশেষে আমি নিজেকে খুঁজে পেলাম। দীঘির জলে সারিকা এখন সারিকাকেই দেখে। হাহ।'
সারিকার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলেন না সাংবাদিক।
'কী বলছ আবোল-তাবোল! গুজবে গুজবে সারা দেশ সয়লাব। সারিকা নেই। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। মিডিয়ার বাতাসে আরো কত্ত রসালো আলাপ!...হেই হেই...ওয়েট অ্যা মিনিট, তবে কি আমি রং নাম্বারে সারিকার প্রেতাত্মার সঙ্গে কথা বলছি?'
ফোনের ওপারে ঢেউ ভাঙা হাসির অনুরণন। নিজেকে সামলে নিয়ে সারিকা বলেন, 'ওকে ওকে। আমি এখন কঙ্বাজার সমুদ্রসৈকতে, সি-ফুড খাচ্ছি। কাল ১২টার ফ্লাইটে আমি আর নিরব ঢাকায় ফিরছি। কথা হবে আমনে-সামনে।'
মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময়টা সাংবাদিকের জন্য 'লাইফটাইম চমক'। এত এত কাণ্ড ঘটে গেল, অথচ চোখে-মুখে চিন্তার রেশমাত্র নেই সারিকার। হো হো শব্দে হেসে উঠে বলেন, "যত্তসব গুজব! আজকাল গুজব বানানোটাও কারো কারো অতিরিক্ত 'জব'। আর কারো রুটি-রুজির হাতিয়ার নিয়ে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার মতো মেয়ে আমি অন্তত নই। আফটার অল গুজব তৈরির উপকরণগুলো তো আমিই হাতে তুলে দিয়েছি। হা হা হা!'
তার মানে চিত্রনাট্যটা আগে থেকে তৈরিই ছিল?
সারিক এবার নড়েচড়ে বসলেন। জবানবন্দি দেওয়ার স্টাইলে বলে চলেন আত্মকথন। 'দীঘি জলে কার ছায়া? এই প্রশ্নটা করেছিলেন মাস তিনেক আগে, পুবাইলে। মনে আছে?'
_হুম।
'আমি তখন দীঘি জলে নিজেকে দেখতে পাইনি। ঠিকই আছে। বাইরে থেকে দেখতে যতই চাকচিক্যভরা, ভেতরের আমি হয়ে উঠেছিলাম একটা যন্ত্র। বিশ্বাস করবেন না, গত দুই ঈদে ৪২টা নাটক-টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছিল আমার। এবার বুঝুন, অভিনয় করেছিলাম কতগুলো নাটকে! সব তো আর প্রচারিত হয় না। নিজের জন্য কোনো সময় নেই আমার। আমি কিন্তু এই যান্ত্রিক জীবন চাইনি কখনো। মিডিয়া থেকে নয়, নিজের কাছ থেকে পালাতে চেয়েছি বহুবার। আগেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। ঈদের আগে 'দেশ সেভেন'-এর বিজ্ঞাপনচিত্রে টানা ৯ দিন খেটেছি। বৃষ্টিতে ভিজেছি টানা তিন দিন। যদিও জলের সঙ্গে আমার সখ্য, কিন্তু অতিরিক্ত মাখামাখি সহ্য হয়নি শরীর মহাশয়ের। ঈদের পর দুদিন ছুটি পেয়ে লোভটা আরো বেড়ে গেল। কাছের মানুষজনকে বলে, মোবাইল অফ করে, কাজিনদের সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম কঙ্বাজারে।'
_জলে নাকানি-চুবানি খেয়ে ফের জলের [সমুদ্র] কাছেই ছুটে যাওয়া!
'আমি তো কুম্ভকন্যা। এই রাশিটা খুব খারাপ। জলে আমার মরণ, জলেই প্রচণ্ড সুখ।
_গুজবটা তাহলে রটল কিভাবে?
'কারো শিডিউল ফাঁসাতে চাইনি আমি। কিন্তু ১২ নভেম্বর একটা নাটকের জন্য ডেট দিয়েছিলাম। দিয়েই মনে হলো, ভুল করে ফেলেছি। নিজেকে ফিরে পেতে হলে শিডিউল ফাঁসানো নিয়ে ভাবলে চলবে না। ফোন বন্ধ রেখেছি এ কারণেই। আমি জানি, ফোন চালু থাকলে কাছের মানুষদের অনুরোধ আমি ফেলতে পারব না। অতীতেও পারিনি। আমাকে না পেয়ে মার কাছে ফোন করেছিলেন অনেকে। মা একবার বললেন আমি খালার বাসায়। আবার বললেন, জানি না। গুজব হওয়ার জন্য আর কিছু লাগে! তবে গুজব হওয়ার পর, আমি কিন্তু মজাই পেয়েছি। নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এখন।'
_পালিয়েই যখন যাবে, নিরবকে কেন সঙ্গে নিলে না? ও তো তোমার বন্ধু।
'আমি তো পালিয়ে বেঁচেছি। নিরব পারেনি। বেচারা ফেঁসে গেছে সিনেমার ডাবিং নিয়ে। ওর যখন কাজ শেষ হলো, এক দৌড়ে কঙ্বাজার চলে এল। ফিরলাম তো একসঙ্গেই। আমার কাজ কিন্তু হয়েছে। ভাইরাসে ধরা সফটওয়্যারটা সমুদ্রের জলে ফেলে নতুন করে ইনস্টল করে নিলাম। দেখুন, এখন অনেক ফাস্ট। চলে না শুধু দৌড়ায়।' বলেই হাসি।
গুজব বানানোর কারিগরদের হাতে যে কাদামাটি তুলে দিয়েছিলেন সারিকা, তার একটা মূর্তি তো তৈরি হলো। এবার সে মূর্তিটা ভেঙে ফেলার সময়। একবাক্যে মেনে নিলেন সারিকা।
'এই কানে ধরলাম। আর পালাব না। নতুন স্পিডে এবার কাজ শুরু করব। হাতের কাজগুলোর জন্য ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মাঠে নেমে পড়ব।'
_ভালো কথা। তুমি আর নিরব বিয়ে করে ফেললেই তো পারো। দেরি করছ কেন?
'মাঝেমধ্যে তো মনে হয়, এখনই বিয়ে করে ফেলি। আবার মনে হয়, এতটা লোড নেওয়ার শক্তি কি আমার এখনই হবে? ভয় নেই। আজ হোক কাল হোক, বিয়ে আমরা করব।'
সারিকার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলেন না সাংবাদিক।
'কী বলছ আবোল-তাবোল! গুজবে গুজবে সারা দেশ সয়লাব। সারিকা নেই। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। মিডিয়ার বাতাসে আরো কত্ত রসালো আলাপ!...হেই হেই...ওয়েট অ্যা মিনিট, তবে কি আমি রং নাম্বারে সারিকার প্রেতাত্মার সঙ্গে কথা বলছি?'
ফোনের ওপারে ঢেউ ভাঙা হাসির অনুরণন। নিজেকে সামলে নিয়ে সারিকা বলেন, 'ওকে ওকে। আমি এখন কঙ্বাজার সমুদ্রসৈকতে, সি-ফুড খাচ্ছি। কাল ১২টার ফ্লাইটে আমি আর নিরব ঢাকায় ফিরছি। কথা হবে আমনে-সামনে।'
মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময়টা সাংবাদিকের জন্য 'লাইফটাইম চমক'। এত এত কাণ্ড ঘটে গেল, অথচ চোখে-মুখে চিন্তার রেশমাত্র নেই সারিকার। হো হো শব্দে হেসে উঠে বলেন, "যত্তসব গুজব! আজকাল গুজব বানানোটাও কারো কারো অতিরিক্ত 'জব'। আর কারো রুটি-রুজির হাতিয়ার নিয়ে মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার মতো মেয়ে আমি অন্তত নই। আফটার অল গুজব তৈরির উপকরণগুলো তো আমিই হাতে তুলে দিয়েছি। হা হা হা!'
তার মানে চিত্রনাট্যটা আগে থেকে তৈরিই ছিল?
সারিক এবার নড়েচড়ে বসলেন। জবানবন্দি দেওয়ার স্টাইলে বলে চলেন আত্মকথন। 'দীঘি জলে কার ছায়া? এই প্রশ্নটা করেছিলেন মাস তিনেক আগে, পুবাইলে। মনে আছে?'
_হুম।
'আমি তখন দীঘি জলে নিজেকে দেখতে পাইনি। ঠিকই আছে। বাইরে থেকে দেখতে যতই চাকচিক্যভরা, ভেতরের আমি হয়ে উঠেছিলাম একটা যন্ত্র। বিশ্বাস করবেন না, গত দুই ঈদে ৪২টা নাটক-টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছিল আমার। এবার বুঝুন, অভিনয় করেছিলাম কতগুলো নাটকে! সব তো আর প্রচারিত হয় না। নিজের জন্য কোনো সময় নেই আমার। আমি কিন্তু এই যান্ত্রিক জীবন চাইনি কখনো। মিডিয়া থেকে নয়, নিজের কাছ থেকে পালাতে চেয়েছি বহুবার। আগেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। ঈদের আগে 'দেশ সেভেন'-এর বিজ্ঞাপনচিত্রে টানা ৯ দিন খেটেছি। বৃষ্টিতে ভিজেছি টানা তিন দিন। যদিও জলের সঙ্গে আমার সখ্য, কিন্তু অতিরিক্ত মাখামাখি সহ্য হয়নি শরীর মহাশয়ের। ঈদের পর দুদিন ছুটি পেয়ে লোভটা আরো বেড়ে গেল। কাছের মানুষজনকে বলে, মোবাইল অফ করে, কাজিনদের সঙ্গে নিয়ে রওনা হলাম কঙ্বাজারে।'
_জলে নাকানি-চুবানি খেয়ে ফের জলের [সমুদ্র] কাছেই ছুটে যাওয়া!
'আমি তো কুম্ভকন্যা। এই রাশিটা খুব খারাপ। জলে আমার মরণ, জলেই প্রচণ্ড সুখ।
_গুজবটা তাহলে রটল কিভাবে?
'কারো শিডিউল ফাঁসাতে চাইনি আমি। কিন্তু ১২ নভেম্বর একটা নাটকের জন্য ডেট দিয়েছিলাম। দিয়েই মনে হলো, ভুল করে ফেলেছি। নিজেকে ফিরে পেতে হলে শিডিউল ফাঁসানো নিয়ে ভাবলে চলবে না। ফোন বন্ধ রেখেছি এ কারণেই। আমি জানি, ফোন চালু থাকলে কাছের মানুষদের অনুরোধ আমি ফেলতে পারব না। অতীতেও পারিনি। আমাকে না পেয়ে মার কাছে ফোন করেছিলেন অনেকে। মা একবার বললেন আমি খালার বাসায়। আবার বললেন, জানি না। গুজব হওয়ার জন্য আর কিছু লাগে! তবে গুজব হওয়ার পর, আমি কিন্তু মজাই পেয়েছি। নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এখন।'
_পালিয়েই যখন যাবে, নিরবকে কেন সঙ্গে নিলে না? ও তো তোমার বন্ধু।
'আমি তো পালিয়ে বেঁচেছি। নিরব পারেনি। বেচারা ফেঁসে গেছে সিনেমার ডাবিং নিয়ে। ওর যখন কাজ শেষ হলো, এক দৌড়ে কঙ্বাজার চলে এল। ফিরলাম তো একসঙ্গেই। আমার কাজ কিন্তু হয়েছে। ভাইরাসে ধরা সফটওয়্যারটা সমুদ্রের জলে ফেলে নতুন করে ইনস্টল করে নিলাম। দেখুন, এখন অনেক ফাস্ট। চলে না শুধু দৌড়ায়।' বলেই হাসি।
গুজব বানানোর কারিগরদের হাতে যে কাদামাটি তুলে দিয়েছিলেন সারিকা, তার একটা মূর্তি তো তৈরি হলো। এবার সে মূর্তিটা ভেঙে ফেলার সময়। একবাক্যে মেনে নিলেন সারিকা।
'এই কানে ধরলাম। আর পালাব না। নতুন স্পিডে এবার কাজ শুরু করব। হাতের কাজগুলোর জন্য ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মাঠে নেমে পড়ব।'
_ভালো কথা। তুমি আর নিরব বিয়ে করে ফেললেই তো পারো। দেরি করছ কেন?
'মাঝেমধ্যে তো মনে হয়, এখনই বিয়ে করে ফেলি। আবার মনে হয়, এতটা লোড নেওয়ার শক্তি কি আমার এখনই হবে? ভয় নেই। আজ হোক কাল হোক, বিয়ে আমরা করব।'
No comments