বিএনপি-রুবেল-বাদশা দুই মেরুতে

শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী আসনে বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুুল হক রুবেল। পিতা প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সেরাজুল হকের উত্তরাধিকারী হিসেবে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে আস্তে আস্তে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছেন তিনি। তিনি এখন জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদক। শেরপুর-৩ আসনে প্রথমে উপনির্বাচনে, আর ২০০১ সালে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত


হয়েছিলেন তরুণ এই নেতা। কিন্তু ২০০৮ সালে আপন চাচা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনের নিকট পরাজিত হন। তাঁর এই পরাজয়ের পেছনে এমপি থাকাকালীন নিজস্ব কিছু কর্মকাণ্ড এবং দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা ভূমিকা রেখেছে বলে স্থানীয় নেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন। গত নির্বাচনে এখানে দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, শ্রীবরদীতে মাহমুদুল হক রুবেলের কোপানলে পড়ে স্থানীয় রাজনীতি থেকে অনেকটা নির্বাসিত সময় কাটাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রউফ। রুবেলের পছন্দের লোক হিসেবে বর্তমানে সভাপতি পদে বসানো হয়েছে পৌর মেয়র মো. আবদুল হাকিমকে। রউফ-সমর্থকরা দলে এখন অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। দলীয় কোন্দলের কারণে যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটিও করা সম্ভব হচ্ছে না।
একদিকে দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন। এই দুই কারণে শ্রীবরদীতে বিএনপি মাঠের রাজনীতি জমিয়ে তুলতে পারছে না। বিএনপির দলীয় কোনো কর্মসূচিই শ্রীবরদীতে পালিত হচ্ছে না। এমনকি সাম্প্রতিককালের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোতেও রাজপথে এখানকার বিএনপিকে দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে দলীয় পদবিধারী নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় কোন্দল নয়, বরং কৌশলগত কারণেই এখানে দলীয় কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, 'রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে গেলেই সাধারণ নেতা-কর্মীদের ওপর শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। গ্রেপ্তার, মামলা-মোকদ্দমা ও হয়রানি থেকে সাধারণ নেতা-কর্মীদের রক্ষা করতেই বর্তমানে রাজপথের প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচি, মিটিং-মিছিল দলীয় ব্যানারে হচ্ছে না। তবে এই সময়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে এবং এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।' এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি পৌর মেয়র মো. আবদুল হাকিম এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহিম দুলাল বলেন, 'আমাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা এখানে বেশ মজবুত। নেতা-কর্মীরা সবাই সংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুত। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমা এবং পুলিশি হয়রানির কারণে আমরা প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতেই যাচ্ছি না। সময় হলে ঠিকই সবাই মাঠে নামবে। শ্রীবরদীতে এখন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএপির অবস্থান শক্তিশালী। দলীয় ঐক্যের কারণে আমরা মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছি। সামনে সময় আসছে। শ্রীবরদী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যা শুরু করেছেন, তাতে তাঁরা রাস্তায় বের হতে পারবেন না। জনগণই তাদের দৌড়াবে।'
এদিকে, ঝিনাইগাতী উপজেলায় বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা। আগামী নির্বাচনে বাদশা সংসদ সদস্য পদে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইউপি মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যক্তিগত কারিশমায় তিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। রুবেলের জন্য বাদশা হুমকি হয়ে উঠতে পারেন, এমন আশঙ্কায় এখন থেকেই তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। এমন অভিযোগ বাদশা-সমর্থকদের। তাই সাবেক সভাপতি আবদুস সালামকে বাদশার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাদশা-সালাম দ্বন্দ্বে ঝিনাইগাতীতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, 'ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম এখন স্থবির ও নিষ্ক্রিয়। গঠনতন্ত্র না মেনে কেউ কেউ ব্যক্তিতান্ত্রিকভাবে দল চালাতে গিয়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখানে সরকারি দল আওয়ামী লীগ কিংবা পুলিশের কোনো অ্যাকশন বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নেই।' সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক রুবেল তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি দল থেকে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন না দিলে বঞ্চিত ঝিনাইগাতীবাসীর পক্ষে শেরপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব।
সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেল চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.