বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপ by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
বাংলাদেশ বীমা নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার আগে সরকারের বীমা বিভাগ সব কাজকর্ম দেখাশোনা করত। সাধারণত সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের একজন যুগ্ম সচিব কিংবা অতিরিক্ত সচিব বীমা বিভাগের প্রধান হয়ে আসতেন। তাঁর পদবি মুখ্য বীমা নিয়ন্ত্রক। তাঁর অধীনে আরো কিছু কর্মকর্তা ছিলেন যেমন_উপনিয়ন্ত্রক, সহনিয়ন্ত্রক ইত্যাদি। প্রধান যিনি আসতেন, তিনি তো একে স্প্রিং বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে পরবর্তী পদে যাওয়ার জন্য অস্থির
থাকতেন। নিচের দিকে যাঁরা থাকতেন, তাঁরাই সব কাজকর্ম করতেন। অদক্ষতা এবং দুর্নীতি পুরো বিভাগকে গ্রাস করে রেখেছিল। ফলে মনে করা হলো যে কোনো সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হলে তা অধিক দায়িত্বপূর্ণ হবে এবং গতিশীলতা অর্জন করবে। এরই আলোকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় বীমা নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর আরেকটা সুবিধা হলো, সরকারের ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে যেকোনো অভিজ্ঞ এবং পেশাজীবীকে কর্তৃপক্ষ প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। অন্যান্য পদেও অনুরূপ লোক নিয়োগ করা সম্ভব হবে। সরকার বেসরকারি খাত থেকে নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে যে তিনি নিছক ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিমতো কিংবা চমক দেখানোর জন্য কাজ করছেন। তিনি কোনো হোমওয়ার্ক করেছেন বলে মনে হয় না। যখন কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর উচিত অতীত কার্যকলাপ বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা করে দেখা। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন। এই অর্থে তার পূর্বসূরি নেই। কিন্তু বীমা বিভাগ তো পুরনো। সেখানকার আর্কাইভের নথিপত্র দেখা উচিত ছিল। বীমা কর্তৃপক্ষ ফরমান জারি করেছে যে একজন শেয়ারহোল্ডার বীমা পরিচালক আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান যথা_ব্যাংক-বীমার পরিচালক হতে পারবেন না। এ বিধিটি আগেও ছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র কাগজ বা নথিনির্ভর। যেমন_একজন পরিচালক হতে হলে তাঁকে আয়কর সার্টিফিকেট কিংবা অভিজ্ঞতার সনদপত্র দিতে হবে। এসব কাগজ পেলে আমলারা খুশি। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা দেখার বা খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এখানে আরো একটি কথা বলার প্রয়োজন_১৯৯১ সালে দেশে আবার গণতান্ত্রিক সরকার চালু হয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ পর্যায়ক্রমে শাসন চালিয়ে আসছে। এই সময় যত ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সবই দলীয় বিবেচনায় করা হয়েছে। দল তাদের, প্রার্থী তাদের। কাউকে ব্যাংক, বীমা কিংবা টিভি চ্যানেল বরাদ্দ করা হয়েছে। আবার যাঁরা বেশি ক্ষমতাধর, তাঁরা ব্যাংক, বীমা, টিভি চ্যানেল_সবই পেয়েছেন। যেহেতু অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি এভাবে নেওয়া হয়ে থাকে, সেহেতু পেশাগত দক্ষ লোক খোঁজার ব্যাপারটা অবান্তর। ধরা যাক একটি উদাহরণ। বাবা যেহেতু ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। অতএব তাঁর ছেলেকে পরিচালক করা হলো। বয়স কম। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করছে। অথচ বিভিন্ন সনদপত্রে দেখানো হলো যে ১০ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং পারিবারিকভাবে পৃথক অবস্থান। কম্পানি অনুমতি পেল। কম্পানি আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। মূল পরিচালকের দেখা নেই। বছরের পর বছর বিকল্প পরিচালক হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি দুটি বীমা কম্পানির প্রতিষ্ঠালগ্নে কম্পানি সচিব কাম জেনারেল ম্যানেজারের (প্রশাসন) দায়িত্ব পালন করেছি। আরো মজার ব্যাপার হলো, দু-দুটো সরকারের আমলে। অতএব কত রকম খেলা হয়, তা প্রত্যক্ষ করেছি। এ নিয়ম থাকা অর্থহীন ছিল বলে এটা বাতিল করা হয়েছে। হ্যামলেটের ভাষায়_"Honoured more in breakth throw of servance." আবার কেন এই খেলা। একজন উদ্যোক্তা যদি একাধিক প্রতিষ্ঠানে যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে আপত্তিটা কোথায় এবং কেন? যেটা দেখার তা হলো, তিনি Rules of games মেনে চলছেন কি না? এরপর আরেকটি আপত্তি এসেছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে। তা হলো, সাধারণ বীমা করার রেট বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বীমা অ্যাসোসিয়েশন কিংবা বিজিএমইএ এবং আরো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এখানে একটি কথা বলতে চাই। আমি যখন কোনো এক বীমা কম্পানিতে চাকরি করতাম, তখন ভারতের বিখ্যাত বিড়লা কম্পানির মালামালসহ জাহাজ ডুবে যায়। কী মাল এবং কোথা থেকে আসছিল, তা মনে নেই। আর কাজের পরিধি_এসব ব্যাপার এত গভীরে যাওয়ার কথা নয়। সেই সময় বিড়লার প্রতিনিধিকে বলতে শুনেছিলাম যে সিঙ্গাপুর এবং ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে দেয় প্রিমিয়ামের রেট অনেক বেশি। কতটা ঠিক বলেছিলেন তা বলতে পারব না। তবে এটা লক্ষণীয় যে বাংলাদেশের অনেক পণ্যের মূল্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ছোট দুটি উদাহরণ দিই। দাঁতের পেস্ট এবং দৈনিক পত্রিকা, ভারতের সঙ্গে তুলনা করে দেখবেন যে দাম বেশ চড়া। স্টক এঙ্চেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার জন্য যে চাঁদা দিতে হয়, তা এ অঞ্চলের অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমান এই উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্য দেশে না গিয়ে বা পত্র চালাচালি না করে সরাসরি ওয়েবসাইটে ঢুকে অনেক তথ্য এককথায় সব তথ্য সংগ্রহ করা যায়। বীমা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে আশপাশের দেশের বীমার কী হার, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারপর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এটা বলাই বাহুল্য যে পোশাকশিল্পের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আর একটি কথা_এই মর্মে নাকি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে যে কোনো বীমা কম্পানির ডিরেক্টরের মালিকানার কোনো কম্পানির বীমা করার প্রয়োজন হলে তা তাঁর নিজের কম্পানিতে করতে পারবেন না। প্রথমত, কোনো পাবলিক লিমিটেড কম্পানিতে একক মালিকানা বলে কিছু নেই। তাই আপাতত এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। তবে একটি বিষয়ে আলাপ করতেই হবে। তা হলো, কয়েকজন শিল্পপতি মিলে একটা অলিখিত সিন্ডিকেট করে ফেলেন। তারপর একটি ব্যাংক এবং একটি সাধারণ বীমা কম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের মালিকানায় বা উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সব কম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক ও বীমা কম্পানির মাধ্যমে করে থাকেন। এক অর্থে এটা মনোপলি। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, আগে ভারতে এ রকম একটা প্রশ্ন উঠেছিল এবং এ রকম কথা হয়েছিল যে সংশ্লিষ্ট কম্পানির বীমা ব্যবসার অর্ধেক তাদের কম্পানিতে দিতে পারবে। অর্থাৎ একটা পথ বের করতে হবে, যাতে এভাবে মনোপলি বিজনেস গড়ে না ওঠে। এখানে আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন। যদিও বীমা কম্পানিকে পাবলিকের কাছে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করা বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স প্রদানের শর্তের মধ্যে অন্যতম এই খাত। কাগজ-কলমে করাও হয়েছে। তবে তথ্য সংগ্রহ করলে দেখা যায় যে পাবলিক শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বহু কায়দা-কানুন করা হয়েছে যেমন_প্লেসমেন্ট অব শেয়ার ইত্যাদি। আজ যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের এই অস্থিতিশীল অবস্থা, তার অন্যতম কারণ হলো, কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি শেয়ারবাজারের নিয়ম-কানুন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এক অর্থে লুটপাট করে নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাঁড়ছেন। যাক, এসব কথা প্রসঙ্গক্রমে এসে গেল।
বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম চলছে এবং ব্যবসায় আন্ডারকস্ট করে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে পারে না। এসবের অবসানের জন্য প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন কোড অব কনডাক্ট তৈরি করেছিল। সব বীমা কম্পানি স্বাক্ষর করেছিল। কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি অতীব গুরুতর অনিয়ম রয়েছে, তা অন্য সেক্টরে পাওয়া যাবে না। তা হলো, এক ব্যক্তি অন্য একটি কম্পানিতে কর্মরত জানার পরও ছাড়পত্র না নিয়ে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর অবসানের কথাও ওই কোডে ছিল, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৎকালীন বীমা বিভাগ খাম গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করত। যদিও প্রতিটি কম্পানির হায়ার এবং ফায়ারের অধিকার থাকবে। তবুও এর একটা সীমারেখা থাকার কথা। ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুখ্য নির্বাহী। তাঁর নিয়োগ এবং প্রস্থান শালীনভাবে হওয়া উচিত। আমি দু-একজন এমডিকে এমন হেনস্তা হতে দেখেছি, যা কল্পনা করা যায় না। এ দিকটিও বীমা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
বীমা কর্তৃপক্ষকে দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর তা করতে গেলে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। আমাদের দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না, তার মূল কারণ দায়বদ্ধতার অভাব। কোনো একজন ব্যক্তি যখন অতি উচ্চপদে আসীন হন, তখন তাঁর লক্ষ্য থাকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখা। কেননা তিনি মনে করেন, এই কাজটুকু করতে পারলে তিনি তাঁর মেয়াদ কাটিয়ে দিতে পারবেন। আর এর ফলে আরেকটা জিনিস দেখা যায়। যেহেতু তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা নেই জনগণের প্রতি, তাই তিনি তাঁর নিজের খেয়ালখুশিমতো কাজ করে যান। কখনো অ্যাডভেঞ্চার, আবার কখনো চমক দেখাতে চান।
বীমা কর্তৃপক্ষের প্রধান যদি দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করেন, তবেই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম সার্থক হবে। এখানে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন। যদি বীমা কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্নীতি বা অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে সবাই তাঁকে সমর্থন দেবেন। এখন এ কথা বলা হবে না যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমর্থন আদায় করুন।
লেখক : সাবেক ইপিএস ও কলামিস্ট
আর একটি কথা_এই মর্মে নাকি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে যে কোনো বীমা কম্পানির ডিরেক্টরের মালিকানার কোনো কম্পানির বীমা করার প্রয়োজন হলে তা তাঁর নিজের কম্পানিতে করতে পারবেন না। প্রথমত, কোনো পাবলিক লিমিটেড কম্পানিতে একক মালিকানা বলে কিছু নেই। তাই আপাতত এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। তবে একটি বিষয়ে আলাপ করতেই হবে। তা হলো, কয়েকজন শিল্পপতি মিলে একটা অলিখিত সিন্ডিকেট করে ফেলেন। তারপর একটি ব্যাংক এবং একটি সাধারণ বীমা কম্পানি প্রতিষ্ঠা করে তাঁদের মালিকানায় বা উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সব কম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক ও বীমা কম্পানির মাধ্যমে করে থাকেন। এক অর্থে এটা মনোপলি। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, আগে ভারতে এ রকম একটা প্রশ্ন উঠেছিল এবং এ রকম কথা হয়েছিল যে সংশ্লিষ্ট কম্পানির বীমা ব্যবসার অর্ধেক তাদের কম্পানিতে দিতে পারবে। অর্থাৎ একটা পথ বের করতে হবে, যাতে এভাবে মনোপলি বিজনেস গড়ে না ওঠে। এখানে আরো একটি কথা বলা প্রয়োজন। যদিও বীমা কম্পানিকে পাবলিকের কাছে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করা বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স প্রদানের শর্তের মধ্যে অন্যতম এই খাত। কাগজ-কলমে করাও হয়েছে। তবে তথ্য সংগ্রহ করলে দেখা যায় যে পাবলিক শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বহু কায়দা-কানুন করা হয়েছে যেমন_প্লেসমেন্ট অব শেয়ার ইত্যাদি। আজ যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের এই অস্থিতিশীল অবস্থা, তার অন্যতম কারণ হলো, কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি শেয়ারবাজারের নিয়ম-কানুন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এক অর্থে লুটপাট করে নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাঁড়ছেন। যাক, এসব কথা প্রসঙ্গক্রমে এসে গেল।
বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম চলছে এবং ব্যবসায় আন্ডারকস্ট করে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে পারে না। এসবের অবসানের জন্য প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন কোড অব কনডাক্ট তৈরি করেছিল। সব বীমা কম্পানি স্বাক্ষর করেছিল। কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি অতীব গুরুতর অনিয়ম রয়েছে, তা অন্য সেক্টরে পাওয়া যাবে না। তা হলো, এক ব্যক্তি অন্য একটি কম্পানিতে কর্মরত জানার পরও ছাড়পত্র না নিয়ে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর অবসানের কথাও ওই কোডে ছিল, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৎকালীন বীমা বিভাগ খাম গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করত। যদিও প্রতিটি কম্পানির হায়ার এবং ফায়ারের অধিকার থাকবে। তবুও এর একটা সীমারেখা থাকার কথা। ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুখ্য নির্বাহী। তাঁর নিয়োগ এবং প্রস্থান শালীনভাবে হওয়া উচিত। আমি দু-একজন এমডিকে এমন হেনস্তা হতে দেখেছি, যা কল্পনা করা যায় না। এ দিকটিও বীমা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।
বীমা কর্তৃপক্ষকে দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর তা করতে গেলে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। আমাদের দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না, তার মূল কারণ দায়বদ্ধতার অভাব। কোনো একজন ব্যক্তি যখন অতি উচ্চপদে আসীন হন, তখন তাঁর লক্ষ্য থাকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখা। কেননা তিনি মনে করেন, এই কাজটুকু করতে পারলে তিনি তাঁর মেয়াদ কাটিয়ে দিতে পারবেন। আর এর ফলে আরেকটা জিনিস দেখা যায়। যেহেতু তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা নেই জনগণের প্রতি, তাই তিনি তাঁর নিজের খেয়ালখুশিমতো কাজ করে যান। কখনো অ্যাডভেঞ্চার, আবার কখনো চমক দেখাতে চান।
বীমা কর্তৃপক্ষের প্রধান যদি দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করেন, তবেই এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম সার্থক হবে। এখানে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন। যদি বীমা কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্নীতি বা অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে সবাই তাঁকে সমর্থন দেবেন। এখন এ কথা বলা হবে না যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমর্থন আদায় করুন।
লেখক : সাবেক ইপিএস ও কলামিস্ট
No comments