গিটারে বাঁধা ভালোবাসা

পাশের ছবিটি সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া রণবীর কাপুরের 'রকস্টার' সিনেমার। কলকাতার সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত সিনেমাটির সমালোচনা ছাপা হলো পাঠকদের জন্যমেয়ের দুই হাতে মেহেদি। এক দিন পরই বিয়ে। ছেলেটা সামনে বসে এমনি গল্প করছে। হঠাৎ মেয়ে বলে, 'চেপে জড়িয়ে নে তো আমায়।' থতমত ছেলেটা (জর্ডন : রণবীর) বুঝতে পারে না হঠাৎ করে। তবে হীর (নার্গিস ফকরি) বলছে যখন, জড়িয়ে নেয় বুকে। মেয়ে বলে, আরো একটু জোরে।


পাঁজরে পাঁজরে লেগে যায়। ভেঙে যাবে না তো! শেষ আলিঙ্গন। এর পর থেকে মেয়েটা বইবে পাঁজরে নিঃশ্বাসের শব্দ। এমন কথাই তো ছিল। ইমতিয়াজ আলীর ছবি যখন, মানুষ সব হারাবে শুধু যন্ত্রণা ছাড়া। নিশ্ছিদ্র ডিগনিটি দিয়ে ঢেকে রাখবে নগ্ন ভালোবাসা। কপট খেলায় বারবার পিছিয়ে দেবে তুঙ্গ মুহূর্ত। নিজের কাছেও স্বীকার করবে একেবারে শেষে গিয়ে, 'হ্যাঁ, তোমাকেই ভালোবাসি।' নিদারুণভাবে সৎ এই জারণ-বিজারণের যাত্রায় নিষ্পলক তাকিয়ে থাকবে দর্শক।
এবারও সে সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পুরোটা ঘটেনি। অনুরাগী বলবে, সে এসেছিল বড় কঠিন সময়। কথাটা অবশ্য সত্যি। লড়তে হচ্ছে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, স্পিলবার্গের টিনটিন, শততম সেঞ্চুরির বঙ্ অফিস এবং নিজের দীর্ঘ ছায়ার সঙ্গেও। ইমতিয়াজ আলীর 'প্রেম'-এর কথাই বলছি। সম্প্রতি তাঁর 'রকস্টার' ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। নাম ভূমিকায় রণবীর কাপুর। এ ক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভালো, রণবীরেরও নিজের সঙ্গে আসল প্রতিযোগিতা এখন। তিনি সর্বোত্তম নিজেও জেনে গিয়েছেন, তাই পরিস্থিতি এ মুহূর্তে নিজেকে অতিক্রম করে যাওয়ার। ইমতিয়াজ আলীর চেয়ে ভালো রোমান্স কেউ বোঝে না বলিউডে, বলার পরেও বলছি, বারবার 'যব উই মেট' হয় না এটা বোধহয় পরিচালক সোচা না থা। সুতরাং চিত্রনাট্যে বড় বেশি পুনরাবৃত্তি। সরল গল্পে বুক মোচড়ানো কষ্ট, হারিয়েও বারবার ফিরে পাওয়া ইমতিয়াজের ট্রেন্ড। সেটা এই ছবিতে অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। কারণ 'রকস্টার'-এর অশান্ত জীবন পর্দায় প্রতিষ্ঠিত করার একটা বাধ্যবাধকতা ছিল পরিচালকের মনে। বিদেশি লোকেশন, স্টার হিরো, এনআরআই হিরোইন, রহমানের সুর_বিরাট কিছু করার ভাবনা বোধহয় তাঁর মাথায় ঘুরছিল। একজন প্রেমিক, না প্যাশনেট রকস্টার_কাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন পরিচালক, এটা ভাবতে গিয়ে ভারসাম্য নড়ে গিয়েছে ছবির। কিন্তু রণবীর কাপুর দুরন্ত, কী পারেন না_বলা কঠিন। শুধু তাঁর জন্যই ছবিটা দেখতে হয়। ইস্, ইমতিয়াজ যদি শুধু তীব্র প্রেমের গল্পটাই আরো একবার বলতেন। হ্যাঁ, 'লাভ আজ কাল' পরেও আরো একবার!
'রকস্টার'-এ জিম মরিসন জনার্দনের (রণবীর) আদর্শ। দিলি্লর সাধারণ জাঠ পরিবারের ছেলে সে। গিটার হাতে বড় সিঙ্গার হতে যায় ছেলে। কিন্তু দুঃখ নেই তার তেমন। জানে, ক্রিয়েটিভ জগতে বড় হতে গেলে 'দর্দ' লাগে। আইডল জিম মরিসনের মতো যন্ত্রণাদীর্ণ জীবন বা প্রকাণ্ড প্রতিভা কোনোটাই তার নেই। অন্তত তখন পর্যন্ত সে ইঙ্গিত পায়নি। অতএব কী করে? বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে, হার্টব্রেক করার মেশিন 'হীর' (নার্গিস)-এর পাণিপ্রার্থী হয়, কিছু না ভেবেই। মেয়ে তেড়ে ঝেড়ে দেয়। তারপর ছেলে ছলছল চোখে শিঙ্গাড়া খেতে বসে। এটা তো দুঃখ না! তবে দর্দ কিসে হবে, কিভাবে সে অমর গান গাইবে? জানে না।
এমন সময়ে ঝুপ করে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার হীরের সঙ্গে। দুজন মিলে দারুণ সময়?কাটাতে থাকে তারা।?নার্গিস ফকরিকে এমনিতে দেখতে ভালো কিন্তু মুখ খুললে সম্ভাবনা কমে যায়। কথা বললে স্বপ্ন ভেঙে যায়। ছবির অন্যতম মাইনাস পয়েন্ট তিনি। কী আর করা যাবে, অভিনয় তো সবার জন্য নয়। নার্গিসের ফিগার খুব সুন্দর, চুলে অনেক মায়া জড়ানো। বাকিটা রণবীর জুড়িয়ে দিয়েছেন। এরপর হীরের বিয়েতে জনার্দন ওরফে জর্ডনের কাশ্মীর যাওয়া এবং বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়। উৎখাত হয়ে কষ্ট অনুভব করতে পারে সে। দরগায় দরগায় রাত কাটায়। বান্ধবী চলে গেল বিয়ে করে প্রাগে। গান রইল জর্ডনের। ভালো গাইত সে। আচমকা ভাগ্যের চাকা ঘোরে ছেলের।
প্রথম সুযোগেই প্রাগে যেতে চায় জর্ডন। যেকোনো চুক্তি সই করতে রাজি হয়। পরের দিনই দেখা_হীর-জর্ডনের। আমি ভাবলাম, ড্রিম সিকোয়েন্স, কিন্তু না। জার্কগুলো ভালো লাগেনি। এর পর দুজনই বোঝে, প্রেম তো এখানেই। কিন্তু হীর তো অন্যায় করতে পারে না বরের সঙ্গে। ভারতীয় ফিল্মের সৎ নায়িকা সে! জর্ডনের সব রাগ গিয়ে পড়ে পৃথিবীর ওপর। বদমেজাজি, অসভ্য কিন্তু প্যাশনেট প্রেমিক। খালি খালি পুলিশ এসে জর্ডনকে ধরে নিয়ে যায়। এত রাগই বা কেন, সেটাও ঠিকঠাক ফুটে বেরোয় না ছবিতে। মরণাপন্ন প্রেমিকা যে জর্ডনের স্পর্শে বেঁচে ওঠে, সেই মানুষটাই গোটা দুনিয়াকে লাথি মারে। কিন্তু কেন? কিসের এত ঘৃণা? হ্যাঁ, মরিসনের মতোই সেও পরিবার থেকে বিতাড়িত যদিও, তবে মদ-গাঁজায় না ডুবে প্রেমে নিমজ্জিত জর্ডন। আরো ছোট হতে পারত ছবিটা। চিত্রনাট্যও স্মার্টনেস দাবি করে। রণবীর কাপুর সেঞ্চুরি করেছেন। টিম ইমতিয়াজ জেতেনি।
সিনেমাটোগ্রাফিতে অনিল মেহতা বেশ ভালো কাজ করেছেন। অনেক দিন পর এ আর রহমান দুরন্ত সুর করেছেন। ছোট একটি চরিত্রে শাম্মী কাপুর অনবদ্য।

No comments

Powered by Blogger.