'বিকল্পধারার চলচ্চিত্র বেশ ভালোই করছে'

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র 'গেরিলা' অর্জন করেছে প্রথম নেটপ্যাক পুরস্কার পাওয়ার বিরল গৌরব। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ও নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন ছবির নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুন মিজানুর রহমান।কলকাতায় 'গেরিলা' শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেল। আপনার অনুভূতি বলুন।এই অর্জন আসলে আমার একার নয়। এ অর্জন আমাদের দেশের, এ অর্জন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের।


নেটপ্যাক পুরস্কার পাওয়ার এই গৌরব এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের। এ পুরস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বব্যাপী আরো সমুন্নত করার সুযোগ এই পুরস্কারের মাধ্যমে অর্জন করেছে 'গেরিলা'। কলকাতায় 'গেরিলা' নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, তা দেখে আমি অনেক অনুপ্রাণিত। ভারতের সব প্রথম সারির পত্রিকা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এ চলচ্চিত্রের প্রশংসা চলছে এখনো। আমাদের দেশে তো কথাই নেই। সব পত্রিকাই প্রথম পৃষ্ঠায় ফলাও করে লিখেছে। গেরিলার এই অর্জনে আমি আনন্দিত, অনুপ্রাণিত।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ও নেটপ্যাক নিয়ে কিছু বলুন।
১০ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আট দিনব্যাপী ১৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। এতে ৫৩টি দেশের ১৫০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এশিয়ান সিলেক্ট, ইন্ডিয়ান সিলেক্ট ও ওয়ার্ল্ড সিলেক্ট_এই তিনটি বিভাগে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়। এতে ছিল এশিয়ান চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা বিভাগ। সেখানে গেরিলাসহ নানা দেশের ১১টি ছবি প্রতিযোগিতার মনোনয়ন পায়। এশিয়ান চলচ্চিত্রের বিকাশে এ বছরই প্রথম চালু হয়েছে নেটওয়ার্ক ফর প্রমোশন অফ এশিয়ান সিনেমা (নেটপ্যাক) পুরস্কার। এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি প্রবর্তনের প্রথম বছরই তা অর্জন করে 'গেরিলা'। সেখানে জুরি বোর্ড গেরিলাকে একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে। সেই সার্টিফিকেটে লেখা আছে, এ চলচ্চিত্রটি ১৯৭১ সালের গণহত্যার চিত্র। গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন চলচ্চিত্র আর নির্মিত হয়নি।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
উৎসবটি আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আমরা গিয়েছিলাম পাঁচজন। আমি, প্রযোজক এশা ইউসুফ, সুরকার শিমূল ইউসুফ, অভিনেত্রী ঋতু সাত্তার, ক্যামেরাম্যান সমীরণ দত্ত। আমরা দলের সবাই যেমন উৎসব উপভোগ করেছি তেমনি শিখেছিও অনেক। কলকাতার সংস্কৃতিকেন্দ্র 'নন্দন'-এ আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে আমার হাতে পুরস্কার তুলে দেন খ্যাতিমান পরিচালক সন্দ্বীপ রায়। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় মূল উৎসব। আমি বিভিন্ন দেশের ১১টি চলচ্চিত্র দেখে ফেলেছি। বেশ কয়টি চলচ্চিত্র মনে দাগও কেটেছে। সব চেয়ে বড় কথা, বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র নিয়ে সাম্প্রতিক ভাবনা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু বলুন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতায় গেরিলার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ছবিটি দেখে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনো তাঁর চোখে ভাসে। 'শোনো একটি মুজিবুরের কণ্ঠে', 'আমার সোনার বাংলা' গান দুটির প্রসঙ্গও তিনি টেনে আনেন। গান দুটি বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বহুল জনপ্রিয় গান। বাংলাদেশ প্রথম নেটপ্যাক পুরস্কার অর্জন করায় তিনি আনন্দিত।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু বলুন।
এখন অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। এ দেশে মেধাবী নির্মাতার অভাব নেই। অভাব শুধু পৃষ্ঠপোষকতার। গত বছর দেখেছি, নূরুল আলম আতিকের 'ডুবসাঁতার' এবং আবু সায়ীদের 'অপেক্ষা'। দুটিই চমৎকার ছবি। বিকল্পধারার চলচ্চিত্র তো বেশ ভালো করছেই, মূলধারার চলচ্চিত্রকেও আরো ভালো করতে হবে। মূলধারার চলচ্চিত্র যে ভালো করছে না, তা নয়। চলচ্চিত্রের মূল সংকট ডিস্ট্রিবিউশনের অভাব। প্রদর্শনযোগ্য হলের অভাব। আমাদের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিটি জেলায় সিনেপ্লেঙ্ নির্মাণ করতে হবে, সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করতে হবে, নতুন নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে হবে। আর যে ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা চলছে, দ্রুত তা স্থাপন করতে হবে। এফডিসিকে আধুনিক করতে হবে। আর প্রেক্ষাগৃহে সর্বজন প্রবেশের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে বহু দূর এগিয়ে যেতে পারবে আমাদের চলচ্চিত্র। তরুণদের নিয়ে আমি অনেক বেশি আশাবাদী, তারা নিশ্চয়ই অনেক ভালো কিছু করবে।
আপনি নতুন কী কাজ করতে যাচ্ছেন?
সম্প্রতি আমি একটি মঞ্চনাটকের কাজ শুরু করেছি। লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী গ্লোব থিয়েটারে আগামী বছর শেঙ্পিয়ারের বিশ্ব নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে ৩৭টি ভাষায় ৩৭টি দেশ শেঙ্পিয়ারের নাটক মঞ্চায়ন করবে। বাংলাদেশ থেকে ঢাকা থিয়েটার অংশগ্রহণ করবে শেঙ্পিয়ারের 'দ্য টেম্পেস্ট' নিয়ে। এখন এ নাটকটি নিয়ে কাজ করছি। একটি নতুন চলচ্চিত্রও শুরু করতে পারি। এখনো বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.