লীনার সুস্থতা আমাদের হাতেই আরিফুল সাজ্জাদ, আরিফুজ্জামান তুহিন

বাংলার জনপদে পুরাণ কথার মতো এই বিশ্বাস আজও ঘুরে ফেরে, প্রকৃতি দায় শোধ করে। মানুষ বিশ্বাস করে, সেই বিশ্বাস নিয়ে কেউ নদীকে করে প্রণাম, কেউবা লাল সালুতে বেঁধে রাখে বিশ্বাস। এসব দিনযাপনের মধ্যেই মানুষ বেঁচে থাকে তার দৈনন্দিন জীবনে। আমরাও বিশ্বাস করি, ভালোবাসার মতো অসম্ভব টানে লীনা আপা ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে।


নাহিদ জাহান লীনা। বাংলাদেশের ক্রমসম্প্রসারণশীল গণমাধ্যমের একুশ শতকের কর্মী। বেসরকারি টিভি চ্যানেল 'একুশে' দিয়ে সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়েছিল। তারপর একে একে সিএসবি (২৪ ঘণ্টার সংবাদভিত্তিক চ্যানেল। জরুরি সরকারের সময় বন্ধ হয়ে যায়), এটিএন বাংলা ও এনটিভিতে কাজ করেছেন। মানুষের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকেই সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। স্বপ্ন গণমাধ্যমে সত্যিকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। নিম্নবর্গের মানুষের সংবাদ তুলে আনা। যাকে বলে শিকড় সংবাদ। কিন্তু সেই নাহিদ জাহান লীনাই আজ সংবাদে পরিণত হয়েছেন।
আমরা তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত ক্যাম্পাসে পা রেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা, টিএসসি, কলাভবন, মধুর ক্যান্টিনের তুমুল আড্ডা সবকিছুই আমাদের মুগ্ধ করে। কেমন করে চলে যায় ঢেউয়ের মতো একেকটি মিছিল। মিছিলের মানুষগুলোকে যেন একেকটা আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র মনে হয়। সেই স্বপ্নছোঁয়া দিনগুলোতে শুধু মিছিলের একজন নয় লীনা আপাকে দেখেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মানুষ না খেয়ে আছে কোনো উপদ্রুত অঞ্চলে অথবা শীতে মানুষ মারা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে কোথাও কিংবা মঙ্গায় উত্তরের অনাহারী জনপদে হাহাকার উঠেছে; লীনার যেন ঘুম নেই। মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য তিনি বন্ধুদের নিয়ে পথে নেমেছেন। দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার অর্থ তুলতে হবে, লীনা পল্গ্যাকার্ড নিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘুরেছেন। হয়তো সংখ্যায় অল্প, কিন্তু সেসব সূর্য সারথিরাই ছিল ক্যাম্পাসের সাত রঙের বাহারি ফুল। বাকি সব ম্যাটমেটে সাদা কালো। আজ সেই লীনাই লড়াই করছেন ক্যান্সারের সঙ্গে।
কোথাও নারী নির্যাতন হয়েছে, নির্যাতিত নারীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আজ যখন লীনা আপার শরীরে ভয়ানক ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তখন যেন সেই ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসের আলো-বাতাস, আমাদের ফেলে আসা দিনবদলের স্বপ্নের মতো সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে। প্রকৃতি কি এই মানুষটিকে বাঁধ দিতে পারত না। কার ওপর যেন অভিমান হয়।
লীনার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে ২০০৯ সালে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ায় তার ডান স্তন অপারেশন করা হয়। কেমোথেরাপি চলে অনেক দিন। প্রায় সুস্থ হয়ে যখন স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরেছিলেন লীনা, ঠিক তখনই আবার ডান পায়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে, নিতে হয় রেডিওথেরাপি। এরপর লীনা ভারত গিয়েছিলেন চেকআপের জন্য। রিপোর্টগুলো সব স্বাভাবিক ছিল তখন। কিন্তু এই তো মাস দুয়েক হলো হঠাৎ শরীর খুব খারাপ করল। টেস্টে ধরা পড়ল ক্যান্সার ফিরে এসেছে। লীনার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু সাংবাদিকরা পাশে দাঁড়ালেন। তাৎক্ষণিকভাবে যেটুকু জোগাড় করা গেল তাই নিয়ে লীনা ভারতে গেলেন। ভারতের অ্যাপোলো ক্যান্সার হাসপাতালে টানা ত্রিশ দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি দেশে এসেছেন লীনা। তবে চিকিৎসা শেষ করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে, নিতে হবে মোট ৯টি হারসেপটিন ও আরও কেমো। একটি হারসেপটিন কেমো দিতে খরচ হবে এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা। পুরো চিকিৎসার খরচটি এবারও বেশ ব্যয়বহুল। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে লীনার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই ব্যয়ভার তার পরিবার ও বন্ধুদের পক্ষে মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। লীনার বন্ধুরা ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে লীনার অর্থ সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন সমাজের সচ্ছল মানুষের কাছে।
লীনার ছোট্ট একটি মেয়ে আছে। যেন আরেক ফালি রোদ্দুর। সে জানে না, তার মায়ের বুকে বাসা বেঁধেছে ঘাতক ক্যান্সার। মেয়েটিকে বুকে নিয়ে লীনা এখনও রাজকুমারের গল্প শোনান। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানুষ অল্প অল্প করে যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে লীনা হয়তো তার ছোট্ট মেয়ের পাশে আবার ফিরে আসতে পারবেন।
শত অনিশ্চয়তার মধ্যে শুধু বেঁচে থাকাটাই অনেক আনন্দের। যে মানুষটি একদিন আর্তমানবতার সেবায় পাশে দাঁড়িয়ে গেয়েছেন জীবনের গান, যে মানুষটি ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চি মাটির প্রতি থেকে সর্বদা সজাগ প্রহরীর মতো, আজ তিনিই মানুষের পানে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রকৃতি হয়তো প্রতিদান দেয়। আর মানুষ সেই প্রতিদানের নিয়ামক হয়ে আসে।
আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লীনার হাসি থাকুক অটুট। ঘাতক ব্যাধিকে জয় করে লীনা ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।
লীনাকে সাহায্য পাঠাবার হিসাব নম্বর :নাহিদ জাহান
হিসাব নং- ১৮-৩১১০৪৪-০১
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
যোগাযোগ :ভধপবনড়ড়শ.পড়স/ বিৎ৪ষরহধ
মারুফ রেজা বায়রন:০১৭১২১৪২৯৯৫
এহতেশাম উদ্দিন: ০১৭৩৬১০৪১৮৪

লেখকগণ দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত
 

No comments

Powered by Blogger.