বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প-কাজের গতি কবে বাড়বে?
বরাবরের রীতি অনুসারে অর্থবছরের শুরুতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের গতি স্লথ থাকে। স্লথ বা শম্বুকগতি বললেও চলমানতার কিছু ইঙ্গিত থাকে। কিন্তু এবার অর্থবছরের ৪ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অনেক প্রকল্প স্থবির অবস্থায় আছে। বিশেষত বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ১৩টি প্রকল্প এ সময়ে একটি টাকাও খরচ করতে পারেনি বলে খবর মিলেছে। বিদ্যুৎ সমস্যায় নাকাল মানুষ এ সংবাদে স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বেন।
ক্ষমতা আরোহণের আগে থেকেই ক্ষমতাসীন দল বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। সমস্যা নিরসনে কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সাগরে সে পদক্ষেপ শিশির বিন্দুর মতো হারিয়ে গেছে। এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় আশান্বিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। কেন ঘটেনি তা প্রকল্পগুলোর দশা দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। অর্থবছরের শুরুতে যখন ঢিমে-তেতালা অবস্থা থাকে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু অর্থবছরের শেষপাদে এসে তারা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। দ্রুত বরাদ্দ শেষ করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। আজগুবি নানা খাতে টাকা খরচ হতে থাকে। আর অপরিকল্পিত উপায়ে বরাদ্দ খরচ করতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা সুযোগও মেলে। ফলে শুরু থেকে যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনা অনুসারে বরাদ্দ ব্যয়ের দিকে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ থাকে কম। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বা এডিপির সুফল মেলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটি ফি বছরের ঘটনা হলেও এবার চোখে পড়ার মতো কিছু পরিসংখ্যান মিলেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই বিদেশি সহায়তা ব্যবহারের হার সবচেয়ে কম। এর পেছনের কারণটি বোধগম্য। বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে প্রতিশ্রুত বিদেশি সহায়তার প্রবাহ কম। বিদেশি সহায়তা আহরণ ও ব্যবহার করতে পারছে না মন্ত্রণালয়গুলো। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে টাকার জোগান দিতে হচ্ছে সরকারকে। বলাবাহুল্য, যে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে তা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুর্মূল্য। দেশীয় উৎস থেকে বরাদ্দ আছে, প্রকল্প আছে, পরিকল্পনা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের জরুরি সমস্যা নিরসনে এ প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তাও আছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রকল্পই স্থবির। নির্ধারিত সময়ে একটি প্রকল্পও আলোর মুখ দেখছে না। অত্যন্ত জরুরি হলেও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো কবে শেষ হবে তা কেউই বলতে পারবে না। এই দুর্দশার পেছনে অদক্ষতা যেমন আছে তেমনি আছে কাজে অনীহা, অপেশাদারিত্ব, কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি অভাবসহ নানা কারণ। আর এগুলো দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে হয় বাধাগ্রস্ত নয়তো স্থবির করে রেখেছে। ১৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের বেহাল দশা এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হিসেবে সামনে আসতে পারে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই স্থবিরতা শুধু বাধাই নয়, দীর্ঘমেয়াদি হতাশারও কারণ। তবে চার মাস যাওয়ার পর উচ্চতর কর্তৃপক্ষ স্থবিরতার কারণ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে। এটি আশার খবর। আমরা মনে করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো শুধু কারণ খুঁজেই ক্ষান্ত হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের যথাযথ পথগুলোও অনুসন্ধান করবে। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন পরিকল্পনা সরকারের মেয়াদকালে বাস্তবায়ন করতে হলে কঠোর মনোভাব নিয়েই এগোতে হবে। ব্যতিক্রম ঘটলে সবার জন্যই তা হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
No comments