নামেই নবাব by জামান সরদার
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের 'নবাব' হওয়ার খবর পড়ে যাদের মনে 'বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি' সিরাজউদ্দৌলার কথা মনে পড়ে, তারা এখনও মুঘল যুগে পড়ে আছেন। যদি কোচবিহারের রাজার কথা মনে পড়ে, তাহলে ব্রিটিশ আমল। আর ঢাকার নবাব হলে, পাকিস্তান আমল নিশ্চিত। বর্তমানে দাঁড়িয়ে দেখলে, সাইফ আলী খানের নবাবিপ্রাপ্তি নিছক আনুষ্ঠানিকতা। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁও জেলায় সত্তর দশকের গোড়ায় বিলুপ্ত জমিদার
পরিবারকে ঘিরে এখনও যেসব বেসরকারি আনুষ্ঠানিকতা জীবন্ত রয়েছে, তারই প্রধান পর্ব। মুম্বাইয়ের ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে অবকাশযাপনে গিয়ে প্রতিবেশীদের সালাম নেওয়া ছাড়া বাস্তবে এই নবাবের করার কিছু নেই।
বস্তুত ব্রিটিশ শাসনামলে গোটা ভারতে পাঁচশ'র বেশি যে দেশীয় রাজ্য ছিল, সেগুলো সব ধীরে ধীরে ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছে। স্বাধীন-সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে নেপাল ও ভুটান। দেশ বিভাগের পর সাবেক রাজা ও তার উত্তরসূরিদের জন্য বিশেষ সরকারি ভাতা 'প্রিভি পার্স' চালু থাকলেও ১৯৭১ সালে ভারত ও ১৯৭২ সালে পাকিস্তান সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
ভারতে অবশ্য আরও আগে থেকে রাজকীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে চেষ্টা চলেছিল; এত রক্ত আর প্রাণ দিয়ে স্বাধীন করা দেশে বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী থাকবে কেন? কিন্তু হাজার বছর ধরে যে প্রথা এ দেশে চালু ছিল, মাত্র কয়েক দশক পুরনো প্রজাতান্ত্রিক সরকার যে তা সহজে উচ্ছেদ করতে পারবে না বলাই বাহুল্য। লৌহমানবি খ্যাত ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেন। ১৯৬৯ সালে লোকসভায় প্রিভি পার্স বিলুপ্তি বিল আনা হয় এবং মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। ১৯৭১ সালে তা আর রক্ষা করা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদে এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, সরকারের অনাবশ্যক ব্যয় কমানো এবং সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই তিনি বিলটি সমর্থন করছেন। কথিত আছে, জয়পুরের মহারানী ও কোচবিহার রাজ্যের রাজকুমারী গায়িত্রী দেবীর সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতই ইন্দিরাকে মরিয়া করে তোলে। গায়িত্রী কেবল পিতৃ ও স্বামী গরবে গরবিনী ছিলেন না; নিজেও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, দারুণ পোলো খেলোয়াড়, কার রেসার এবং অবশ্যই অনিন্দ্যসুন্দরী। ওই সময় তিনি ভোগ ম্যাগাজিনের বিচারে বিশ্বের ১০ সেরা সুন্দরীর অন্যতম নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন কংগ্রেসবিরোধী। জয়পুর লোকসভা আসনে তিনি টানা তিনবার_ ১৯৬২, '৬৭ ও '৭১ কংগ্রেস প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দেন।
১৯৬৯ সালে যখন দেশীয় রাজা ও নবাবদের বিশেষ ভাতা এবং সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়, এর সুবিধাভোগীরা পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক রাজা ও নওয়াবই গায়িত্রী দেবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচনে দাঁড়ান। কিন্তু ভোগবিলাস আর হুকুমে অভ্যস্ত রাজারা ভোটের বাজারে নেহাত অজনপ্রিয় বিবেচিত হন। সাইফ আলী খানের পিতা নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি যদিও ক্রিকেটে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন, গুরগাঁও থেকে লোকসভা প্রার্থী হিসেবে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পান।
নির্বাচনের শোচনীয় পরাজয় ও সংবিধান সংশোধনে সব ঠাটবাট হারিয়ে দেশীয় নবাব ও রাজারা কেবল নামেই নবাব থাকেন; কাজে নয়। ইউরোপের রাজপরিবারগুলোর মতো জনহিতকর কাজেও তাদের খুব একটা আগ্রহী দেখা যায়নি। দেশীয় রাজাদের দিয়ে কীভাবে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিরোধ মেটানো যেতে পারে, সে নিয়ে সাম্প্রতিককালে আফ্রিকায় চিন্তা-ভাবনা চলছে। ভারতের নবাব বাহাদুররা সে ব্যাপারেও নৈবচ নৈবচ।
বস্তুত ব্রিটিশ শাসনামলে গোটা ভারতে পাঁচশ'র বেশি যে দেশীয় রাজ্য ছিল, সেগুলো সব ধীরে ধীরে ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়েছে। স্বাধীন-সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে নেপাল ও ভুটান। দেশ বিভাগের পর সাবেক রাজা ও তার উত্তরসূরিদের জন্য বিশেষ সরকারি ভাতা 'প্রিভি পার্স' চালু থাকলেও ১৯৭১ সালে ভারত ও ১৯৭২ সালে পাকিস্তান সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
ভারতে অবশ্য আরও আগে থেকে রাজকীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে চেষ্টা চলেছিল; এত রক্ত আর প্রাণ দিয়ে স্বাধীন করা দেশে বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী থাকবে কেন? কিন্তু হাজার বছর ধরে যে প্রথা এ দেশে চালু ছিল, মাত্র কয়েক দশক পুরনো প্রজাতান্ত্রিক সরকার যে তা সহজে উচ্ছেদ করতে পারবে না বলাই বাহুল্য। লৌহমানবি খ্যাত ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেন। ১৯৬৯ সালে লোকসভায় প্রিভি পার্স বিলুপ্তি বিল আনা হয় এবং মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। ১৯৭১ সালে তা আর রক্ষা করা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সংসদে এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, সরকারের অনাবশ্যক ব্যয় কমানো এবং সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই তিনি বিলটি সমর্থন করছেন। কথিত আছে, জয়পুরের মহারানী ও কোচবিহার রাজ্যের রাজকুমারী গায়িত্রী দেবীর সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতই ইন্দিরাকে মরিয়া করে তোলে। গায়িত্রী কেবল পিতৃ ও স্বামী গরবে গরবিনী ছিলেন না; নিজেও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, দারুণ পোলো খেলোয়াড়, কার রেসার এবং অবশ্যই অনিন্দ্যসুন্দরী। ওই সময় তিনি ভোগ ম্যাগাজিনের বিচারে বিশ্বের ১০ সেরা সুন্দরীর অন্যতম নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন কংগ্রেসবিরোধী। জয়পুর লোকসভা আসনে তিনি টানা তিনবার_ ১৯৬২, '৬৭ ও '৭১ কংগ্রেস প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে দেন।
১৯৬৯ সালে যখন দেশীয় রাজা ও নবাবদের বিশেষ ভাতা এবং সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়, এর সুবিধাভোগীরা পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক রাজা ও নওয়াবই গায়িত্রী দেবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচনে দাঁড়ান। কিন্তু ভোগবিলাস আর হুকুমে অভ্যস্ত রাজারা ভোটের বাজারে নেহাত অজনপ্রিয় বিবেচিত হন। সাইফ আলী খানের পিতা নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি যদিও ক্রিকেটে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন, গুরগাঁও থেকে লোকসভা প্রার্থী হিসেবে মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পান।
নির্বাচনের শোচনীয় পরাজয় ও সংবিধান সংশোধনে সব ঠাটবাট হারিয়ে দেশীয় নবাব ও রাজারা কেবল নামেই নবাব থাকেন; কাজে নয়। ইউরোপের রাজপরিবারগুলোর মতো জনহিতকর কাজেও তাদের খুব একটা আগ্রহী দেখা যায়নি। দেশীয় রাজাদের দিয়ে কীভাবে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিরোধ মেটানো যেতে পারে, সে নিয়ে সাম্প্রতিককালে আফ্রিকায় চিন্তা-ভাবনা চলছে। ভারতের নবাব বাহাদুররা সে ব্যাপারেও নৈবচ নৈবচ।
No comments