বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন-গুণসম্পন্ন পণ্য উত্পাদন করে নতুন বাজার সৃষ্টির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুণসম্পন্ন পণ্য উত্পাদন এবং পণ্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের মতো যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা আপনাদের পাশে থাকব।’ তিনি গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা


বলেন। খবর বাসস ও ইউএনবির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ বি এম আবুল কাশেম, বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশিষ বোস বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি শিল্প-বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এতে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাত সহজ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মন্দা মোকাবিলার কৌশল হিসেবে অনেক দেশ সংরক্ষণমূলক নীতি গ্রহণ করেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির পরিপন্থী। তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মুখপাত্র হিসেবে আমরা ‘স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট’-এর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই। আমরা শুল্ক ও অশুল্ক বাধামুক্ত বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থা দেখতে চাই।’
আওয়ামী লীগ সরকারকে বাণিজ্যবান্ধব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসারে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারের ক্ষেত্রে আমরা কখনো কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিনি; বরং আমরা চারদলীয় জোট সরকার ও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সৃষ্ট আতঙ্ক দূরীভূত করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছি।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, চারদলীয় জোট সরকার ও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অত্যাচার, নির্যাতন ও বাধার কারণে অনেকে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশে গত তিন বছরে ২৬৬ কোটি মার্কিন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার সফলভাবে বিদ্যুত্ সমস্যা মোকাবিলা করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার জাতীয় গ্রিডে দুই হাজার ৯০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুত্ যোগ করেছে।’
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিতা কেটে শেরেবাংলা নগরে মাসব্যাপী ১৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নসহ মেলায় স্থাপিত বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে দেখেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ১০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে: প্রধানমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে জেলা পরিষদের সদ্য নিযুক্ত ৬১ জন প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে এটি তাঁর প্রথম বৈঠক।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহীত কর্মসূচির সুফল যাতে তারা পেতে পারে, এ জন্য স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে তাঁদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ছয়টি বিভাগের সাতজন প্রশাসক বক্তব্য দেন। তাঁরা হলেন, ঢাকা জেলার বেগম হাসিনা দৌলা, রাজশাহীর মাহবুব জামান, চট্টগ্রামের আবদুস সালাম, সিলেটের আবদুস জলিল সুফিয়ান, বরিশালের মোখলেসুর রহমান, রংপুরের রেজিনা রাজ্জাক ও খুলনার শেখ হারুন অর রশীদ।

No comments

Powered by Blogger.