দোয়েল ল্যাপটপ-পাখা মেলুক প্রযুক্তির আকাশে
বাংলাদেশে দোয়েল খুব প্রিয় একটি নাম। এ দেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। প্রিয় এ পাখির নামেই এবার বাংলাদেশ শুরু করল নবযাত্রা। সে যাত্রা অবশ্য প্রকৃতির দিকে নয়, প্রযুক্তির দিকে। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় বাংলাদেশ নবযাত্রার সূচনা করল দোয়েল ল্যাপটপের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশীয় সংস্থায় উৎপাদিত এ ল্যাপটপের বিতরণ ও বাজারজাতকরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত ডিজিটাল
বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও নেতাকর্মীদের মুখে বহুবার বহুভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উচ্চারিত হয়েছে। স্লোগানটি সাধারণ্যে জনপ্রিয় ও গৃহীতও হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ কতটা নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। গ্রাম-মফস্বল পর্যন্ত সহজলভ্য ও দ্রুততর তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার জন্য আইআইটি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের মূল্য কমানো পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা ও উদ্যোগও এসেছে। কিন্তু সেগুলোকে পর্যাপ্ত বলে অনেকেই মনে করেন না। এবার দোয়েল উদ্বোধনের মাধ্যমে একটি সত্যিকার পদক্ষেপ গৃহীত হলো বলেই মনে করছেন সকলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতে বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য কম দামের ল্যাপটপ বাজারজাত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন ল্যাপটপের বিপুল চাহিদা আছে। ফলে টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) ল্যাপটপ তৈরির ঘোষণায় মানুষ স্বভাবতই আনন্দিত হয়েছে। সবাই আশা করেছে, ল্যাপটপটি সফলভাবে বাজারজাত হোক, সেবার দিক থেকে এগিয়ে থাকুক। এর সঙ্গে যেমন দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের প্রশ্ন জড়িত তেমনি জড়িত টেশিসের নবযাত্রার প্রশ্নও। টেশিস দীর্ঘদিন ধরেই রুগ্ণ সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল। ল্যাপটপ প্রকল্প সফল হলে সংস্থাটি নতুনভাবে দাঁড়াতে পারবে, এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও সফল হতে পারবে। তবে এ জন্য টেশিসকেই সচেতন হতে হবে। মানসম্মত ল্যাপটপ তৈরির পাশাপাশি বিতরণ ও বাজারজাতকরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বিক্রয়োত্তর সেবা দানের ব্যাপারে তাদের আন্তরিক হতে হবে। ক্রেতাদের পরামর্শ, সমালোচনা শুনে নিজেদের উন্নততর করে তুলতে হবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দ্রুততম সময়ে বাজারে ল্যাপটপ আনার চেষ্টা করতে হবে। টেশিস যে চারটি মডেল বাজারে আনতে যাচ্ছে সেগুলোর মূল্য ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত। ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাপটপটিকেই পূর্ণাঙ্গ ল্যাপটপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি তা-ই হয়, তবে বাজারের সাধারণ ল্যাপটপের থেকে দোয়েলের দামের ফারাক খুব বেশি হবে না। এ দেশের ক্রেতাগোষ্ঠীর সক্ষমতা বিচার করে ১০ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাপটপটিই বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারত। কিন্তু এ ল্যাপটপটিতে বাংলা লেখার সুবিধা নেই, ওয়ারেন্টিও নেই। ফলে এটি নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হবে মনে হয় না। ভবিষ্যতে এ ল্যাপটপটির দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া হলে তা বাজারে সত্যিকার ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দোয়েলে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ওপেন সোর্স টুল ব্যবহার করা হয়েছে। ওপেন সোর্সের ব্যবহার প্রশংসনীয় হলেও সাধারণ ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজেই অভ্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সদিচ্ছার কথা জানিয়ে স্বল্পমূল্যে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ নেওয়া যেত। ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা মোতাবেক নতুন ভাবনার সুযোগ থাকছে। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ মনে রেখে বলতে হয়, দোয়েল দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে পেঁৗছে যাক। দেশের প্রোডাক্ট হিসেবে সমাদৃত হোক এটি। দোয়েল পাখা মেলুক প্রযুক্তির আকাশে। সবার সঙ্গে আমরা দোয়েলকে স্বাগত জানাই।
No comments